হরিদ্বার, ৪ জুন : উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার জেলার সারাই এলাকায় সরকারি জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে জেলা শাসক (ডিএম) কর্মেন্দ্র সিংহ, মহকুমা শাসক (এসডিএম) অজয়বীর সিংহ, প্রাক্তন পুর কমিশনার (আইএএস) বরুণ চৌধুরী-সহ মোট ১২ জন সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অভিযান’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তদন্তে উঠে এসেছে, সরকারি একখণ্ড জমি যার প্রকৃত মূল্য ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা, সেটি হরিদ্বার পুর নিগম কিনেছে ৫৪ কোটি টাকায়। এই জমি আসলে সরকারি মালিকানাধীন, যা আবার অন্য একটি সরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি দেখানো হয়েছে—ফলে সরকারি কোষাগার থেকে বেআইনিভাবে ৩৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। জমির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য সরকারি নিয়ম-নীতিও মানা হয়নি; বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার, সঠিক মূল্যায়ন—কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি।
তদন্তে আরও জানা গেছে, কৃষিজমিকে বেআইনিভাবে বাণিজ্যিক জমিতে রূপান্তর করে দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে।
মূল অভিযোগে জানা গেছে, প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই জমি কেনা হয়েছে, জমির প্রকৃত মূল্যায়ন এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না, সরকারি বিধি ও নিয়মাবলি লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং এই চুক্তিতে কিছু ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লাভবান হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ধামি ইতিমধ্যেই ভিজিল্যান্স বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট জমির বিক্রয় চুক্তি বাতিল ও অর্থ পুনরুদ্ধারের আদেশ জারি করেছেন। একইসঙ্গে, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
বরখাস্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, হরিদ্বার জেলা শাসক কর্মেন্দ্র সিংহ (আইএএস), প্রাক্তন পুর বরুণ চৌধুরী (আইএএস), মহকুমা শাসক অজয়বীর সিংহ (পিসিএস), সিনিয়র ফাইন্যান্স অফিসার নিকিতা বিশ্ট, আইন কর্মকর্তা রাজেশ কুমার, তহসিল প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামালদাস, সিনিয়র পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিকি, সহকারী পুর কমিশনার রবীন্দ্র কুমার দয়াল, নির্বাহী প্রকৌশলী আনন্দ সিং মিশ্রবান, কর ও রাজস্ব সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট লক্ষ্মীকান্ত ভট্ট, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার দিনেশ চন্দ্র কাণ্ডপাল এবং সম্পত্তি রিপোর্ট করণিক ভেদওয়াল (তাঁর চাকরির মেয়াদ বাতিল)।
মুখ্যমন্ত্রী ধামি জানিয়েছেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। প্রশাসনে কেউই নিয়ম ভাঙলে বা জনস্বার্থ উপেক্ষা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’। এই ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে সরকার।
হরিদ্বার ল্যান্ড স্ক্যাম প্রশাসনিক দুর্নীতির এক নতুন ও জটিল দিক সামনে এনেছে। সাধারণত সরকারি জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষ মূল্যায়ন, এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক হলেও, এই কেলেঙ্কারিতে দেখা গেছে, সরকারি জমি অন্য একটি সরকারি সংস্থার কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি দেখানো হয়েছে, ফলে সরকারি কোষাগার থেকে অযথা বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে গেছে। জমির প্রকৃত মূল্যায়ন ও দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা সরকারি সম্পদের অপব্যবহার এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়। জমির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, অর্থাৎ ‘নন-এক্সিস্টেন্ট’ বা কাগজে-কলমে থাকা সরকারি সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরাসরি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, যা দুর্নীতির চক্রকে আরও গভীর ও সংগঠিত করে তুলেছে।
এই দুর্নীতি দেখাচ্ছে, শুধুমাত্র নিচু স্তরের কর্মচারী নয়, বরং শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সরকারি সম্পদ লুটপাটের জটিল চক্রে জড়িয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে, সরকারি সংস্থার মধ্যেই একে অপরের সঙ্গে ‘ভুয়া’ লেনদেন দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাতের পথ খুলে গেছে—এটি প্রশাসনিক দুর্নীতির এক নতুন ও অস্বাভাবিক দিক। সবশেষে, এই ঘটনা সরকারি সম্পদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, এবং প্রশাসনিক স্তরে দুর্নীতির নতুন কৌশলের উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।
—

