স্টকহোম, ১১ জুন : ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার শ্রী জ্ঞানেশ কুমার গত সন্ধ্যায় সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নির্বাচনী অখণ্ডতা সম্মেলনে মূল বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, ব্যাপকতা ও বৈচিত্র্যের উপর জোর দেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পরিচালনা সংস্থাগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পুনরায় তুলে ধরেন। সম্মেলনে প্রায় ৫০টি দেশের ইএমবি প্রতিনিধিদের নিয়ে ১০০-রও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনের আয়োজক ছিল আন্তর্জাতিক আইডিইএ ।
শ্রী কুমার জানান, ভারতের সংসদীয় নির্বাচন পরিচালনার সময় রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সাধারণ, পুলিশ ও ব্যয় সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যম একটি যুগপৎ নিরীক্ষকের ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মীবাহিনী —যার সংখ্যা প্রায় দুই কোটির বেশি, যাতে থাকে নির্বাচনী কর্মী, নিরাপত্তা বাহিনী, পর্যবেক্ষক এবং রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা— বিশ্বের বৃহত্তম সংগঠনে পরিণত হয়, যা অনেক দেশের সরকার বা বৃহৎ কর্পোরেশনের জনবলকেও ছাড়িয়ে যায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভারতের নির্বাচনী বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরেন। ১৯৫১-৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যেখানে মাত্র ১৭.৩ কোটি ভোটার ছিলেন, সেখানে ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৭.৯ কোটি। প্রথমদিকে প্রায় ২ লক্ষ ভোটকেন্দ্র থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ১০.৫ লক্ষের বেশি ভোটকেন্দ্র। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ৭৪৩টি রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে ৬টি জাতীয় দল, ৬৭টি রাজ্য দল এবং বাকি অন্যান্য নিবন্ধিত দল। সারা দেশে মোট ২০,২৭১ জন প্রার্থী ৬.২ মিলিয়ন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন -এর মাধ্যমে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তিনি ভারতের নির্বাচনী তালিকা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ১৯৬০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এবং তালিকা সংশোধনের সময় নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলিকে তালিকার অনুলিপি দেওয়া হয় এবং দাবি, আপত্তি ও আপিল গ্রহণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি বিশ্বে সবচেয়ে কঠোর ও স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি বছরের পর বছর ধরে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করে।
ভারতের অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি জানান, প্রথমবারের ভোটার, ৮৫ বছরের ঊর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার এবং দুর্গম অঞ্চলের ভোটারদের জন্য সমান মনোযোগ ও সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করে নির্বাচন কমিশন। হিমাচল প্রদেশের তাশিগাং-এর মতো উচ্চতম স্থানে অথবা একক ভোটার বিশিষ্ট বুথে নির্বাচন পরিচালনা করার মধ্যে ভারতের সাংবিধানিক অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়।
সম্মেলনের ফাঁকে শ্রী জ্ঞানেশ কুমার একাধিক দেশের নির্বাচন কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এর মধ্যে ছিল মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, মলডোভা, লিথুয়ানিয়া, মরিশাস, জার্মানি, ক্রোয়েশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাজ্য। এই বৈঠকগুলিতে ভোটার অংশগ্রহণ, নির্বাচনী প্রযুক্তি, প্রবাসী ভোটদান এবং প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।
এই সম্মেলনে ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব বিশ্বমঞ্চে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা ও শ্রদ্ধার আরও একবার প্রমাণ দিল, যা গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের ঐকান্তিক অঙ্গীকারের দৃষ্টান্তস্বরূপ।

