নয়াদিল্লি, ২০২৫: ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বায় রূপান্তরণমূলক বিপ্লবের সাক্ষী থাকছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্ব। ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি সহজসাধ্য খরচে কম্পিউটার সংক্রান্ত সক্ষমতা , জিপিইউসমূহ এবং গবেষণার সুযোগ সহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার বাস্তুব্যবস্থাকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
মোদি সরকার নিশ্চিত করেছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা শুধুমাত্র বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কয়েকজনের জন্য নয় এবং বড় প্রযুক্তি সংস্থা এবং বিশ্বব্যাপী দানবীয় আধিপত্যের লোকদের জন্য নয়। যুগান্তকারী নীতির মাধ্যমে, মোদি সরকার ছাত্র, স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবকদের বিশ্ব-মানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার পরিকাঠামো সহজলভ্য করতে পেরেছে, সত্যিকারের সমান একটি সক্রিয়তার পরিসর তৈরি করছে। ইন্ডিয়াএআই মিশন হোক বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার জন্য সেন্টার অফ এক্সেলেন্স বা উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, এক্ষেত্রে দেশে বাস্তুব্যবস্থার উন্নতি করতেই মোদি সরকারের এই সমস্ত উদ্যোগ।
ভারতকে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার শীর্ষস্থানীয় অবস্থায় নিয়ে যেতে মোদি সরকার কি করছে তাতে নজর দেওয়া যাক।
ভারতের এ আই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মিশন : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা সহজলভ্যকরনের অগ্রযাত্রা
ভারতের এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার বাস্তুব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ২০২৪-এ মোদি সরকারের ১০,৩০০কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের ইন্ডিয়াএআই মিশন বা ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার অভিযাত্রাকে অনুমোদন প্রদান। আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্ধারিত এই তহবিলে একে সফল করতে বিভিন্ন উপাদানকে অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগানোর প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
একটি হাই-এন্ড বা উচ্চ প্রান্তিক সাধারণ কম্পিউটিং সুবিধায় ইন্ডিয়া এআই মিশন এখন ভারতীয় ভাষা ব্যবহার করে ভারতীয় প্রেক্ষাপটের জন্য দেশীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা বা এ আই সমাধান প্রায় পরিমার্জিত স্তরে পৌঁছে গেছে। এ আই মডেলটি মোটামুটি ১০০০০ জিপিইউ গণনার সুবিধা দিয়ে শুরু হচ্ছে। শীঘ্রই অবশিষ্ট ৮৬৯৩ জিপিইউ যোগ করা হবে।
জিপিইউ পরিকাঠামো এবং উন্মুক্ত জিপিইউ বাজার :
ইন্ডিয়া এ আই মিশন সূচনার দশমাসের মধ্যে এর নোডাল বা দায়বদ্ধ কেন্দ্রীয় মন্ত্রক অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি প্রায় ১৮,৬৯৩টি গ্রাফিক প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, জিপিইউ সহ একটি উচ্চপ্রান্তীয় ও শক্তিশালী সাধারণ কম্পিউটিং সুবিধাও তৈরি করেছে। আর তা ওপেন সোর্স মডেল ডিপসিকের প্রায় নয় গুণ এবং চ্যাটজিপিটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মোদী সরকার ভারতের জিপিইউ মার্কেটপ্লেস বা বাজার খোলার পথপ্রদর্শক এবং এই সরকারই প্রথম, যারা ভারতে জিপিইউ বাজার খুলেছে, যার ফলে ছোট স্টার্টআপ, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের উচ্চ-কার্যক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং সংস্থা সহজলভ্য করার সুযোগ করে দিয়েছে, যেখানে বড় দেশগুলিতে এ আই বাজার প্রায়শই বৃহৎ শিল্পোদ্য়োগ সংস্থার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়।
মোদী সরকার আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ আই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা কার্যকর করার জন্য ১৮,০০০ উচ্চমানের জিপিইউ -ভিত্তিক কম্পিউট সুবিধা প্রদান করবে এবং এর মধ্যে ১০,০০০ ইতিমধ্যেই উপলব্ধ। সরকার ১০টি কোম্পানিকেও নির্বাচন করেছে যারা ১৮,৬৯৩টি জিপিইউ সরবরাহ করবে।
উপরন্তু, ভারত আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে নিজস্ব গ্রাফিক্স প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (জিপিইউ) তৈরি করবে এবং আগামী ১০ মাসের মধ্যে একটি দেশীয় মৌলিক এ আই প্ল্যাটফর্ম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার মঞ্চের প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
সরকার শীঘ্রই একটি সাধারণ কম্পিউটিং সুবিধা চালু করবে যেখানে স্টার্টআপ এবং গবেষকরা কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। বিশ্বব্যাপী জিপিইউ সহজলভ্যতার খরচ প্রতি ঘন্টায় প্রায় আড়াই থেকে তিন ডলার হলেও, মোদী সরকার প্রতি ঘন্টায় মাত্র ১ ডলারে তা সহজলভ্য করবে। গবেষক, স্টার্টআপ, শিক্ষাবিদ, কলেজ, আইআইটি, সকলেই এই কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করতে পারবেন এবং তারা মৌলিক মডেল শুরু করতে পারবেন।
ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা তথ্য সংস্থাপন মঞ্চ : উন্মুক্ত তথ্য ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা উদ্ভাবন সক্ষমতা
তথ্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জ্বালানি, এবং সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্যময় এবং পরিত্যক্ত তথ্য সংস্থাপন, এমনকি সবচেয়ে দক্ষ তথ্য বিজ্ঞানী এবং বিকাশকারীরাও সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হন। সেটা মাথায় রেখেই, মোদী সরকার বৃহত্তর গবেষক গোষ্ঠীর জন্য উন্মুক্ত তথ্য সংস্থাপকসমূহ সহজলভ্য করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ইন্ডিয়াএআই বা ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা তথ্য সংস্থাপনের মাধ্যমে সরকার উচ্চমানের, ব্যক্তিগত নয় এমন তথ্য সংস্থাপনার বিষয়কে সহজতর করার লক্ষ্যে কাজ করছে, একটি সমন্বিত তথ্য সংক্রান্ত মঞ্চ তৈরি করছে যা ভারতীয় স্টার্টআপ এবং গবেষকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সহজলভ্যতা সক্ষম করবে, এআই-চালিত উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করবে। এই এআই তথ্য সংস্থাপনা মঞ্চে বেনামী তথ্যের বৃহত্তম সংগ্রহ থাকবে যা উদ্ভাবনকে পরিচালিত করবে এবং এআই অ্যাপ্লিকেশন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার প্রয়োগগত ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন
নয়াদিল্লিতে স্বাস্থ্যসেবা , কৃষি এবং সুস্থায়ী নগর ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩-এ মোদি সরকার তিনটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার উৎকর্ষ কেন্দ্র (সি ও ই) স্থাপনের কথা ঘোষণা করেছিলো। ২০২৫ এর প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০০ কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দ ধরে শিক্ষার জন্যও নতুন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা ছিলো। আর সেটি ছিলো, দেশের মধ্যে চতুর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা।
সরকার ৫টি জাতীয় দক্ষতা কেন্দ্রের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে, যা যুবসমাজকে শিল্প-প্রাসঙ্গিক দক্ষতায় সজ্জিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মেক ফর ইন্ডিয়া, মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড বা ভারতের জন্য তৈরী করুন, বিশ্বের জন্যও তৈরী করুন এই ভাবনায় উৎপাদনের প্রয়াসকে সমর্থন করার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই কেন্দ্রগুলি স্থাপন করা হবে।
ভারতের ভিত্তিগত বৃহৎ ভাষার মডেল
ভারত কেবল একটি শক্তিশালী এ আই বাস্তুব্যবস্থা তৈরি করছে না বরং ইতিমধ্যেই মৌলিক এ আই মডেল তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার নিশ্চিত করেছে যে ভারতের এ আই অগ্রগতি দেশীয়। ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা প্রস্তাব আহ্বানের মাধ্যমে এল এল এম এবং এস এল এম সহ দেশীয় মৌলিক এ আই মডেলগুলি বিকাশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ শুরু করেছে।
অসাধারণ সাফল্যগুলির মধ্যে একটি হল ডিজিটাল ইন্ডিয়া ভাষিনী, ভারতের এআই-নেতৃত্বাধীন ভাষা অনুবাদ প্ল্যাটফর্ম যা ভারতীয় ভাষায় ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলিতে সহজ অ্যাক্সেস সক্ষম করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে ভয়েস-ভিত্তিক অ্যাক্সেসও রয়েছে এবং ভারতীয় ভাষায় সামগ্রী তৈরিতে সহায়তা করে।
ভারতজেন বিশ্বের প্রথম সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত মাল্টিমডাল এলএলএম উদ্যোগ। ভারতজেন, একটি জেনারেটিভ এআই, যা ২০২৪ সালে দিল্লিতে ভারতে চালু হয়েছিল। ভাষা, বক্তৃতা এবং কম্পিউটার দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক মডেলগুলির একটি স্যুট তৈরি করে জনসাধারণের পরিষেবা প্রদানে বিপ্লব ঘটাতে এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য এই উদ্যোগটি তৈরি করা হয়েছে। ভারতজেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শীর্ষস্থানীয় এআই গবেষকদের একটি কনসোর্টিয়াম অন্তর্ভুক্ত করে।
সর্বম-১ এআই মডেল, এই উদ্ভাবনী বৃহৎ ভাষার মডেলটি ভারতীয় ভাষাগুলির জন্য স্পষ্টভাবে অপ্টিমাইজ করা হয়েছে, যা এআই ভূদৃশ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবধান পূরণ করে। সর্বম-১, ২ বিলিয়ন প্যারামিটার নিয়ে গর্বিত, দশটি প্রধান ভারতীয় ভাষাকে সমর্থন করে, যা ভাষা অনুবাদ, পাঠ্য সারসংক্ষেপ এবং বিষয়বস্তু তৈরির মতো বিভিন্ন প্রায়োগিকতায় বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা তুলে ধরে।
চিত্রলেখা হল এ আই ফর ভারতের তৈরি একটি ওপেন-সোর্স ভিডিও ট্রান্সক্রিপশন প্ল্যাটফর্ম। উন্নত এ আই মডেলগুলি ব্যবহার করে, চিত্রলেখা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অডিও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি এবং সম্পাদনা করার ক্ষমতা দেয় অনায়াসে। প্ল্যাটফর্মের ওপেন-সোর্স প্রকৃতি সম্প্রদায়ের অবদানকে উৎসাহিত করে এবং এ আই -চালিত ভিডিও প্রক্রিয়াকরণে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে।
এস এম এল -এর হনুমান এভারেস্ট প্রথম পর্যায়ের উন্মোচন হয়েছে, যা একটি বহুমুখী বহুভাষিক এ আই পদ্ধতি, যা হিন্দি, বাংলা, তামিল এবং তেলুগু সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার জন্য সাজানো হয়েছে। এই পদ্ধতি বর্তমানে ৩৫টি ভাষা সহজলভ্য এবং শীঘ্রই এর ভাষা ক্ষমতা ৯০টিতে সম্প্রসারিত করার জন্য প্রস্তুত।
ভারত বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিভা এবং দক্ষতা প্রবেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে
এআই ট্যালেন্ট পাইপলাইন এবং এআই শিক্ষা মেট্রো শহর ছাড়িয়ে গেছে
ইন্ডিয়াএআই ফিউচার স্কিলস উদ্যোগের অধীনে, স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামগুলিতে এআই কোর্সগুলি সম্প্রসারিত করা হবে। এছাড়াও, শীর্ষ ৫০টি এনআইআরএফ-র্যাঙ্কড গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এআই নিয়ে গবেষণা করা পূর্ণকালীন পিএইচডি প্রাপ্তদের ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে।
এ আই শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য, সরকার টায়ার টু এবং টায়ার থ্রী শহরগুলিতে ডেটা এবং এ আই ল্যাব স্থাপন করছে। এই ল্যাবগুলি বৃহত্তর জনসংখ্যার জন্য মৌলিক এ আই কোর্সের সুযোগ দেবে। দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (এন আই ই এল আইটি ) -এ ইতিমধ্যেই একটি মডেল ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা তথ্য গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা দক্ষতা অনুপ্রবেশে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে
স্ট্যানফোর্ড এআই সূচক ২০২৪ অনুসারে, ভারত এআই দক্ষতা অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানে রয়েছে। এআই দক্ষতা অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ভারত ২.৮ স্কোর নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রথম স্থানে রয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২.২) এবং জার্মানি (১.৯)কে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সাল থেকে দেশটি এআই প্রতিভা কেন্দ্রীকরণে ২৬৩% উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে, যা এআইতে একটি প্রধান বৈশ্বিক খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মহিলাদের জন্য AI দক্ষতা অনুপ্রবেশের হার ১.৭ নিয়ে ভারত শীর্ষে, তারপরেই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১.২) এবং ইজরায়েল (০.৯)। এই সাফল্য এ আই দক্ষতা উন্নয়নে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য ভারতের চলমান প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে।
এআই উদ্ভাবনে উপস্থিতি বাড়ছে
উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ভারতীয় যুবসমাজ সেরাদের মধ্যে অন্যতম। ভারত বিশ্বব্যাপী দ্রুততম বর্ধনশীল ডেভেলপার জনসংখ্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, জি আই টি হাবে -এ জন সঞ্চারণ বা পাবলিক জেনারেটিভ এ আই প্রকল্পগুলিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার জন্য একটি উদ্ভাবনী কেন্দ্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে, বিশ্বের এ আই প্রতিভার ১৬% হাব বা আবাসস্থল এবং এ আই দক্ষতা দ্রুত গ্রহণের চিত্র রয়েছে।
ভারত শীর্ষ ৫টি দ্রুত বর্ধনশীলএ আই প্রতিভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে
হুইবক্সের “ইন্ডিয়া স্কিলস রিপোর্ট ২০২৪” ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ভারতের এআই শিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে ২৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, যার সি এ জি আর ৪৫%। এছাড়াও, ভারতে এআই-দক্ষ কর্মী সংখ্যা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং কানাডার পাশাপাশি ভারত শীর্ষ পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল এআই প্রতিভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ভারতে এআই পেশাদারদের চাহিদা প্রায় ১০ লক্ষে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে ভারতের জেন ইকোসিস্টেম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে
২০২৪ সালের নভেম্বরে এন এ এসএস সি ও এম -এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও ভারতের জেনারেটিভ বা সঞ্চারণমূলক এআই বাস্তুব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারতীয় জেনারেটরি এআই স্টার্টআপ তহবিল প্রায় ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ত্রৈমাসিকের তুলনায় ৬ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিল বিটুবি এবং এজেন্টিক এআই স্টার্টআপগুলি। পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ক্ষেত্রে থেকে স্কেলেবল, উৎপাদন-প্রস্তুত সমাধানে ভারতীয় জেনারেটরি এআই বাস্তুব্যবস্থার বিবর্তন এর ক্রমবর্ধমান পরিপক্কতায় প্রতিফলিত হয়।
ভারত এআই গ্রহণেও শীর্ষ স্থানে আছে
বিসিজি-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত এ আই গ্রহণে এগিয়ে রয়েছে, যেখানে ৮০% কোম্পানি এ আইকে একটি মূল কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা বিশ্বব্যাপী গড়ে ৭৫% ছাড়িয়ে গেছে। এটি প্রকাশ করেছে যে ৬৯% ভারতীয় কোম্পানি ২০২৫-এ তাদের প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানি এ আই-র উদ্যোগে ২৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বরাদ্দ করবে। এটি একটি ব্যাপক ডিজিটাল রূপান্তর এজেন্ডার দিকে দেশের অভিযানকে প্রতিফলিত করে।
র্যান্ডস্ট্যাড এআই অ্যান্ড ইক্যুইটি রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, ভারতে কর্মক্ষেত্রে এআই দ্রুত প্রবেশ করেছে, ২০২৪ সালে প্রতি ১০ জনে সাতজন কর্মচারী কর্মক্ষেত্রে কোনও না কোনও ধরনের এআই ব্যবহার করেছেন, যা এক বছর আগে প্রতি ১০ জনে ৫ জন ছিল।
ভারতীয় এআই প্রতিনিয়ত উত্থান
স্বায়ত্তশাসিত এজেন্টের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা -চালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা (এস এম বি)গুলি মাত্রাবৃদ্ধির দক্ষ উপায়গুলি আবিষ্কার করছে, ব্যক্তিগতকৃত গ্রাহক অভিজ্ঞতা প্রদান করছে এবং ব্যাক-অফিস কার্যক্রমকে অপ্টিমাইজ করছে। ‘সেলসফোর্স’-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে এ আই ব্যবহারকারী ৭৮% ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় রাজস্ব বৃদ্ধির কথা জানা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯৩% ক্ষুদ্র ও মাঝারি ভারতীয় ব্যবসায়ী বলেছেন যে, এ আই রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
ভারতে এআই বাজারের অগ্রগতি
বিসিজি-এন এ এস এস সি ও এম রিপোর্ট -২০২৪ অনুসারে, ভারতের এ আই বাজারের দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ আই বাজার উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনার উপর জোর দিতে গিয়ে ২৫-৩৫% সি এ জি আর হার বাড়বে। এ আই নিয়মিত কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করে তুললেও, এটি তথ্য বিজ্ঞান বা ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং এবং এআই পরিচালিত অ্যাপ্লিকেশন বা প্রয়োগগুলিতে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করে।
অ্যাক্সেলারেটরের ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্ক
ভারতে ৫২০-র বেশি টেক ইনকিউবেটর এবং অ্যাক্সেলারেটর রয়েছে। ভারতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সংখ্যক সক্রিয় কর্মসূচি রয়েছে, গত পাঁচ বছরে ৪২% কর্মসূচি ভারতীয় স্টার্টআপগুলির চাহিদা পূরণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে।
টি-হাব ম্যাথের মতো অ্যাক্সেলারেটরগুলি এআই স্টার্টআপগুলিকে পণ্য উন্নয়ন, ব্যবসায়িক কৌশল এবং স্কেলিং সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের প্রথম মাসগুলিতে, ম্যাথের অধীনে ৬০টিরও বেশি স্টার্টআপ ছিল এবং তাদের মধ্যে পাঁচটি তহবিল আলোচনার অধীনে রয়েছে।