নয়াদিল্লি, ১৯ মে: পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি গোটা দেশে নজরদারি জোরদার করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিনটি রাজ্য থেকে অন্তত আটজনকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চারজন হরিয়ানা থেকে, তিনজন পাঞ্জাব থেকে এবং একজন উত্তরপ্রদেশ থেকে।
ভ্লগার থেকে শুরু করে ছাত্র ও ব্যবসায়ী — অভিযুক্তদের পরিচয়:
১. জ্যোতি মালহোত্রা:
হরিয়ানার হিসার জেলার বাসিন্দা জ্যোতি মালহোত্রা একজন জনপ্রিয় ইউটিউব ভ্লগার, যিনি ‘ট্র্যাভেল উইথ জো ’ নামে একটি চ্যানেল পরিচালনা করতেন। পুলিশের দাবি, তিনি পাকিস্তান হাই কমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন এবং অন্তত দু’বার পাকিস্তান সফর করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার গোপন তথ্য পাকিস্তানে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
২. দেবেন্দ্র সিং ধিলোঁ:
২৫ বছর বয়সী দেবেন্দ্র সিং, পাটিয়ালার খালসা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াশোনা করতেন। গত ১২ মে হরিয়ানার কৈথাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ফেসবুকে অস্ত্রের ছবি আপলোড করার সূত্র ধরে তদন্তে উঠে আসে তিনি গত নভেম্বরে পাকিস্তান গিয়েছিলেন এবং সেখানকার আইএসআই কর্মকর্তাদের কাছে সেনা ছাউনি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেছিলেন।
৩. নওমান ইলাহী:
২৪ বছর বয়সী নওমান হরিয়ানার পানিপথে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশের মতে, তিনি পাকিস্তানের আইএসআই হ্যান্ডলারের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন এবং তার আত্মীয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে ভারতীয় তথ্য পাঠাতেন।
৪. আরমান:
২৩ বছর বয়সী আরমানকে ১৬ মে হরিয়ানার নুহ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তিনি পাকিস্তানে সেনা সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য পাচার করছিলেন।
৫. শাহজাদ:
উত্তরপ্রদেশের রামপুরের ব্যবসায়ী শাহজাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে মোরাদাবাদে। তিনি পাকিস্তানে একাধিকবার সফর করেছেন এবং বিভিন্ন সামগ্রী যেমন প্রসাধনী, পোশাক ও মশলা পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ।
৬. মোহাম্মদ মুর্তজা আলি:
পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে গুজরাট পুলিশের একটি দল মোহাম্মদ মুর্তজা আলিকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে নিজে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে পাকিস্তানের আইএসআইকে তথ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও তিনটি সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।
৭ . গাজালা ও ইয়ামিন মোহাম্মদ:
এই দুই ব্যক্তিকেও পাঞ্জাব থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই আটজনের গ্রেফতার দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে ‘অপারেশন সিন্দূর’ চালানো হয়, যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানা হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলেও ভারতীয় বাহিনী তা প্রতিহত করে। ১০ মে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

