জয়ের কবিতা, কুনালের ভাষ্য আর রাজু বাউলের কন্ঠ যাদুতে সম্পন্ন ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভাল

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা , ২৩ ফেব্রুয়ারি:
উড়ান আয়োজিত ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের তৃতীয় দিনেও রাজ্যের সাহিত্যপ্রেমী মানুষের উপচে পড়া ভিড় আর উচ্ছ্বাস রাজ্যের সাহিত্যে রঙ্গনে যেন সু বাতাস ছড়িয়েছে। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই সাহিত্য উৎসব পরপর তিনদিন ধরে আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে যেন এক মহাকুম্ভের রূপ নিয়েছে। সাহিত্য প্রেমীরা বলছেন, গোটা দেশের এবং বিদেশের কবি সাহিত্যিকদের এমন সম্মেলন, আর এমন আয়োজন এর আগে ত্রিপুরায় কেউ কখনো দেখেননি।

উৎসবের তৃতীয় দিনে বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হিন্দি সাহিত্যের দিকপাল সাহিত্যিক অরুণ কমল, রাজ্যের শক্তিমান কবি অশোক দেব, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত বিশিষ্ট কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডক্টর অনির্বাণ গাঙ্গুলী ও ভীষ্মদেব স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ী গল্পকার পারিজাত দত্তের উপস্থিতিতে। তাঁদের আলোচনায় সাহিত্যপ্রেমী দর্শক-শ্রোতারা বারবার মুগ্ধ হন।
এরপর ‘বাংলা সাহিত্যের সেকাল-একাল’ বিষয়ক আলোচনায় মঞ্চে আসেন দেশবরেণ্য চিকিৎসক ও সাহিত্যিক ডক্টর কুনাল সরকার। তাঁর বক্তব্যে দর্শক-শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনেন বাংলা সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ। অনুষ্ঠান এগিয়ে চলার সাথে সাথে, হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে মঞ্চে, এবং দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি জয় গোস্বামীকে। তাঁকে উড়ান ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের পক্ষ থেকে বরণ করে নেন সংগঠনের সভাপতি ডঃ সুমন্ত চক্রবর্তী, সম্পাদক ডঃ রণবীর রায়, সহ-সভাপতি সুভাশিষ কর, বিপুল ভৌমিক, যুগ্ম সম্পাদক শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য, প্রসেনজিৎ সাহা, বাসুদেব রায় ও অন্যান্য সদস্যরা।

জয় গোস্বামী বলেন, ‘উড়ান’ এবার ত্রিপুরার সাহিত্যচর্চায় এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ উৎসব শুধু আয়োজনের গুণে নয়, নান্দনিকতায়ও এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। তাঁর মতে, এ আয়োজনের রূপ ও পরিবেশ জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের অনুভূতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। উৎসবের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বীরভূম থেকে আগত বহুরূপী সংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা। তাঁরা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে অতিথি, অভ্যাগত ও রাজ্যের সাহিত্যিকদের নান্দনিক সৃষ্টির মাধ্যমে বরণ করেন। এই আয়োজন যেন এক মায়াজাল সৃষ্টি করে সবার মনে।

সন্ধ্যার সময় কবি জয় গোস্বামীর কবিতা পাঠ ও আলোচনায় রবীন্দ্র ভবন এক স্বপ্নিল আবহে মোড়া পড়ে। দর্শক-শ্রোতারা যেন শব্দ ও কবিতার মায়াজালে হারিয়ে যান। তার পরেই মঞ্চে আসেন সদ্য জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল মাতিয়ে ফেরা রাজু বাউল ও তাঁর দল। তাঁদের পরিবেশনায় ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের তৃতীয় সন্ধ্যায় এক অন্য মাত্রা যোগ হয়। গোটা প্রেক্ষাগৃহ উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। এমন আয়োজন ত্রিপুরার সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল বলে মনে করেন দর্শক-শ্রোতারা। কবি জয় গোস্বামী নিজেও স্বীকার করলেন, এত উচ্চস্তরের ভাবনা ও পরিকল্পনা ছাড়া এমন এক সাহিত্য উৎসব আয়োজন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, উড়ান আয়োজিত ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল যেন এভাবেই বছরের পর বছর তার বিজয় ধ্বজা উড়িয়ে চলতে থাকে। প্রতিবছর এই ভাষার মাসে ত্রিপুরা গোটা দেশের সাহিত্যাঙ্গনের বাস স্টপ হোক, এটাই চান জয় গোস্বামী থেকে শুরু করে কুনাল সরকার এমনকি এ রাজ্যের কবি সাহিত্যেরাও। উড়ান পরিবারের সদস্যরাও কথা দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সহযোগিতা সহ বেসরকারি স্তরে যে সাহায্য সহযোগিতার দরদী হাত এবার বাড়িয়ে দিয়েছেন সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আগামী দিনে তাদের সহযোগিতা পেলে নিশ্চয়ই আয়োজিত হবে এ এমন ভাবনার আয়োজন। চলতে থাকবে ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল দ্বিতীয় তৃতীয় করে আগামী পথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *