দেহরাদুন, ৩০ মে : উত্তরাখণ্ডের কোটদ্বার জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক রীনা নেগি শুক্রবার অঙ্কিতা ভাণ্ডারী হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। মূল অভিযুক্ত পুলকিত আর্য (উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী বিনোদ আর্যের ছেলে), সৌরভ ভাস্কর এবং অঙ্কিত গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। পাশাপাশি, প্রত্যেককে ৫০,০০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও, তিনজনকে মিলিয়ে অঙ্কিতার পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। ১৯ বছর বয়সী অঙ্কিতা ভাণ্ডারী পাউরি জেলার ইয়ামকেশ্বর ব্লকের ‘ভানতারা রিসর্ট’-এ রিসেপশনিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি নিখোঁজ হন এবং এক সপ্তাহ পর তাঁর মৃতদেহ চীলা শক্তি খালে উদ্ধার হয়। ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ঢেউ ওঠে।
অঙ্কিতা মৃত্যুর আগেই এক বন্ধুর কাছে রিসর্টে চলা অস্বাভাবিক কার্যকলাপ ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তদন্তে উঠে আসে, পুলকিত আর্য অঙ্কিতাকে এক “ভিআইপি অতিথি”-কে “অতিরিক্ত পরিষেবা” দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, যা নিয়ে তাদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। প্রাথমিক তদন্তে অসঙ্গতির অভিযোগ উঠলেও রাজ্যের বৃহৎ অংশের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ওই হত্যা মামলায় তদন্তে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে প্রায় ৫০০ পাতার চার্জশিটে ৯৭ জন সাক্ষীর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিচারপর্বে ৪৭ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিচার প্রক্রিয়া চলে দুই বছর আট মাস ধরে। অভিযুক্তদের নিয়মিত আদালতে হাজির করানো হয়।
রিসর্টের মালিক ছিলেন বিনোদ আর্য, যিনি বিজেপি ও আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপি তাঁকে সব দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়। অঙ্কিতার মা এক ভিডিও বার্তায় এক বিজেপি নেতার নাম প্রকাশ্যে আনেন, যা রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে। ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি উঠলেও রাজ্য সরকার তা মানেনি।
ওই মামলায় প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পরপরই রাতারাতি ভানতারা রিসর্ট বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এছাড়া, ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে চীলা খালের কাছাকাছি একটি রিসর্ট ও কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে আরও সন্দেহ দানা বাঁধে। অবশেষে, এই রায়ে কিছুটা স্বস্তি পেল অঙ্কিতার পরিবার। তাঁর মা বলেন, “আমার মেয়ের হত্যায় ন্যায় চেয়েছিল, আজ আদালতের রায়ে সে আশার আলো দেখল।”
এই মামলাটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক প্রভাব ও বিচার ব্যবস্থার উপর জনআস্থার চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে উঠেছিল। রায়ের পরও সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে, সত্যিই কি ন্যায়বিচার সম্পূর্ণ হয়েছে? ভিআইপি-র আসল পরিচয় কি আদৌ জানা যাবে? তদন্ত কি আরও গভীর হওয়া উচিত ছিল? সেই প্রশ্নগুলির উত্তর এখনও অনিশ্চিত।

