বাসভবনে নগদ অর্থ উদ্ধার : বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর-এর আবেদনে মামলার শুনানি তালিকাভুক্ত করতে সম্মত সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি, ১৯ মে : বিচারপতি যশবন্ত বর্মার দিল্লির বাসভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর স্টোররুম থেকে পুড়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আবেদনের জরুরি শুনানি তালিকাভুক্ত করতে সোমবার সম্মত হয়েছে শীর্ষ আদালত।

প্রধান বিচারপতি বি আর গবাই এবং এ ভি মশিহ-র নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার তালিকাভুক্ত করেছেন। তবে আবেদনকারী ম্যাথিউস জে. নেডুমপারা জানান, তিনি মঙ্গলবার অনুপস্থিত থাকবেন। এরপর প্রধান বিচারপতি জানান, আগামী বুধবার মামলাটি শুনানির জন্য তোলা হবে, তবে শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রার যে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করেছে, তা সংশোধনের সাপেক্ষে এটি তালিকাভুক্ত হবে।

এর আগে, গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ‘আউট অফ টার্ন’ শুনানির অনুরোধ নাকচ করে জানিয়েছিল, আবেদনকারীকে প্রচলিত ‘মেনশনিং প্রসিডিউর’ অনুসরণ করতে হবে, যা ইমেইলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করতে হয়েছে।

আবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিচারপতি বর্মা যদি দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে থাকেন, তাহলে শুধুমাত্র অভিশংসন যথেষ্ট নয়; তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, “এটি জনগণের ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে এক মারাত্মক অপরাধ। যখন একজন বিচারপতি যিনি ন্যায়বিচারের রক্ষক, তিনি নিজেই অভিযুক্ত হন, তখন অপরাধের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যায় এবং শাস্তিও হতে হবে সেই অনুযায়ী।”

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, “পোড়া ও আংশিক পোড়া যে বিপুল অঙ্কের অর্থ উদ্ধার হয়েছে, তা স্পষ্টতই ঘুষ বা দুর্নীতির ফসল — যা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) ও দুর্নীতির প্রতিরোধ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু কেন এ পর্যন্ত কোনো এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি বা অপরাধ আইনের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, সে বিষয়ে কোনও সরকারি ব্যাখ্যা নেই।”

উল্লেখ্য, গত মার্চের শেষ সপ্তাহে বিচারপতি অভয় এস. ওকা ও উজ্জ্বল ভূইয়ার বেঞ্চ একই আবেদনকারীর পক্ষ থেকে দায়ের করা আরেকটি মামলার নিষ্পত্তি করেন, যেখানে দিল্লি পুলিশকে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই বেঞ্চ জানিয়েছিল, ‘‘ইন-হাউস” তদন্ত চলছে। যদি ওই প্রতিবেদনে কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে এফআইআর দায়ের বা বিষয়টি সংসদের বিবেচনার জন্য পাঠানো যেতে পারে।’’

এদিকে, ১৪ মার্চ ঘটনার দিনেই এফআইআর না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেরিতে তথ্য প্রকাশ এবং ইলেকট্রনিক প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা একটি ধামাচাপা দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। ঘটনার জেরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে বিচারপতি বর্মাকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করা হয়।

গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইন-হাউস তদন্তের রিপোর্ট রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের প্রধান বিচারপতি ইন-হাউস পদ্ধতির অধীনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ৩ মে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন এবং বিচারপতি বর্মার ৬ মে জবাবসহ চিঠি পাঠিয়েছেন।”