অসমে ঠিকাভিত্তিক কৰ্মচারীর চাকরি নিয়মিত হবে না, টাকার অভাবে কোন মেয়ে ড্রপ আউট হয়েছে প্রমাণ দিলে আজই পদত্যাগ করব, বিধানসভায় জানান মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব

গুয়াহাটি, ১১ মাৰ্চ (হি.স.) : অসমে ঠিকাভিত্তিক কৰ্মচারীর চাকরি নিয়মিত হবে না, বিধানসভায় জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

আজ বিধানসভায় বাজেট বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য পেশ করছিলেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ২৪x৭ নজরদারির জন্য ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে অসমে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। শীঘ্রই ৪-৫টি উপগ্রহ রাজ্যের আকাশে ঘোরাফেরা করবে। এগুলি সরবরাহ করবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের রিয়াল-টাইম ডেটা।

এ সম্পর্কিত বিরোধীদের জিজ্ঞাসার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, প্রতিটি উপগ্রহের দাম প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। ওই উপগ্রহগুলি রিয়েল-টাইম বন্যা, দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ, অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে নজরদারি, জাতীয় উদ্যানগুলিতে বন্যপ্রাণী ট্র্যাকিং এবং কৃষি ও সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অসম সরকার স্যাটেলাইট নক্ষত্রমণ্ডল প্রকল্পের জন্য ইন-স্পেস (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার)-এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সুশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

অসম বাজেটের মাধ্যমে রাজ্যের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং স্থায়িত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বিরোধীদের ‘নির্বাচনমুখি জনপ্রিয় বাজেট’-এর ধারণাকে খারিজ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা জোরের সঙ্গে বলেন, তাঁর সরকার দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্ষমতায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পাশাপাশি অসমকে ভারতের অন্য রাজ্যগুলির মধ্যে অগ্রণী স্থান করে নিতে সাহায্য করবে।

অসমের প্রযুক্তিগত ভূদৃশ্যকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র সঙ্গে অংশীদারিত্বে একটি আসাম-স্পেসিফিক উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, রাজ্যে বন্যার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে উপগ্রহগুলি বন্যার পূর্বাভাস, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়তা করবে বলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্ৰীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচএম) এবং সৰ্বশিক্ষা অভিযান (এসএসএ)-এর অধীন ঠিকাভিত্তিক কৰ্মচারীদের চাকরি কবে নিয়মিত হবে ? মুখ্যমন্ত্ৰীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন নির্দলীয় (রাইজর দল-এর সর্বেসর্বা) বিধায়ক অখিল গগৈ।

অখিল গগৈয়ের প্ৰশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্ৰী জানিয়ে দেন ঠিকাভিত্তিক কৰ্মচারীদের চাকরি কখনও নিয়মিত হবে না। প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, রাজ্যে প্ৰথমবারের মতো সরকারি কৰ্মচারীরা ক্যাশলেস চিকিৎসা পাবেন। চেন্নাই-এও এই সুবিধা পাবেন সরকারি কৰ্মচারীরা। তিনি বলেন, এনএইচএম এবং এসএসএ কৰ্মচারীদের ১০০ শতাংশ চিকিৎসা-ব্যয় দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার৷

বাজেট ভাষণে অরুণোদয় প্রকল্পের টাকা প্ৰদান সম্পর্কে গুরুত্বপূৰ্ণ মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, আগামী বছর নিৰ্বাচনী মরশুমে অরুণোদয়-এর প্রাপ্য টাকা অগ্রিম প্রদানের জন্য ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ফেব্ৰুয়ারিতে নিৰ্বাচনী প্ৰক্ৰিয়া শুরু হয়ে গেলে আমরা অরুণোদয়-এর টাকা দিতে পারব না৷ প্ৰয়োজন হলে ফেব্ৰুয়ারি মাসে এক সঙ্গে আমরা পাঁচ মাসের অগ্রিম অরুণোদয়-এর টাকা প্রদান করে দেব।’ কেননা, যেহেতু ফেব্ৰুয়ারি মাসে নিৰ্বাচনের বিষয়ে ঘোষণা হয়ে যাবে, তাই মাৰ্চ, এপ্ৰিল, মে মাসের অরুণোদয় পাবেন না বলে সংশয় হতে পারে সুবিধাভোগীদের। সুতরাং গতকাল পেশকৃত বাজেটে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

‘নিযুত মইনা আঁচনি’ (‘নিযুত’ মানে ‘দশ লক্ষ’ এবং ‘মইনা’ মানে ‘শিশু বা বালিকা’ প্ৰকল্প)-র প্রচলন হওয়ার পর অসমে অর্থের অভাবে কোনও মেয়েকে কলেজ থেকে ড্ৰপ-আউট হয়নি, বলেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব। প্রসঙ্গত, বিরোধী বিধায়ক অখিল গগৈ অভিযোগ করেছিলেন, অসমের বহু মেয়ে কলেজ থেকে ড্ৰপ-আউট হয়েছে।

অখিল গগৈ-এর প্ৰত্যুত্তর দিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী জোরের সঙ্গে বলেন, ‘আপনার অভিযোগ যদি প্রমাণ করতে পারেন, তা-হলে আমি পদত্যাগ করব। অসমের মায়েদের যত পারেন বদনাম করতে অখিল গগৈকে এক ঘণ্টা দেওয়া হবে। নিজের রাজ্যের এত বদনাম করা উচিত নয়। আপনি (অখিল গগৈ) একটি কলেজ থেকে একটি মেয়ের নাম এনে দিন, যে এই মেয়ে টাকার অভাবে ড্ৰপ-আউট হয়েছে। কালবিলম্ব না করে আমি আজিই পদত্যাগ করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *