নয়াদিল্লি, ২৩ মে : “১৯৭১ সালের যুদ্ধে বিএসএফ-এর সাহসিকতা ও অবদান ভারত কোনও দিন ভুলবে না এবং বাংলাদেশকেও তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়”। আজ নয়াদিল্লিতে বিএসএফ-এর অলঙ্করণ অনুষ্ঠান ও রুস্তমজি স্মারক বক্তৃতায় এ কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী অমিত শাহ। প্রসঙ্গত, পহেলগামে জঙ্গীদের বর্বরতা পরবর্তী অপারেশন সিঁদুর -র পর পাকিস্তানের পাশেই দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। আজ তাই বাংলাদেশকে ভারতের অবদান স্মরণ করিয়ে দেওয়া যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
অমিত শাহ বলেন, ১৯৬৫ সালে সীমিত সম্পদ নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিএসএফ আজ বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে সম্মানিত সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী হয়ে উঠেছে। কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশে—৪৫ ডিগ্রির বেশি উত্তাপ, কনকনে ঠান্ডা, গভীর জঙ্গল, দুর্গম পাহাড় ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিএসএফ জওয়ানদের আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমই এই বাহিনীকে ভারতের ‘প্রথম প্রতিরক্ষা পংক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর সীমান্ত রক্ষায় একটি বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজন অনুভূত হয়, যার ফলে বিএসএফ গঠিত হয় এবং কে. এফ. রুস্তমজি এর প্রথম মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান-আরোপিত যুদ্ধে বিএসএফ-এর জওয়ানরা অসাধারণ বীরত্ব দেখান এবং ভারতীয় সেনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী প্রশংসার সুরে বলেন, বিএসএফ শুধু সীমান্ত নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। অমিত শাহ বলেন, “নির্বাচন, কোভিড, খেলাধুলা বা নকশালবিরোধী অভিযান—সবক্ষেত্রেই বিএসএফ দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে।”
অমিত শাহ বলেন, “অপারেশন সিন্ধুর ভারতের রাজনৈতিক দৃঢ়তা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নিখুঁত তথ্য এবং সেনার প্রাণঘাতী ক্ষমতার প্রতীক।” তিনি জানান, পহেলগামে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে পর্যটকদের হত্যার জবাবে এই অভিযান চালানো হয়, যেখানে মাত্র কয়েক মিনিটেই ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়।
তিনি বলেন, “আমরা শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করেছি, কিন্তু পাকিস্তান তা নিজেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে মেনে নিয়েছে এবং তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়—পাকিস্তানই সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক।” অপারেশন সিন্ধুরের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে।
অমিত শাহ বলেন, “অপারেশন সিন্ধুরে বিএসএফ-এর মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমদ ও দীপক চিংখাম মাতৃভূমির রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁদের নাম ভারতের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।” তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে বিএসএফ প্রায় ১.১ লাখ কেজি মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করেছে এবং ৭৮ জনের বেশি নকশাল বিদ্রোহীকে নিকেশ করেছে। সীমান্তে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ও ইন-হাউজ উদ্ভাবনে বিএসএফ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিএসএফ-এর জওয়ানরা পেয়েছেন ১ পদ্মবিভূষণ, ২ পদ্মভূষণ, ৭ পদ্মশ্রী, ১ মহাবীর চক্র, ৬ কীর্তি চক্র, ১৩ শৌর্য চক্র, ৫৬ সেনা পদক ও ১,২৪৬টি পুলিশ সাহসিকতা পদক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “দেশ বিএসএফ-এর সাহসিকতায় গর্বিত। তারা প্রমাণ করেছে যে, যতক্ষণ বিএসএফ সীমান্তে রয়েছে, পাকিস্তান এক ইঞ্চিও অগ্রসর হতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আত্মনির্ভর ভারতের যাত্রা আরও জোরদার হবে এবং বিএসএফ তার অবিচল ভূমিকা পালন করে যাবে। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় গৃহসচিব, গোয়েন্দা ব্যুরোর পরিচালক এবং বিএসএফ-এর মহাপরিচালকসহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

