ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ‘মধ্যস্থতা’ দাবি নিয়ে বললেন জন বোল্টন: “এটা শুধুই ট্রাম্পের স্বভাব”

ওয়াশিংটন/নয়াদিল্লি, ২২ মে: সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর মধ্যস্থতার দাবি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “এটা কিছুই নয়, শুধু ট্রাম্প যা করেন, তাই করেছেন।” ভারতের সংবাদ সংস্থা কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোল্টন বলেন, “ট্রাম্প সবকিছুর কৃতিত্ব নিজে নিতে পছন্দ করেন। এটা কোনোভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সম্ভবত ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং স্টেট সেক্রেটারি মার্কো রুবিও-র সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তবে বিশ্বের আরও কিছু দেশ এই পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিল বলেও আমার ধারণা। ট্রাম্প এমন মানুষ, যিনি সবসময় অন্যদের আগেই ‘ক্রেডিট’ নিতে চান।”

বোল্টনের মতে, ট্রাম্পের এ ধরনের আচরণ অনেকের কাছেই বিরক্তিকর মনে হতে পারে, তবে ভারতকে লক্ষ্য করে কিছু করা হয়নি। “এটাই ট্রাম্পের স্বভাব,” মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১০ মে, ভারত ও পাকিস্তান স্থল, আকাশ ও জলপথে সমস্ত সামরিক অভিযান বন্ধে সম্মত হয়। এর আগে ৭ মে ভারতের সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিন-এর সঙ্গে যুক্ত ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে লক্ষ্যভেদী হামলা চালায়।

এই অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ড্রোন, ইউএভি ও ভারী কামান ব্যবহার করে সীমান্তে পাল্টা হামলার চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং যুদ্ধের আশঙ্কায় প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই হঠাৎ করেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তরফ থেকে, যা ভারত বা পাকিস্তান, কোনো দেশের সরকারই দেয়নি।

“এক দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর, মার্কিন মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সম্পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দু’দেশের প্রতি শুভেচ্ছা জানাই তাদের ‘কমন সেন্স’ ও ‘গ্রেট ইন্টেলিজেন্স’-এর জন্য,” ট্রাম্প লেখেন নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে।

ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক প্রভাব খাটিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বন্ধ করা গেছে এবং তিনি কাশ্মীর ইস্যুতেও মধ্যস্থতা করতে চান।

ট্রাম্পের এই দাবি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত যে কোনও ইস্যু শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা করা হবে — এটি ভারতের দীর্ঘদিনের নীতি।

এক বিবৃতিতে উল্লেখ , “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট — জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা নেই। পাকিস্তান অবৈধভাবে যে ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে, সেটির মুক্তিই এখন একমাত্র বিবেচ্য বিষয়” ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, অপারেশন সিন্দুর থেকে শুরু করে ১০ মে যুদ্ধবিরতি পর্যন্ত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন সামরিক আলোচনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনও আলোচনার প্রসঙ্গ ওঠেনি।

“এই সময়কালে বাণিজ্য নিয়ে কোনও কথা হয়নি,” — স্পষ্ট জানিয়ে দেয় এস জয়শঙ্কর-এর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয়।

এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যক্তিত্ব নির্ভর রাজনীতি কিভাবে বাস্তব পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে যেতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি একটি কূটনৈতিক সাফল্য হলেও, তা নিয়ে ট্রাম্পের ‘নাটকীয়’ ঘোষণা কেবল রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।