‘অপারেশন সিঁদুর’ ছিল জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করা হয়নি: ভারতীয় সেনা

নয়াদিল্লি, ১১ মে : অপারেশন সিঁদুর এই অভিযান ছিল একটি নির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত সামরিক পদক্ষেপ, যার মূল লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ও জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা। রবিবার যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকরা ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কিত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন।

সেনার ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানান, ভারতের সেনাবাহিনী ৯টি গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি ঘাঁটিতে সফলভাবে হামলা চালিয়ে ১০০-র বেশি জঙ্গিকে নিকেশ করেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ইউসুফ আজহার, আব্দুল মালিক রউফ এবং মুদাস্সির আহমেদ। তিনি নিশ্চিত করেন, এদের মধ্যে কেউ কেউ আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ ও পুলওয়ামা হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই জানান, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতের জনবহুল গ্রাম ও ধর্মীয় স্থান, বিশেষত গুরুদ্বারে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় বাহিনী পরিমিত ও কৌশলগত প্রতিশোধ নিয়ে নাগরিক প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষায় সফল হয়েছে, বলে জানান তিনি।

এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী সাংবাদিক সম্মেলনে বাহাওয়ালপুরে ধ্বংস হওয়া জঙ্গিঘাঁটির স্যাটেলাইট ছবি ও মুরিদকেতে হামলার পরে ধারণ করা ছবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই অভিযানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যার প্রভাব বিশ্ব দেখতে পাবে।

ঘাই জানান, ৯-১০ মে রাতে পাকিস্তান ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা চালায়। তবে অধিকাংশ হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। প্রতিরোধমূলক জবাবে ৭-১০ মে’র মধ্যে ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এয়ার মার্শাল ভারতী বলেন, চাকলালা, রফিকি-সহ বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতে জবাবি হামলা চালানো হয়েছে। তিনি স্পষ্ট বলেন, ভারতের হাতে ঘাঁটিগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস করার সামর্থ্য ছিল, কিন্তু ভারত পরিমিত ও দায়িত্বশীলভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানায়, পাক সেনা বা নাগরিকদের সঙ্গে ভারতের কোনও শত্রুতা নেই। ভারতের লড়াই কেবলমাত্র সীমান্ত পেরিয়ে পরিচালিত জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। পূর্ব নির্ধারিত তালিকাভুক্ত জঙ্গিদেরই নিশানা করা হয়েছে।

ঘাই জানান, শনিবার দুপুর ৩টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানের ডিজিএমও-র সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়, যেখানে উভয় পক্ষ ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পাকিস্তান কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে।

শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত একাধিক ড্রোন হানার চেষ্টা চালানো হয়, যার সঠিক জবাব দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ বিরতি ভঙ্গের বিষয়ে হটলাইনে পাকিস্তানকে বার্তা পাঠানো হয়, এবং ঘাই জানান, ভবিষ্যতে যেকোনও ধরনের হানার জবাব দিতে সেনা কমান্ডারদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, সংঘর্ষ চলাকালীন ভারতের পাঁচজন সেনা সদস্য শহিদ হয়েছেন। এয়ার মার্শাল ভারতী জানান, জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করার মূল লক্ষ্য সফলভাবে পূরণ করা হয়েছে এবং শিগগিরই এর প্রভাব আন্তর্জাতিক মঞ্চেও প্রতিফলিত হবে।