আগরতলা, ৩১ মে : তিস্তায় নিখোঁজ হয়েছেন ত্রিপুরার কৈলাসহরের দুই যুবক। সিকিমে ঘুরতে গিয়ে স্বপ্নীল দেব(২৬) ও দেবজ্যোতি জয় দেব(২৬) ভয়ংকর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাঁদের নিয়ে পর্যটক ভর্তি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০০০ ফুট নীচে পড়েছে। তাতে, গাড়ির চালকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও আরও দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ত্রিপুরার দুই যুবক সহ আটজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি রাস্তায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকি নিয়ে ওই পথ ধরে যেতে গিয়ে ঘটেছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গুরুডোংমার লেক দেখে ১০ জন পর্যটক নিয়ে ফিরছিলেন সিকিমের সিন্ধিক মঙ্গনের নিবাসী গাড়ি চালক ডি সরপা। রাত ৯টা নাগাদ লাচেন থেকে লাচুংয়ের দিকে যাওয়ার পথে মুন্সিথাংয়ের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তা পিছল হয়ে গিয়েছিল। বাঁক নেওয়ার সময় চাকা পিছলে নিয়ন্ত্রণ হারায় গাড়িটি। সোজা গিয়ে পড়ে হাজার ফুট নীচে তিস্তার খাদে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধারকাজে হাত লাগায় সিকিম পুলিস, ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিস (আইটিবিপি)। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। ওই অবস্থায় রাতভর তল্লাশি চলে। শেষরাতে পাহাড়ি খাদ থেকে দুই পর্যটককে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনা।
চুংথাংয়ের মহকুমাশাসক অরুণ ছেত্রী বলেন, ‘পর্যটকদের উদ্ধারে সিকিম প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তিস্তায় এনডিআরএফ এবং ডুবুরি নামানো হয়েছে।’ শুক্রবার দুপুরের পর ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে তিস্তায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির খোঁজ মেলে। দড়ি বেঁধে সেটি টেনে তোলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গতকাল সন্ধ্যার পর উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। তাছাড়া, ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তার জল অনেক বেড়েছে।
এদিকে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত মাত্র দু’জন পর্যটককে সঙ্কটজনক অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গ্যাংটকের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁদের। দীর্ঘ তল্লাশির পর শুক্রবার বিকেলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির কমবয়সি চালক পাশাং শেরপার দেহ উদ্ধার হয়েছে। ত্রিপুরার পর্যটক সহ এখনও নিখোঁজ আটজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওড়িশার বিজেপি মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা ইতশ্রী নায়েক জেনা। জাজপুরের বাসিন্দা তিনি। সপরিবারে উত্তর সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে সাইরাজ জেনা(১৭) এবং ভাতিজা স্বয়ম সুপ্রতিম নায়েক(১৭)-কে গভীর খাদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ওড়িশার বিজেপি মহিলা মোর্চার সম্পাদিকার পরিবারের অন্য নিখোঁজ পর্যটকরা হলেন অজিত কুমার নায়েক(৪৫), সুনীতা নায়েক(৪২), সাহিল জেনা(২১)। এছাড়া উত্তরপ্রদেশের দুই দম্পতি অঙ্কিতা সিং(২৬) এবং কৌশলেন্দ্র প্রতাপ সিং(৩২) এখনও নিখোঁজ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং-এর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। পর্যটকদের উদ্ধার করতে সবরকম চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উদ্ধার হওয়া। পর্যটকদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পর্যটকদের খুঁজে বের করতে দ্রুত একটি টিম সিকিম পাঠিয়েছেন।

