আন্তর্জাতিক দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো সম্মেলন ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ: দুর্যোগ মোকাবেলায় ৫টি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ

নয়াদিল্লি/প্যারিস, ৭ জুন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো সম্মেলন ২০২৫-এ ভাষণ দেন। এই প্রথমবার ইউরোপে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ফরাসি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আসন্ন জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনের জন্যও শুভেচ্ছা জানান।

সম্মেলনের থিম ‘সামুদ্রিক উপকূল অঞ্চলের জন্য সহনশীল ভবিষ্যৎ গঠন’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে।” তিনি সাম্প্রতিক সাইক্লোন রেমাল (ভারত-বাংলাদেশ), হারিকেন বেরিল (ক্যারিবিয়ান), টাইফুন ইয়াগি (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া), হারিকেন হেলিন (যুক্তরাষ্ট্র), টাইফুন উসাগি (ফিলিপাইন), ও সাইক্লোন চিডো (আফ্রিকা)–এর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এসব দুর্যোগ প্রাণ ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি করেছে এবং এটি দুর্যোগ সহনশীল পরিকাঠামোর গুরুত্ব নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোন ও ২০০৪ সালের সুনামির কথা এবং বলেন, “ভারত এইসব দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং একটি সুনামি সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে ২৯টি দেশকে সুবিধা দিচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে “বড় মহাসাগরীয় দেশ” হিসেবে দেখে এবং তাদের দুর্বলতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, CDRI-এর অধীনে ২৫টি ছোট দ্বীপ দেশগুলিতে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, জলের নিরাপত্তা, জ্বালানি ব্যবস্থা এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা নির্মাণে ভারত কাজ করে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণে দুর্যোগ সহনশীলতার ক্ষেত্রে পাঁচটি বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রথমেই উল্লেখ করেন, উচ্চশিক্ষায় দুর্যোগ মোকাবেলার পাঠ্যক্রম, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, যাতে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সুদক্ষ ও সচেতন কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা যায়। দ্বিতীয়ত, তিনি একটি বৈশ্বিক ডিজিটাল রিপোজিটরি তৈরির ওপর জোর দেন, যেখানে দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠনের সেরা অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা সন্নিবেশিত থাকবে এবং যা গোটা বিশ্বের কাজে আসবে। তৃতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের সুযোগ করে দিতে উদ্ভাবনী ও বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা জরুরি। চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে “বড় মহাসাগরীয় দেশ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এদের ওপর অতিরিক্ত ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, ফলে তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা ও মনোযোগ দরকার। এই অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ প্রতিরোধে একটি দৃঢ় ও সংহত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও সমন্বয় ব্যবস্থার জোরদারকরণ, যাতে শেষ প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত তথ্য পৌঁছানো যায় ও সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

তিনি বলেন, “উন্নয়নের প্রতিটি স্তম্ভ এমনভাবে নির্মিত হওয়া উচিত, যা সময় ও দুর্যোগের পরীক্ষায় টিকে থাকে।” প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণ শেষ করেন বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে, যাতে আমরা একত্রে একটি শক্তিশালী ও দুর্যোগ-সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।