সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সফল ক্রিকেটার হতে চায় ছোট্ট সন্দীপ

নিজস্ব প্রতিনিধি, কল্যাণপুর, ৯ ফেব্রুয়ারী:
একজন বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব বলেছিলেন যা ঘটছে সেটা বাস্তব নয়। যা ঘটা উচিৎ সেটাই বাস্তব। কল্যাণপুরের একটি ঘটনার সাথে যেন কথাগুলো মিলে যায় এক বিশেষভাবে সক্ষম স্কুলছাত্রকে কেন্দ্র করে। সময় যখন হটাৎ থমকে দাঁড়ায় তখন এই বিশেষভাবে সক্ষমরাই অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চমকে দেয়। এমনই এক উদাহরণ কল্যাণপুরের পূর্ব কুঞ্জবন গ্রাম পঞ্চায়েত এর মোকামবাড়ীর ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়া সন্দীপ শীল।

ক্রিকেট খেলা নিয়ে তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। একদিন সে বড় ক্রিকেটার হবে সেই আশায় বুক বেঁধে সে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি। জন্মের পর থেকেই তার একটি পা এবং বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল নেই। সন্দীপ কুঞ্জবন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। তার মা রীনা রানী শীল প্রতিবেদককে জানালেন সন্দীপের বয়স যখন আড়াই বছর তখন তার একটি কৃত্রিম পা লাগানো হয়। সেই কৃত্রিম পা নিয়েই এই ছোট বয়সে সে ক্রিকেট খেলায় বিশেষ পারদর্শী হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট খেলায় কল্যাণপুরে সবার নজর কেড়েছে সন্দীপ।

সন্দীপের তিন বছর বয়সের একটি ছোট বোন আছে। তার বাবা শ্যামল শীল গত সাত আট বছর ধরে অসুস্থ। সন্দীপের মা জানালেন রাজ্যের বাইরে ও শ্যামল বাবু কে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু রোগ ধরা ও পরেনি আর তিনি সুস্থও হননি। দিনকয়েক বাদে বাদেই শ্যামলবাবুর জ্বর আসে। ফলে তিনি কোন কাজ কর্ম করতে পারেন না। সংসার এর জোয়াল বইছেন সন্দীপের মা রীনা রানী শীল। তিনি পশুপালন দপ্তরে গ্ৰুপ ডি এর কাজ করেন বড় ময়দানে। সন্দীপের মা জানালেন স্বামীর চিকিৎসার পেছনে বহু টাকা খরচ হয়েছে। ডাক্তার এর পর ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সন্দীপের স্বপ্নের দিকে তাকানোর ফুরসৎ ই হয়নি পরিবার এর।

কিন্তু এরপরেও সন্দীপ ক্রিকেটকে ধ্রুবতারা করে ময়দানে এগিয়ে গেছে। সন্দীপের এই কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে কল্যাণপুর এর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক হিমেন্দু বিকাশ পাল সন্দীপকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট বল হেলমেট প্রদান করেন নিজের মাইনে থেকে। অদম্য ইচ্ছে শক্তি আসলে কোন কিছু কেই আটকে রাখতে পারে না।

সন্দীপের অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর স্বপ্নের কাছে হার মেনেছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। সে মাঠে ছুটবেই। মারবেই ছয় চার। পড়াশোনার পাশাপাশি অঙ্কুরিত করবে ক্রিকেট নিয়ে তার সুপ্ত বা উজ্জ্বল আশাকে। তার স্বপ্নকে স্বীকৃতি দিয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী টিঙ্কু রায় এবং কল্যাণপুরের বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী ও। খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এর মাঠে মন্ত্রী এবং বিধায়ক সন্দীপকে সংবর্ধনা জানিয়ে খেলার সামগ্রী প্রদান করেন। সন্দীপের মা রীনা রানী শীল জানান এই খেলার জিনিস পেয়ে সন্দীপের খুশির যেনো শেষ নেই। সারাক্ষন সে তার নুতন ব্যাট বল নিয়েই মেতে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *