প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির জন্য ত্রিপুরায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতা, ২২ জানুয়ারি : ত্রিপুরায় অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে রাজ্য সরকার। বিগত ১০ বছরে জিএসডিপি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মাথাপিছু আয়ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির জন্য। বুধবার কলকাতা ন্যাশনাল লাইব্রেরীর ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ভাষা ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচিত বক্তব্যের উপর লিখিত বইয়ের উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বিগত নির্বাচনের প্রাক সময়েও আমি এখানে এসেছি। যদিও আমাদের প্রত্যাশিত ফলাফল আসেনি। তবে আমি নিশ্চিত আগামীদিনে পশ্চিমবাংলায় পরিবর্তন আসবে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বারবার বলছেন উত্তর পূর্বাঞ্চল যদি উন্নত না হয় তবে ভারতও উন্নত হবে না। প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন লুক ইস্ট পলিসি। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলছেন অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি। তাই যেরকম কথা সেরকম কাজ। ১০ বছর আগে যারা ত্রিপুরায় গিয়েছেন তারা এখন গিয়ে বলেন যে আগরতলায় এমন পরিবর্তন হয়েছে? ত্রিপুরায় এত পরিবর্তন হয়েছে? যা ভাবা যায় না। আর এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য। এখন ত্রিপুরার আগরতলা এবং দক্ষিণ জেলার শেষপ্রান্ত সাব্রুম পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল পরিষেবা চালু হয়েছে। এক্সপ্রেস ট্রেন এখন আগরতলা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে সফর করি। সেই সঙ্গে সড়ক পথেও চলাচল করি। বিগত নির্বাচনে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার সফর করি। যারমধ্যে সড়ক পথে ৮,০০০ এবং ট্রেনে ২,০০০ কিলোমিটার সফর করি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ৬টি জাতীয় সড়ক দিয়েছেন। যা আমরা কোনদিন ভাবতে পারি নি। প্রধানমন্ত্রীর কারনে আমরা শক্তিশালী ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়েছি। যা মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের পরে রয়েছে। ত্রিপুরা এমন একটি রাজ্য যেখানে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পর্যন্ত ই-অফিস চালু হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেটা করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের আগরতলার এমবিবি এয়ারপোর্ট উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সেরা এয়ারপোর্ট। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির জন্য। আর শান্তি সম্প্রীতি না থাকলে কোন জায়গায় উন্নয়ন হবে না। 

অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা বলেন, বইকে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়ার ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে বই লেখকদের যেমন সুবিধা হবে তেমনি বই লেখার ক্ষেত্রে উৎসাহ বাড়বে। আজকের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপর লেখা বইটিও মানুষের কাছে গুরুত্ব পাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বইটি সাধারণ মানুষের কাছে বেশি করে পৌঁছে দিতে হবে। এতে সমাজেরও লাভ হবে। এই বইটি পড়ে মানুষ উৎসাহ পাবেন। বাংলা ভাষায় সংকলন হওয়াতে আরো সুবিধা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত কার্যক্রমের মতো কর্মসূচি পৃথিবীর আর কোথাও কোন রাষ্ট্রপ্রধান করেন কিনা জানা নেই। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। তাই মন কি বাত কার্যক্রমের সংকলন করাও খুবই প্রয়োজন। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় এখন মাথাপিছু আয় ২০২৩ – ২৪ এ ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৭৯ টাকা। যা আগে ছিল ১ লক্ষের নিচে। সেই জায়গায় আমরা মাথাপিছু আয় অনেক বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সিএজিআর (কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট) ১২.৯৩% ত্রিপুরায় হয়েছে। এখন ত্রিপুরায় বিনিয়োগকারীরা আসছেন। কারণ মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। যা গত বছর ছিল পঞ্চম স্থানে। তাই মানুষ ত্রিপুরায় আসছেন। জিএসডিপি ক্ষেত্রে ২০১৩ – ১৪তে ২৫.৫৯ কোটি ছিল। ২০২৩ – ২৪ এ ৮২.৮২ কোটি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন আত্মনির্ভর হতে হবে। আত্মনির্ভর ছাড়া কিছুই হবে না। স্ব সহায়ক গ্রুপ ২০১৮ সালের আগে মাত্র চার থেকে সাড়ে চার হাজার ছিল। আর এখন ৫৬ হাজারের অধিক হয়েছে। ত্রিপুরায় আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে সরকার। 

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে, ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়, বাউল সম্রাট পদ্মশ্রী পূর্ণ দাস বাউল, পদ্মশ্রী প্রীতিকনা গোস্বামী, ড. সৌরভ প্রসাদ ঘোষ, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি মেম্বার ড. অনির্বাণ গাঙ্গুলি, প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং বিদ্বজনেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *