গুয়াহাটি, ১৯ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : নিৰ্ধারিত বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে আলোচনার দাবিকে কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধীদের মধ্যে প্রচণ্ড বাকবিতণ্ডা ও হই-হট্টগোলের ফলে সৃষ্ট চরম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ তিন-তিনবার অসম বিধানসভা অধিবেশন মুলতবি রাখতে বাধ্য হয়েছেন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি।
রাজধানীর বাইরে গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কোকরাঝাড়ে বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনের কার্যসূচির পর আজ বুধবার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন। দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে বিরোধীরা চারটি মুলতবি প্রস্তাব চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রেজারি বেঞ্চ কংগ্রেস আমলে ‘আসাম পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ (এপিএসসি)-এ সংগঠিত ‘ক্যাশ ফর জব’ কেলেংকারির তদন্তে ন্যায়াধীশ (অবসরপ্রাপ্ত) বিপ্লব কুমার শর্মা কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টর ওপর আলোচনা চায়।
মুলতবি প্রস্তাবগুলির মধ্যে কংগ্রেসের উমরাংসোতে কয়লা খনি ট্র্যাজেডি, সিপিআই (এম)-এর কয়লা এবং অন্যান্য সিন্ডিকেট, এআইইউডিএফ-এর ডিটেনশন ক্যাম্পে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর কথিত নির্যাতন এবং নির্দলীয় বিধায়ক অখিল গগৈয়ের এপিএসসি-তে টাকার বিনিময়ে চাকরি কেলেংকারি।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষ হাউজের ওয়েলে নেমে তাঁদের দাবি আদায়ে হই-হট্টগোল সৃষ্টি করে। বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট স্লোগান তুলে স্পিকারের কাছে এপিএসসি কেলেংকারিতে ন্যায়াধীশ (অবসরপ্রাপ্ত) বিপ্লব কুমার শর্মাকে নিয়ে গঠিত এক সদস্যের কমিশনের রিপোর্টের ওপর আলোচনার অনুমতি দিতে ওয়েলে নেমে হাততালি দিতে থাকেন।
এদিকে সব বিরোধী দল স্পিকারকে তাঁদের চারটি নোটিশ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছিল। ডিটেনশন ক্যাম্পে বিদেশির নামে ভারতীয় নাগরিকদের নিৰ্যাতন করা হচ্ছে বলে এআইইউডিএফ-এর বিধায়করা হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি পাঁচটি দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আপনারা অন্য সময় এ সব প্রসঙ্গ তুলতে পারেন। অনুগ্রহ করে নিজেদের আসনে যান। নিজেদের আসন থেকে বিষয়টি উত্থাপন করুন।’ কেউ তাঁর অনুরোধ না মেনে ওয়েলে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন বাধ্য হয়ে ১০ মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতবি করেন অধ্যক্ষ দৈমারি।
দশ মিনিট পর হাউজ পুনরায় শুরু হলে আবার শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। দ্বিতীয়বারের অধিবেশনে পূর্বাবস্থা চলতে থাকে।
চলমান বিশৃঙ্খলার মধ্যে অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি বলেন, ‘রাজ্যপালের ভাষণের ওপর আমাদের আলোচনা আছে। আজ আর কোনও আলোচনার সুযোগ নেই। এখন জিরো আওয়ার, তাই অনুগ্রহ করে হাউজকে কাজ করতে দিন।’
তাঁর আবেদনে কেউ কর্ণপাত না করায় দ্বিতীয়বার ১০ মিনিটের জন্য হাউজ মুলতবি করেন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি। আবার হাউজে আসেন শাসক-বিরোধী বিধায়করা। হাউজে ঢুকেই একইভাবে ওয়েলে নেমে শোরগোল তুলে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেন শাসক ও বিরোধীরা। তখন তৃতীয়বারের মতো হাউজ ২০ মিনিটের জন্য মুলতবি করেন অধ্যক্ষ।
বিধানসভা আবার শুরু হয়। শুরু হয় হই-হট্টগোল। তখন সদনে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি নিজের আসনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘সরকার চারটি বিষয়েই আলোচনা করতে প্রস্তুত। বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই৷ এই বাজেট অধিবেশন এক মাস চলবে৷ তাই আমি স্পিকারকে (তখন অধ্যক্ষের আসনে ছিলেন উপাধ্যক্ষ ডা. নোমল মোমিন) অনুরোধ করছি, যে কোনও দিন এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সময় নিৰ্দিষ্ট করুন।’
এদিকে শিবসাগরের বিধায়ক (নির্দলীয়) অখিল গগৈ প্ৰত্যেক বিষয়ে অনুশাসন ভঙ্গ করে নিজের মতো বক্তব্য পেশ করছেন, তাই প্ৰয়োজনে অখিল গগৈকে ১০ মিনিট অথবা সম্ভব হলে এক ঘণ্টা বলার সুযোগ দেওয়া দরকার বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. শর্মা।
মুখ্যমন্রীকটর বক্তব্যের পর উভয়পক্ষ শান্ত হলে হাউজে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলে।