নয়াদিল্লি, ১৭ মে : অপারেশন সিঁদুর এবং পাহেলগাম জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে কেন্দ্র সরকার সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্রের খবর, এই দলের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রক, লোকসভা এবং রাজ্যসভা সচিবালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রতিনিধি দলের তালিকা প্রস্তুত করছে। সংসদীয় কর্ম বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু অনেক বিরোধী সাংসদকে ফোন করে ‘জাতীয় স্বার্থে’ এই প্রতিনিধিদলে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
যাঁরা আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন কংগ্রেসের শশী থারুর, সালমান খুরশিদ, মণীশ তেওয়ারি ও অমর সিং, এনসিপি (এসপি)-র সুপ্রিয়া সুলে, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এআইএমআইএম-এর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, ডিএমকে-র কানিমোঝি, বিজেডির শশ্মিত পাত্র, আইইউএমএল-এর ই টি মোহাম্মদ বশির, সিপিএমের জন ব্রিটাস এবং বিজেপির বীজে পাণ্ডা ও অনুরাগ ঠাকুর।
কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ জানিয়েছেন, তিনি ফোন পেয়েছেন এবং বিষয়টি দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি কংগ্রেসকে জানিয়েছি যে আমি আমন্ত্রণ পেয়েছি। এটা দলের সিদ্ধান্ত হবে কে যাবে।”
এ বিষয়ে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জৈরাম রমেশ এক্স-এ লেখেন, “প্রধানমন্ত্রী পাহেলগাম হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে দুটি সর্বদলীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে অস্বীকার করেছেন। এখন হঠাৎ করে বিদেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করা যায়। কংগ্রেস সবসময় জাতীয় স্বার্থে অবস্থান নেয়, এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে কখনো রাজনীতি করে না। তাই এই প্রতিনিধিদলে কংগ্রেস নিশ্চয়ই অংশ নেবে।”
এক সাংসদ, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “গতকাল রাতে কিরেন রিজিজু ফোন করেন। তিনি বলেন ২২-২৩ মে’র দিকে একাধিক প্রতিনিধি দল বিদেশে যাবে, এবং ১লা জুনের মধ্যে ফিরবে। আমাকে এখনও জানানো হয়নি আমি কোথায় যাচ্ছি, তবে বলা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রক যোগাযোগ করবে।”
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউরোপ এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে এই দলগুলো প্রাথমিকভাবে পাঠানো হবে। প্রতিনিধি দলগুলো মূলত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত হবে, যাতে তারা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারেন যে, পাকিস্তান-প্রশ্রুত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত ঐক্যবদ্ধ।
সরকারের মতে, এর মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে যে ভারত আগে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রতিশোধ হিসেবে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে যথাযথ জবাব দিয়েছে।
১৯৯৪ এবং ২০০৮ সালে পাকিস্তানের মদতে হওয়া হামলার পরও এমন সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিদেশে পাঠিয়েছিল ভারত সরকার। ১৯৯৪ সালে পি ভি নরসিমা রাও সরকারের আমলে তৎকালীন বিরোধী নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে একটি দল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ অধিবেশনে পাঠানো হয়, যেখানে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছিল।
বর্তমান উদ্যোগ শুধুমাত্র কূটনৈতিক স্তরেই নয়, রাজনৈতিক গুরুত্বেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কংগ্রেস সম্প্রতি বিজেপিকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছে। বিজেপি যেখানে ‘তিন রঙা’ র্যালি করছে, সেখানে কংগ্রেস ‘জয় হিন্দ’ র্যালির ডাক দিয়েছে ১২টি শহরে।
তবে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী কেন শুধু এনডিএ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন অপারেশন সিঁদুর নিয়ে, কেন সব মুখ্যমন্ত্রীদের ডাকেননি।
এই প্রেক্ষাপটে, কেন্দ্রের সর্বদলীয় কূটনৈতিক প্রয়াসকে কেবল আন্তর্জাতিক নয়, জাতীয় রাজনৈতিক বার্তাও হিসেবে দেখা হচ্ছে।

