মালদ্বীপ এক্সপো ২০২৫: বিশ্ব দরবারে ভারতের ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও দেশীয় পণ্যের জয়যাত্রা

মালে, ২৯ মে: ভারতের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ও দেশীয় পণ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস বর্তমানে মালদ্বীপ এক্সপো ২০২৫-এ বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করছে। ৩১ মে পর্যন্ত চলবে এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী, যার উদ্বোধন করেছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুইজু। এই এক্সপোতে ভারতের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে প্রাণবন্ত এবং তা ভারত সরকারের ‘এক জেলা এক পণ্য’ কর্মসূচির অধীনে আয়োজিত হয়েছে।

কর্ণাটকের হস্তনির্মিত চন্নাপটনা খেলনা থেকে শুরু করে লাদাখের সুগন্ধী সীবকথর্ন ও বাকউইট চায়ের মতো অনন্য প্রাকৃতিক পণ্য, ভারতীয় প্যাভিলিয়ন হয়ে উঠেছে এই এক্সপোর অন্যতম আকর্ষণ। এইসব পণ্যের পেছনে রয়েছে শিল্পীদের ও উদ্যোক্তাদের অসাধারণ জীবনগাথা, যারা ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করার পাশাপাশি টেকসই জীবনের প্রচার করছেন।

বিশেষ নজর কেড়েছে ‘শিখা কি করিয়াগড়ি’ নামক একটি ব্র্যান্ডের প্রদর্শনী, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারিগরদের হাতে তৈরি কাপড় এবং লুমসের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ভিত্তিক পোশাক তৈরি করে। এই স্টলে দর্শকরা দেখতে পাচ্ছেন পটচিত্র, মাধুবনী ও কলমকারি শাড়ি এবং স্টোল, হস্তচিত্রিত জুতো, এবং “আর্ট জোন”-এ কাস্টমাইজ করা টুপি ও মাফলার তৈরির কর্মশালা। শিখার লক্ষ্য, ভারতীয় হস্তশিল্পকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরা এবং প্রতিটি সেলাইয়ের মধ্যে ঐতিহ্যের সম্মান উদযাপন।

এক অনুপ্রেরণামূলক নাম হল বেঙ্গালুরুর অভিজ্ঞ কারিগর সাইয়্যদ আব্দুল কাদের, যিনি গত ৩০ বছর ধরে চন্নাপটনা খেলনা নির্মাণের পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন। পিতার কাছ থেকে পাওয়া দক্ষতাকে তিনি শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং আরও আটজন কারিগরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেন এই ঐতিহ্য বেঁচে থাকে। তাঁর কাজ ভারতের জীবন্ত ঐতিহ্যের নিদর্শন এবং সাংস্কৃতিক স্থায়ীত্বের প্রতীক।

লাদাখের নিমা গুস গুস ভেঞ্চারস-এর প্রতিষ্ঠাতা পদ্মা আংমোর গল্পও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শুধুমাত্র উন্নতমানের চা উৎপাদনেই মনোযোগী নন, বরং স্থানীয় কৃষকদের ক্ষমতায়ন, ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা এবং হিমালয়ের কৃষি ঐতিহ্যের সংরক্ষণের প্রতিও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁর উদ্যোগে প্রতিফলিত হয় পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে ওঠা এক শক্তিশালী কমিউনিটি চেতনা। তাঁর স্বপ্ন, ভারতের যুবসমাজ যেন কৃষিকে সম্মানজনক ও কার্যকর একটি পেশা হিসেবে বিবেচনা করে।

এই বছরের এক্সপোতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীগুলোর অংশগ্রহণে। ওড়িশার পাঁচটি স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীর তৈরি সাতটি ভিন্নধর্মী ‘এক জেলা এক পণ্য’ উৎপাদিত সামগ্রী ‘সারস এক্সপো’-তে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই পণ্যগুলো দেশীয় উদ্যোগ, উদ্ভাবন এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক বিকাশের উজ্জ্বল উদাহরণ, যা গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিকশিত হয়েছে।

এই কারিগর ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয় ভারতের সাংস্কৃতিক কূটনীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে প্রতিটি পণ্য একটি গল্প বলে, প্রতিটি শিল্প একটি ঐতিহ্য বহন করে এবং প্রতিটি আন্তঃসংযোগ দ্বিপাক্ষিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়াকে আরও গভীর করে তোলে।