আগরতলা, ১ মে : দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুনে মান্দাইয়ে পুড়েছে সিপিএমের পার্টি অফিস। তাতে, দমে যাওয়ার বদলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনোবল আরও বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ওই পার্টি অফিস পরিদর্শনে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বিজেপির দুর্বলতা এবং জনভিত্তি হারানো নিয়ে ঝাঝালো ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। সেখানেই থেমে না থেকে তিনি কৌশলে ত্রিপুরায় উপজাতি ও অনুপজাতি উভয় অংশের মানুষের ঐক্যে ফাটল ধরানো এবং হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিরোধ বাধানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও তিপরা মথা এবং বিজেপিকে নিশানায় নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেছেন। সবমিলিয়ে মানিক সরকার আজ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার বার্তা দিয়েছেন।
গতকাল দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুনে মান্দাইয়ে সিপিএম পার্টি অফিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আজ সেই জতুগৃহ সরেজমিনে পরিদর্শন করতে যান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। টিটিএএডিসি-র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য রাধাচরণ দেববর্মা-কে সাথে নিয়ে তিনি পার্টি অফিসের পুরোটাই ঘুরে দেখেছেন। এরপর তিনি সেখানে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছেন।
তিনি ওই ঘটনায় সরাসরি বিজেপি-কে নিশানা করে বলেন, শক্তি নয়, শাসক দল এভাবে তাঁদের দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। সাড়ে সাত বছরে সরকার পরিচালনায় জনভিত্তি বৃদ্ধির বদলে ক্রমশ কমছে, সেই ভীতির বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে। তাঁর কথায়, বিজেপি সরকারের শাসনে সকল অংশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ, জনকল্যাণে তাঁদের ইতিবাচক কর্মসূচী নেই। তাঁর অভিযোগ, প্রশাসন ও সরকার দুর্নীতিতে জড়াজড়ি করছে। কোথাও কোথাও টাকার অভাবে সন্তান বিক্রি, কাজের সন্ধানে রাজ্যের বাইরে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
সাথে তিনি যোগ করেন, হাসপাতালে মানুষ সঠিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। কারণ, চিকিত্সক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি চিকিৎসা পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক সংকটের জেরে গত বছরের তুলনায় এবছর পর্ষদ পরিচালিত পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হয়েছে। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বাম জমানায় বছরে ৮৫ থেকে ৯৫ দিনের রেগার কাজ হতো। এখন তা ৩০ থেকে ৩২ দিনে নেমেছে। তারপর, সময় মতো রেগা শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। যখনই মজুরি তুলতে ব্যাঙ্কে যাচ্ছেন, বিজেপির মন্ডলের সদস্যরা সেখানেও ভাগ বসানোর চেষ্টা করছেন।
মানিক সরকারের মতে, কৃষি, নগরোন্নয়ন, গ্রামোন্নয়ন, মৎস্য ইত্যাদি দফতরের মাধ্যমে জনকল্যাণে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, তার বদলে হচ্ছে শুধুই দুর্নীতি। ফলে, বিজেপির পুরনো এবং নতুন নেতা-কর্মীরা শক্তি যুগানোর বদলে নিজেরাই ক্ষোভে ফুসছেন। তাতে, দলের মধ্যে অন্তরকলহ বাড়ছে। সেখানে, সিপিএম সারা রাজ্যে শুধুই মানুষের জন্য কথা বলে চলেছে। ফলে, বিজেপি বেকায়দায় পড়ছে। মানিকের দাবি, সময় যত গড়াচ্ছে সিপিএমের মিছিল-সভায় মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। মান্দাইয়ে পার্টি এই নিয়েই ছয়বার আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু, আজ যাঁদের সাথে মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে তাঁরাও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং এগিয়ে এসে খোঁজ নিয়ে গেছেন।
তিনি নিশ্চিত, ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। কিন্তু, এভাবে সিপিএমকে দমিয়ে রাখা যাবে না। বরং তাঁরাই এখন ঘৃণার পাত্র হয়েছে। মানিকের সাফ কথা, বিজেপির জনভিত্তি ক্রমশ কমছে তেইশের বিধানসভা নির্বাচনে পরিণাম রাজ্যবাসী দেখেছে। আঠারোর নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির আসন ও ভোট উভয়ই কমেছে। সাথে তিপরা মথা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অবশ্য তাঁদের জনসমর্থনও কমেছে, কটাক্ষের সুরে বলেন মানিক সরকার।
এদিন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বার্তা দেন, উপজাতি-অনুপজাতি উভয় অংশের মানুষের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে। কারণ, তিপরা মথাকে সামনে রেখে উপজাতি-অনুপজাতি অংশের মানুষের মধ্যে ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, বিজেপি হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিরোধ বাধানোর চেষ্টা করছে। ওই সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে, নিদান দেন তিনি।

