আগরতলা, ৪ জানুয়ারি: ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের মধ্যে জোট না হলে এবং সিপিআইএমের কর্মী সমর্থকরা ভোট না দিলে বিরজিত জিততে পারতেন না। বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীর ওই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা এবং বিষোদগার মন্তব্য প্রকাশ্যে করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক বিরজিত সিনহা। তাঁর কথায়, জোট না হলেও জিততাম। কৈলাসহর কেন্দ্র থেকে ছয়বার ভোটে জিতেছি এবং পাঁচবারই সিপিআইএমের প্রার্থীকে হারিয়ে ভোটে জিতেছি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর কৈলাসহ মহকুমা কমিটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রকাশ্য জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী কংগ্রেস দলকে নিয়ে এবং বিধায়ক বিরজিত সিনহাকে নিয়ে আক্রমনাত্মক বক্তব্য রেখেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরজিত সিনহা এর পাল্টা জবাব দিলেন।
ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আয়োজিত কৈলাসহর কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বিরজিত সিনহা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রুদ্রেন্দু ভট্টাচার্য, কৈলাসহর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আশীষ সেনগুপ্ত, দুই কংগ্রেস নেত্রী তথা গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান লক্ষী নম: এবং ফুলবাড়ি কান্দি গ্রামের মহিলা প্রধান।
১৭ ডিসেম্বর দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছিলে, ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের মধ্যে জোট না হলে এবং সিপিআইএমের কর্মী সমর্থকরা ভোট না দিলে বিরজিত জিততে পারতেন না। তাহলে বিধায়কও হতে পারতেন না। এই কথার উত্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক বিরজিত সিনহা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, জোট না হলেও জিততাম। কৈলাসহর কেন্দ্র থেকে ছয়বার ভোটে জিতেছি এবং পাঁচবারই সি.পি.আই.এম দলের প্রার্থীকে হারিয়ে ভোটে জিতেছি। এই পাঁচবারের মধ্যে একবার এক সি.পি.আই.এম দলের মন্ত্রীকে এবং হিন্দু সি.পি.আই.এম নেতাকে এবং দুইবার মুসলিম সি.পি.আই.এম নেতাকে ভোটে হারিয়েছি। সুতরাং হারের কোনো সুযোগ ছিলো না। তাছাড়া রাজ্যে ২০১৮সালে বিজেপি দলের সরকার প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯সালের লোকসভা ভোটে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কৈলাসহর আসনেই কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় দুই হাজার ভোটে লিড নিয়েছিলো। ২০১৯সালে কিন্তু কংগ্রেস সি.পি.আই.এম জোট ছিলো না। ২০২৩সালে জোট হয়েছে আমার ভোট বেড়েছে এটা স্বাভাবিক কিন্তু আমি জোট না হলেও জিততাম। জিতেন বাবু কৈলাসহরে এসে যেভাবে কটুক্তি করেছেন তার তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানান।
বিরজিত সিনহা জানান, জিতেন বাবু সতেরো ডিসেম্বর কৈলাসহরের দলীয় সভায় প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে স্টেজে রেখে দীর্ঘ সময় বক্তব্য রাখায় মানিক সরকার পরবর্তী সময়ে বক্তব্য রাখতে রাজি ছিলেন না। কারন, বেশির ভাগ দলীয় কর্মী সমর্থকরাই চলে গিয়েছিল। আসলে জিতেন বাবুর অহংকার হয়ে গেছে। উনি একজন উপজাতি নেতা। ২০২৩সালের বিধানসভা ভোটে উপজাতি রিজার্ভ আসনে না দাঁড়িয়ে সাব্রুমে সাধারণ আসনে দাঁড়িয়ে দুইশো থেকে আড়াইশো ভোটে জিতেছেন। জিতেন বাবু যেভাবে ত্রিপ্রা মোথা এবং মহারাজ প্রদ্যোত কিশোরের সমালোচনা এবং গালিগালাজ করেন তাতে যদি প্রদ্যোত কিশোর ২০২৩সালের বিধানসভা ভোটে সাব্রুম আসনে ত্রিপ্রা মোথার পক্ষ থেকে প্রার্থী দিতো তাহলে জিতেন বাবু কত হাজার ভোটে হারতেন তা রাজ্যের সবাই জানে। সুতরাং বলতে হয় বলেছেন। কারন, কিছুদিন পূর্বে আগরতলায় প্রেসমিট করে কংগ্রেসকে বিশ্বাসঘাতক বলায় পরবর্তী সময়ে সি.পি.আই.এম দলকে পরগাছা অর্থাৎ স্বর্নলতা বলেছিলাম এবং ঠিকই বলেছিলাম। সি.পি.আই.এম ভারতের কোথাও নেই। শুধু কেরলে আছে তাও লোকসভায় নাই, সামনে ওরা জিরো হয়ে যাবে। ২০২৩সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে সি.পি.আই.এম দল ৪৭টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২৪শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। আর, কংগ্রেস দল ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৩৯শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি দলের সাথে সমানে সমানে লড়াই করে। অন্যদিকে সারা রাজ্যে বিজেপি চল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পরবর্তী সময়ে জোট শরিক আই.পি.এফ.টি দলের এক শতাংশ ভোট যোগ করে একচল্লিশ শতাংশ হয়েছে। যাইহোক, জিতেন বাবু যেভাবে বলেছেন তাতে উনার নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও বিধায়ক বিরজিত সিনহা আরও বিস্ফোরক বলেন যে, সুধীর রঞ্জন মজুমদার রাজ্যের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং রাজ্যসভার ছয় বছরের সাংসদ ছিলেন। উনার বাড়িতে দুজন পুলিশ ছিলো। এছাড়া সুধীর বাবুকে কিছুই দিতে রাজি ছিলো না তৎকালীন সি.পি.আই.এম সরকার। একটি কেরানী অব্দি দিতে চায়নি।
এদিন তিনি আরও বলেন, জিতেন বাবু বলছেন সিপিআইএমের জন্য কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে ভালো রেজাল্ট করেছে। অথচ, সিপিআইএম পঞ্চায়েত ভোটে কৈলাসহরে ৯৯ শতাংশ আসনে প্রার্থীই দিতে পারে নি। সিপিআইএম দশজন বিধায়ক তাদের এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে নমিনেশন জমা দিতে পারেনি। কারন তারা একেবারেই জনভিত্তি হারিয়ে ফেলেছেন। অথচ, বড় বড় কথা বলছে।