গুয়াহাটি, ৩০ ডিসেম্বর (হি.স.) : অসমে এসটিএফ-এর অভিযানে ধরা পড়েছে আরও এক জিহাদি। ধৃত জিহাদি কোকরাঝাড় জেলার অন্তর্গত ভোদিয়াগুড়ির বাসিন্দা গাজি রহমান। ইতিমধ্যে গাজিকে গুয়াহাটি নিয়ে আসা হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত ‘অপারেশন প্রঘাত’-এর বলে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিটিও)-এর ১২ জন জিহাদি তথা মৌলবাদীকে গ্রেফতার করেছে আসাম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
গাজি রহমানকে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন এসটিএফ-প্রধান, আইজিপি ড. পার্থসারথি মহন্ত (আইপিএস)। তিনি জানান, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন প্রঘাত’-এর শীর্ষক চলমান অভিযানে আরেক জিহাদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে আজ সোমবার সকালে কোকরাঝাড় জেলার অন্তর্গত ভোদেয়াগুড়ি থেকে ৩৫ বছর বয়সি গাজি রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জিহাদি সংগঠন আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস) এবং আনসারউল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর সাথে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এসটিএফ-প্রধান ড. পার্থসারথি বলেন, ‘কোকরাঝাড় জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে পলাতক অভিযুক্ত গাজিকে আজ সফলভাবে গ্রেফতার করেছেন তাঁরা। তাকে নিয়ে গুয়াহাটি আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অসমে জিহাদি নেটওয়ার্কের মূল মাথা গাজি। গাজি রহমানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও শিহরণকারী অভিযোগ আছে।’
এদিকে অন্য এক সূত্রের খবর, গাজি রহমানের জিহাদি গ্যাঙ অসমে নির্বাচিত কয়েকজন আরএসএস, বিজেপি এবং শীর্ষ হিন্দু নেতাকে নিকাশ করার ছক কষছিল।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘অপারেশন প্রঘাত’-এর নামে অসমে শুরু হয়েছে মৌলবাদী/জিহাদি মডিউল ভাঙার অভিযান। এরই অঙ্গ হিসেবে গত ১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালা পুলিশের সহায়তায় আসাম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর প্রধান আইপিএস ড. পার্থসারথি মহন্তের নেতৃত্বে একটি সমন্বিত অভিযানে ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন আনসারউল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর এক বাংলাদেশি সহ আট জিহাদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুদিনের অভিযানে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা মহম্মদ সাদ রাদি ওরফে মহম্মদ শাব শেখ (বাংলাদেশি নাগরিক, বৈধ ভ্রমণনথি ছাড়া কেরালায় অবস্থানকারী), পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে মিনারুল শেখ ও মহম্মদ আব্বাস আলি, অসমের কোকরাঝাড় থেকে নুর ইসলাম মণ্ডল, আব্দুল করিম মণ্ডল, মজিবর রহমান ও হামিদুল ইসলাম এবং অসমের ধুবড়ি থেকে এনামুল হক।
তাদের হেফাজত থেকে মৌলবাদী সংক্রান্ত অ্যাপস (ভারতের নির্দিষ্ট করেকটি রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান ইত্যাদি), সিম সহ মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট, ইসলামিক প্রচার সামগ্রী, বাংলাদেশে ইস্যুকৃত পরিচয় নথি, সমালোচনামূলক প্রমাণ সংবলিত পেনড্রাইভ সমেত বেশ কিছু অপরাধমূলক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে এসটিএফ-প্রধান (আইজিপি) আইপিএস ড. পাৰ্থপ্ৰতিম মহন্তের নেতৃত্বে কোকরাঝাড় জেলা পুলিশের সহায়তায় কোকরাঝাড় জেলায় পৃথক দুই অভিযানে দুই জিহাদি আবদুল জাহের শেখ এবং সাব্বির মির্ধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোপন স্থানে মাটির নীচে প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়া তাদের মজুতকৃত প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ, যুদ্ধে ব্যবহারের মতো সামগ্রী এবং আপত্তিজনক নথিপত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন এসটিএফ-এর অভিযানকারীরা।
উদ্ধারকৃত সামগ্রীগুলি যথাক্রমে (১) একে সিরিজের আদলে চারটি হস্তনির্মিত রাইফেল, (২) ৩৪ রাউন্ড সক্রিয় গুলি, (৩) ২৪ রাউন্ড খালি কার্তুজ, (৪) কর্টেক্স সহ এক জোড়া লাইভ আন-প্রাইমড আইইডি, (৫) বিস্ফোরক দিয়ে হাতে তৈরি একটি গ্রেনেড, (৬) কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি ডেটোনেটরের একটি সার্কিট, (৭) ১৪টি ইলেকট্রনিক সুইচ, (৮) আইইডি তৈরির জন্য তিনটি লোহার কেস (২০টি লোহার টুকরো এবং প্লেট দিয়ে সর্বাধিক ক্ষতি/ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়), (৯) ফায়ার ক্র্যাকারে ব্যবহৃত বিস্ফোরক সহ বিপুল সংখ্যক সুইচ ও তার এবং বহু আপত্তিজনক নথিপত্র।
এর পর ২৭ ডিসেম্বর ‘অপারেশন প্রঘাত’-এর বলে ধুবড়ি জেলার বিলাসীপাড়া মহকুমাধীন বান্ধবগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জিহাদি সাহিনুর ইসলামকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে এসটিএফ। সাহিনুরের বসতঘর থেকে পুলিশ ‘নুরিলিজ্জা’ শীৰ্ষক ৮২৯ পৃষ্ঠার উর্দু বই, ৪৭ পৃষ্ঠার হাতে লেখা বই ‘জানা ওয়াহিদ’, একটি আধার কার্ড, পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, একটি মোবাইল ফোন, অন্যান্য নথি সহ বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।