আগরতলা, ১৯ এপ্রিল : ককবরক ভাষায় হরফ রোমান ছাড়া দেবনাগরী হোক, তাতে আপত্তি নেই প্রদ্যোতের। কিন্তু বাংলা হরফ ককবরকের জন্য কিছুতেই মেনে নেবেন না তিনি। সাথে আইপিএফটি-কেও এবিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে প্রতিবাদী হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সাথে ২০২৮ বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে এই ইস্যুর স্থায়ী সমাধান না হলে জোট শরিক বিজেপি-কে কার্যত হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রদ্যোত। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সাথে জোট ভেঙ্গে বেরিয়ে যাবে তিপরা মথা। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ককবরক সাহিত্য পরিষদের প্রস্তাব ঘিরে আজ সামাজিক মাধ্যমে লাইভে এসে এভাবেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন প্রদ্যোত।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ককবরক ভাষা রোমান হরফ ব্যবহারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ককবরক সাহিত্য পরিষদ মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডঃ মানিক সাহাকে ভারতের সংবিধানের ৮ম তফসিলে ককবরক ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা সহ ককবরক ভাষা দেবনগরী অথবা বাংলা লিপিতে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি, ওই চিঠিতে আরও লেখা ছিল ত্রিপুরার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ককবরক অন্যতম প্রাচীন এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা। এটি উপজাতি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রকাশ, ইতিহাস এবং পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও, ভাষাটি এখনও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি যা জাতীয় পর্যায়ে এর সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং প্রচারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার ফলে, ভাষা সংরক্ষণের বর্ধিত সহায়তার মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করবে। এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহকারে বিবেচনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ককবরক সাহিত্য পরিষদ।
তাতেই, চটে লাল হয়ে গেছেন তিপরা মথার প্রাক্তন সুপ্রিমো তথা এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। আজ সামাজিক মাধ্যমে লাইভে এসে তিনি বলেন, ককবরক ভাষার হরফ যদি রোমান বাদে দেবনাগরীতে নেওয়ার প্রস্তাব জানানো হতো তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু বাংলা হরফ বেছে নেওয়ার প্রস্তাবেই আমার আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, ককবরক সাহিত্য পরিষদ মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ককবরক ভাষায় হরফ বাংলা কিংবা দেবনাগরিতে হোক, এমন প্রস্তাব দিয়েছে। সাথে তাঁরা ককবরককে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হোক চাইছে। তাতে, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু, বাংলা হরফের প্রস্তাবে আমি তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি, হুশিয়ারি দিয়ে বলেন তিনি।
তাঁর কথায়, ককরবক সাহিত্য পরিষদ ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এতই যদি বাংলা হরফ বেছে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে, তাহলে ককবরক ভাষার রোমান হরফ ব্যবহারের দাবির আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন কি ছিল, প্রশ্ন ছুঁড়েন তিনি। তাঁর সাফ কথা, যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন তিপ্রাসাদের ভবিষ্যত নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না।
এদিন তিনি আরও বলেন, আগামীদিনেও ককবরক ভাষার রোমান হরফ ব্যবহারের দাবির আন্দোলন জারি থাকবে। কারণ, আমি কাউকে ভয় পাই না। আমি প্রতিনিয়ত তিপরাসাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবো। তাঁর অভিযোগ, ককবরক ভাষা পরিষদের জন্যই আজ আমাদের আন্দোলন এতো দুর্বল হয়ে রয়েছে। তাই তিনি সকল তিপ্রাসাদের একজোট হয়ে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন। সাথে তাঁর হুঁশিয়ারি, আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে এই ইস্যুর স্থায়ী সমাধান বিজেপি-কে তার পরিণাম ভোগ করতে হবে। তাঁর ইঙ্গিত, প্রয়োজনে বিজেপির সাথে জোট ভেঙ্গে বেরিয়ে যাবে তিপরা মথা।

