আগরতলা, ২০ মার্চ: ব্যাংকের বেআইনী লেনদেনের শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। এবিষয়ে, অভিযোগ জানানো হলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।পরবর্তী সময়ে তিনি ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে জেলা ভোক্তা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত রায় দিয়েছে ব্যাংককে ১৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট না থাকলে টাকা জমা, তোলা কিংবা ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে সাধারণ নাগরিকদের বাধ্য হয়েই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। কিন্তু এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কখনো কখনো ব্যাংক সাধারণ মানুষের পকেট কেটে ফাঁকা করে দেয়। অনেকে ব্যাংকের পাসবই আপডেট করলেও হিসাবের গড়মিল কিংবা অনিয়মিত চার্জ কাটা নিয়ে খোঁজ রাখেন না। যাঁরা প্রতিবাদ করেন তাদের অনেক সময় ব্যাংক কর্মকর্তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। তবে আইনের আশ্রয় নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দোষী সাব্যস্ত হয় এবং বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হলেন ত্রিপুরার ধর্মনগরের এক সাধারণ গ্রাহক।
ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে, ধর্মনগরের রানা দিঘীর পশ্চিমপাড়ে মোদক হোমিও ক্লিনিকের কর্ণধার ডাঃ পরেশ চন্দ্র মোদক ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। গত ২০২২ ও ২০২৩ সালে তাঁর ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনিভাবে ১২০ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছিল। যা রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু, রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) থেকে আর.টি.আই আইনে স্পষ্ট, গ্রাহকদের ন্যূনতম এক মাস আগে নোটিশ না দিয়ে এই ধরনের চার্জ কাটা বেআইনি। সেই সার্কুলার সংযুক্ত করে ডাঃ মোদক ৯ নভেম্বর ২০২৩-এ গ্রামীণ ব্যাংকের ত্রিপুরার জেনারেল ম্যানেজারের কাছে আবেদন করেন, যাতে তার অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া অর্থ সুদ সহ ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক কোনো সদুত্তর দেয়নি।
পরবর্তীতে, ২০২৩ সালে ২৪ নভেম্বর ধর্মনগর শাখার ম্যানেজার এক চিঠির মাধ্যমে জানান যে, ৭ নভেম্বর ২০২২ থেকে কার্যকর হওয়া ব্যাংকের নতুন নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম ব্যালেন্স না থাকলে চার্জ কাটা হতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ব্যাংকের ওই নিয়ম কার্যকর হওয়ার আগেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেই ডাঃ মোদকের টাকা কাটা হয়েছিল। যা স্পষ্টতই বেআইনি।
ডাঃ মোদক ব্যাংকের ওই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঊনকোটি জেলা ভোক্তা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং সিসি/২১/২০২৩)। পাশাপাশি,ননিজের মামলা নিজেই লড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কোনো উকিলের সাহায্য ছাড়াই আইনি লড়াই চালিয়ে যান। শ্রী মোদকের অভিযোগপত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ২০,০০০ টাকা দাবি করেন। সেগুলো হল, ব্যাংকের কেটে নেওয়া টাকা: ১২০ টাকা, চিঠিপত্র ও করেসপন্ডেন্স খরচ: ৩৮০ টাকা, মামলা খরচ: ১৫০০ টাকা, আদালতে যাতায়াত খরচ (ধর্মনগর-কৈলাশহর): ৮০০০ টাকা, মানসিক ও সামাজিক সম্মানহানির ক্ষতিপূরণ: ১০,০০০ টাকা।
ওই মামলায় চলতি বছরের ১১ মার্চ জেলা জজ এবং কমিশনের দুইজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দিয়েছে। আদালত রায় দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দুই মাসের মধ্যে ডাঃ মোদককে ১৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিলম্ব হলে প্রতিদিন ৯% হারে সুদ গুনতে হবে। ডাঃ মোদক গ্রাহকদের সচেতন হয়ে ব্যাংকের নিয়মিত লেনদেন ও রিজার্ভ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তির প্রতি নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অন্যায়ের শিকার না হন।