আগরতলা, ৭ জানুয়ারি : রাবারের উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন রাজ্য শিল্প দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সরকারের শিল্প বাণিজ্য দপ্তর, রাবার বোর্ড ও ব্যাংক সব রকমের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন রাজ্যে সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা উন্নয়নে রাবার চাষের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে রাবারের । শ্রী গিত্যে আরো বলেন বোধজং নগর ছাড়াও দক্ষিণ জেলার শান্তির বাজারে আরেকটি রাবার পার্ক করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রাবার বোর্ডের উদ্যোগে আজ আগরতলায় আয়োজিত গ্রোয়ার্স মিট বা উৎপাদক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শ্রী গিত্যে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রী গিত্যে বলেন গত তিন বছরে রাজ্যে তিনটি বড় কোম্পানি রাবার কাঠ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেছে। আগামী দিনে আরও তিনটি বড় কোম্পানি রাবার ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে রাজ্যে আসার প্রস্তাব আছে। তিনি বলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক রাবারকে চাষকে ভিত্তি করে শিল্প উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, রাবার বোর্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তর পূর্বাঞ্চলে আরো দুই লাখ হেক্টর জমিতে রাবার বনায়ন গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে । দেশে এখন রাবারের অনেক বড় বাজার রয়েছে। রাবার উৎপাদনের দিক দিয়ে কেরলের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্পে চালু হওয়ায় অনেকেই রাবার চাষে এগিয়ে এসেছে এবং উৎপাদনে সফল্য লাভ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের রাবার বোর্ডের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এম বসথাগেসন বলেন এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদকদের সুবিধা-অসুবিধা ও তাঁদের মতামত নেওয়া; উভয় পক্ষের মধ্যে মত বিনিময়, এবং রাবারের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া বেশকিছু নতুন প্রকল্পের কথা রাবার উৎপাদকদেরকে জানানো। নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রাবারের রেন গার্ডিং এডুকেশন এলাউন্স ইত্যাদি। এরফলে, বছরে তাঁরা ৩০-৪০ দিন বেশি ট্যাপিং সময় পাবেন। তিনি বলেন সার্বিকভাবে দেশে রাবার চাষের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে বোর্ড। তিনি আরো বলেন রাবার বোর্ড শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজ্য সরকার ধারাবাহিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে। আগামী দিনের গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলে রাবার উৎপাদনে বাড়ানো লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, ত্রিপুরা কেরলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক রাজ্য তো বটেই; এই অঞ্চলের অন্য রাজ্যেও চাষ শুরু হয়েছে । তিনি বলেন, প্রাকৃতিক রাবারের সমগ্র রাবার ভিত্তিক অর্থনীতিতে বড় অবদান রয়েছে। এর সুফল নিতে হবে এই অঞ্চলকেও। তিনি বলেন, উত্তর পূর্বে, ত্রিপুরা ছাড়া অসম ও নাগাল্যান্ডে প্রাকৃতিক রাবার চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে । রাবার চাষ ও শিল্পায়নের দিক থেকে ত্রিপুরা ও অসম অগ্রগামী দিক দেখতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে বোরো রকমের রাবার শিল্পায়ন হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন তা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, রাবারের সার্বিক প্রসারে ২০ শতাংশের উপরে বাজেট বৃদ্ধি করেছে রাবার বোর্ড । ২০২৩ ২৪ অর্থবছরে বোর্ডের বাজেট ছিল যেকজনে ২৬৯ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। এই বাজেট বৃদ্ধির কারণ প্রাকৃতিক রাবারের চাষাবাদ, উৎপাদন, গুণমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মকান্ড সম্প্রসারের জন্য। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেন রাবার প্রোডাকশন কমিশনার টি সিজু ,যুগ্ম কমিশনার কে শৈলজা, রাবার বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট অফিসার অরুনাভ মজুমদার, বোর্ড মেম্বার প্রসেনজিৎ বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা একটি নতুন প্রজাতির রাবার চারা তুলে দেন উৎপাদকদের হাতে। অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২৫০ রাবার চাষীদের নিয়ে দেশ ও রাজ্যের রাবার বিশেষজ্ঞরা অভিজ্ঞতার বিনিময় করেন।