নয়াদিল্লি, ৫ জুন: দেশে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণের গতি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৫৬৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশে মোট সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৮৬৬ জনে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের বৃহস্পতিবার সকালের বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে আরও সাতজনের। এই সাতজনের মধ্যে মহারাষ্ট্রে তিনজন, দিল্লি ও কর্ণাটকে দু’জন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতদের মধ্যে ছয়জনই প্রবীণ নাগরিক ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নিউমোনিয়ার মতো সহ-অসুস্থতা ছিল। এছাড়া মারা যাওয়া এক শিশু মাত্র পাঁচ মাসের, যার আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ছিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, কেরালা এখনও সর্বাধিক সক্রিয় করোনা রোগীর রাজ্য, যেখানে ১৪৮৭ জন সংক্রমিত। এরপরেই আছে দিল্লি (৫৬২), মহারাষ্ট্র (৫২৬), পশ্চিমবঙ্গ(৫৩৮), গুজরাট (৫০৮), কর্ণাটক (৪৩৬), তামিলনাড়ু (২১৩), উত্তর প্রদেশ (১৯৮), রাজস্থান (১০৩), হরিয়ানা (৬৩), অন্ধ্র প্রদেশ (৫০), বিহার (৩১), মধ্য প্রদেশ (৩০), ছত্তিসগড় (১৯), ওড়িশা (১৮), পুদুচেরি (১৭), পাঞ্জাব(১৬), সিকিম (৯), গোয়া (৮), অসম (৮), ঝাড়খন্ড (৮), উত্তরাখণ্ড (৬), জম্মু ও কাশ্মীর (৫), তেলেঙ্গানা (৩), চন্ডিগড়(১), হিমাচল প্রদেশ এবং মিজোরাম (১)। তবে, এখনও পর্যন্ত সিকিম, লাদাখ, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, দাদরা নগর হাভেলি ও দমন এবং দিও, আন্দামান-নিকোবর, লাক্ষাদ্বীপ এবং অরুণাচল প্রদেশ-এ একজনও করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেনি।
স্বাস্থ্যের সাম্প্রতিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে ২ ও ৩ জুন স্বাস্থ্য দপ্তরের ডিজিএইচএস ডা. সুনীতা শর্মার নেতৃত্বে একাধিক কারিগরি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেল, ইএমআর সেল, এনসিডিসি, আইসিএমআর, আইডিএসপি, দিল্লির কেন্দ্রীয় হাসপাতাল এবং রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে অধিকাংশই হালকা উপসর্গযুক্ত এবং তাঁরা গৃহবন্দী থেকেই চিকিৎসাধীন। ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৪ জনের করোনা-সম্পর্কিত মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই পূর্ব-বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল।
সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন, আইসোলেশন বেড, ভেন্টিলেটর এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে। ২ জুন দেশজুড়ে একটি মক ড্রিলের মাধ্যমে অক্সিজেন পরিকাঠামোর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পিএসএ প্ল্যান্ট, এলএমও ট্যাঙ্ক এবং এমজিপিএস লাইন। পরবর্তী স্তরের প্রস্তুতিমূলক মহড়া ৪ ও ৫ জুন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আইডিএসপি-র অধীনে জেলা ও রাজ্য স্তরের নজরদারি ইউনিটগুলি নিয়মিতভাবে আইএলআই (ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা) ও সারি (অতি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, সব হাসপাতালে ভর্তি সারি রোগী এবং ৫ শতাংশ আইএলআই রোগীর নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতিবাচক স্যাম্পলগুলি জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য আইসিএমআরের ভিআরডিএল নেটওয়ার্কে পাঠানো হচ্ছে।
সাধারণ মানুষকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে—হাত ধোয়ার অভ্যাস, সঠিকভাবে কাশির শিষ্টাচার মানা, অসুস্থ অবস্থায় ভিড় এড়িয়ে চলা এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য। সরকারি তথ্য জানার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট এবং পিআইবি-র অফিসিয়াল আপডেট অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সক্রিয় পদক্ষেপ ও স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখা হবে।

