তাইওয়ানের আকাশসীমা ও জলসীমায় ৩১টি চীনা যুদ্ধবিমান, ৭টি যুদ্ধজাহাজ; উত্তেজনা বৃদ্ধি পেল তাইওয়ান প্রণালীতে

তাইপেই, ১৪ মে : তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা ৩১টি চীনা যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে, যার মধ্যে ৩০টি বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মাঝরেখা অতিক্রম করে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও দেখা গেছে ৭টি চীনা যুদ্ধজাহাজ এবং একটি সরকারি জাহাজও তাইওয়ানের জলসীমার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, তারা মিশন বিমানে, যুদ্ধজাহাজ ও উপকূলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে এই পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, “আজ স্থানীয় সময় সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩১টি চীনা সামরিক বিমানের গতিবিধি শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি বিমান মাঝরেখা অতিক্রম করে আমাদের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকারী অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। একইসঙ্গে ৭টি চীনা নৌজাহাজ ও একটি সরকারি জাহাজও চিহ্নিত হয়েছে।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, আজ ভোরে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের শিচাং স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। উপগ্রহটি তাইওয়ানের মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হয়েছে। যেহেতু এটি বায়ুমণ্ডলের বাইরের উচ্চতায় ছিল, তাই এই উৎক্ষেপণ তাইওয়ানের জন্য কোনও হুমকি তৈরি করেনি।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, “আজ স্থানীয় সময় ভোর ২:০৯ মিনিটে চীন থেকে উৎক্ষেপিত উপগ্রহটি তাইওয়ানের মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে যায়। উচ্চতা বায়ুমণ্ডলের বাইরে হওয়ায় এটি কোনও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করেনি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে এবং যেকোনও পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”

চীনের আগ্রাসী অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান। গত মাসেও তাইওয়ান ১৯টি চীনা যুদ্ধজাহাজ শনাক্ত করেছিল এবং চীনের যৌথ সামরিক মহড়ার তীব্র নিন্দা করে বলেছিল। এই ধরনের আগ্রাসন অঞ্চলিক শান্তির জন্য বিপজ্জনক। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একে স্থিতাবস্থার পরিপন্থী ও চরম উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেং চীনকে “বিদেশি শত্রুপক্ষ” হিসেবে উল্লেখ করে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত একাধিক ঘটনার মধ্যেও তাইওয়ান প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি জোরদার করেছে।

চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এসেছে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগে দখলের হুমকি দিয়েছে। গত কয়েক বছরে চীন তাইওয়ান প্রণালীতে বারংবার সামরিক মহড়া চালিয়ে দ্বীপটির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তাইওয়ান প্রণালীকে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে চাইছে।