যেকোন অনভিপ্রেত ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয় সরকার: মুখ্যমন্ত্রী
আগরতলা, ১১ ফেব্রুয়ারি: বিপর্যয়ের সময়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এই লক্ষ্যেই কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, যেকোনো অনভিপ্রেত ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে পশ্চিম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ও অভয় মিশন কর্তৃক আয়োজিত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা অভয় মিশনের কাজকর্ম সম্পর্কে প্রশংসা করেন। ১৯৮৮ থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে অভয় মিশন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ এর আগস্ট মাসে যে বন্যা পরিস্থিতি রাজ্যে তৈরি হয়েছিল তা রাজ্যবাসী আগে দেখেনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯ আগষ্ট দিল্লী থেকে ফিরে তিনি মুখ্যসচিব সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। সকলের সঙ্গে কথা বলে আমাদের কি করণীয় তা নির্ধারণ করেন। বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য অফিসার থেকে শুরু করে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিপর্যয়ের সময়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সংগঠনগুলিও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছে। এজন্য সরকার ও ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, অভয় মিশন ও তার সহযোগী সংস্থা বন্যা দুর্গত প্রায় ৫,৬০০ পরিবারকে সহায়তা করেছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারও যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছে। এয়ারফোর্স, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ সহ বিভিন্ন সংস্থা ও সবাই মিলে বন্যা মোকাবিলায় কাজ করেছে। আর এই বিপদের সময় সবাই মিলে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সহায়তা প্রদান করেছেন। এটা আগামীদিনেও একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী, পেনশনার, ব্যবসায়ী, ক্লাব, সামাজিক সংস্থা সংগঠন সহ সকল স্তরের মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বন্যার সময়ে রাজ্যের ১২টি নদীর মধ্যে জুরি নদী বাদ দিয়ে বাকি সবগুলি নদীই বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এরমধ্যে ৬টি নদীতে জলস্তর চূড়ান্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল। রাজ্যের ৮টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোমতী, দক্ষিণ ও সিপাহীজলা জেলা। অন্যান্য জেলাগুলিতেও কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। এই বন্যায় প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এরমধ্যে প্রায় চার লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং বন্যার সময় ৮৮৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। আর সেখানে প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বিপর্যয়ে প্রায় ৩৮ জন মানুষকে আমরা হারিয়েছি। ৫৮,৬৮৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যে এই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা। আমরা এবিষয়ে দিল্লিকে অবহিত করি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলি। আমরা আমাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার অনুরোধ জানাই। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদল রাজ্যে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে। দিল্লি আমাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিপর্যয় মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল ও বাজেট থেকে প্রায় ৫৬৪ কোটি আর্থিক বরাদ্দ করা হয়। আমাদের সরকার বিপর্যয় মোকাবিলায় দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।
তিনি বলেন, মণিপুরে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমাদের প্রায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী আটকে পড়েছিল। তাদের অভিভাবকরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। এরপরই আমি কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে দিই এবং তাদের অক্ষত অবস্থায় রাজ্যে ফিরিয়ে আনার বন্দোবস্ত করি। এটাও ছিল একটা দুর্যোগের মতোই।
মানুষের সমস্যা হলে পাশে থেকে হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিপদের সময় মানুষের কাছে পৌঁছা এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। উদাহরণ হিসেবে কুমারঘাট রথযাত্রা মেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু, গন্ডাতুইসার অনভিপ্রেত ঘটনা, কুর্তি কদমতলার ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। যেকোন অনভিপ্রেত ঘটনায় আমরা দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। যেটা আগে করা হতো না।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে বর্তমান সরকার। সারা দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। বিপর্যয় মোকাবিলায় অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকেও আরো এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না। ত্রিপুরা এখন সব বিষয়ে পারফর্মার স্টেট হিসেবে রয়েছে। রাজ্যে শিল্প স্থাপনের আগ্রহ নিয়ে বাইরে থেকে এখন বিনিয়োগকারীরা আসছেন। প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। ত্রিপুরার উপর মানুষের আস্থা বাড়ছে। আগামীদিনে বেকারদেরও কর্মসংস্থান হবে।
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ড. বিশাল কুমার, সদর মহকুমা শাসক মানিক লাল দাস সহ আয়োজক সংগঠনের কর্মকর্তা ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।