BRAKING NEWS

উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের (এনইসি) ৭২ তম পূর্ণাঙ্গ বৈঠক (প্লেনারি) আগামীকাল শুরু হচ্ছে, সন্ধ্যায় আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী

আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর : উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের (এনইসি) ৭২ তম পূর্ণাঙ্গ বৈঠক (প্লেনারি) আগামীকাল ২০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় শুরু হচ্ছে। প্রত্যাশা বাড়ার সাথে সাথে, এই পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে একাধিক উচ্চ-অংশীদারিত্বের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রাক-পূর্ণাঙ্গ বৈঠক কারিগরি অধিবেশন দিয়ে শুরু হবে এবারের প্লেনারি অধিবেশন। বৈঠকটি ঐতিহাসিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ শহর আগরতলায় হচ্ছে, যে শহর ২০০৮ সালের পর এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এনইসি-র পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন আয়োজন করতে চলেছে। ওই প্লেনারি সেশনে অংশ নিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ আগামীকাল সন্ধ্যায় রাজ্যে আসবেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পৌরোহিত্য উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের ৭২তম প্লেনারি সেশন আগরতলায় অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আগামীকাল সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানে আগরতলায় আসবেন। ২১ ডিসেম্বর তিনি ওই বৈঠকে অংশ নেবেন। ২২ ডিসেম্বর তিনি ধলাই জেলায় মাসুরাই পাড়ায় ব্রু পুনর্বাসন শিবির পরিদর্শন করবেন। ওইদিন তিনি আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনফারেন্সে অংশ নেবেন। এছাড়া, তিনি ত্রিপুরায় বিজেপির প্রদেশ মুখ্য কার্যালয়ের ভূমি পূজনেও অংশ নেবেন।

উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের (এনইসি) ৭২তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন (প্লেনারি) উপলক্ষ্যে আগামীকাল তিন দিনের রাজ্য সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া। আগামীকাল বিকালের বিমানে তিনি  আগরতলায় পৌঁছে সন্ধ্যায় উদয়পুর মাতাবাড়িতে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে দর্শন করতে যাবেন।

কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী পরদিন, ২১ ডিসেম্বর আগরতলায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের (এনইসি) ৭২ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে অংশ নেবেন। সেদিন বিকেলে, ব্যাংকার্স কনক্লেভ এবং নর্থ ইস্ট স্পেস এপ্লিকেশন সেন্টারের দুটো বৈঠকেও যোগ দেবেন।

২০ ডিসেম্বর প্রাক-পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বিষয়গত এবং কারিগরি অধিবেশনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকসমূহ তাদের উন্নয়নমূলক রূপরেখা ও দিক-নির্দেশ তুলে ধরবে যা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামনের দিনগুলোর জন্য অগ্রগতির পথ দেখাবে। আগামী ২১ ডিসেম্বর সকালে মূল পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে, এই অধিবেশনে পৌরোহিত্য করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং এনইসি-র চেয়ারম্যান অমিত শাহ, সাথে উপস্থিত থাকবেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের (ডোনার) মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য় এম সিন্ধিয়া এবং প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুকান্ত মজূমদার। এই অধিবেশনে দুই এনইসি সদস্য, উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যের রাজ্যপালগণ, মুখ্যমন্ত্রীগণ, মুখ্য সচিবগণ এবং পরিকল্পনা সচিবদের পাশাপাশি উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে এই অধিবেশন কৌশলগত আলোচনার সম্মিলন হয়ে উঠবে।

এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য আগরতলাকে বেছে নেওয়ার পেছনে আঞ্চলিক উন্নয়নে এই রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে তুলে ধরে। ঐতিহাসিকভাবে, এনইসি-র পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনগুলি মূলত শিলং এবং গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে, আগরতলাকে বেছে নেবার পেছনে এনইসি-র  প্রসারতা ও গতিশীল প্রকৃতি এবং এই অঞ্চলের সমস্ত প্রান্তে বিকাশকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে তার অঙ্গীকারকেও তুলে ধরে।

এনইসি-র সচিব অংশুমান দে এই পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের গুরুত্ব এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে এনইসি-র ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির উপর আলোকপাত করেন, যেখানে এই অঞ্চলকে ‘অষ্টলক্ষ্মী’ হিসাবে উদযাপন করা হয় – এখানে ‘অষ্টলক্ষ্মী’ হলো অপরিসীম সম্ভাবনা এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির প্রতীক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এনইসি-র ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে, এক উপদেষ্টামূলক সংস্থা থেকে মূল আঞ্চলিক পরিকল্পনা সংস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে। তথাপি, এর মূল লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে, যা হলো,  আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং বর্ধিত যোগাযোগ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে এই অঞ্চলের সমতা নিশ্চিত করা।

এনইসি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালে এবং  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিলং-এ এর উদ্বোধন করেন ১৯৭২ সালে। এই মাইলফলকটি এই অঞ্চলের পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। ২০০২ সালে সিকিমের অন্তর্ভুক্তি এবং আঞ্চলিক পরিকল্পনা সংস্থা হিসাবে এর পদবি প্রাপ্তি সহ পর্ষদের রূপান্তর হওয়া, এর সম্প্রসারিত লক্ষ্য এবং ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।

গত কয়েক দশক ধরে এনইসি-র উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ১১,৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক নির্মাণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিমানবন্দরের পরিকাঠামোর উন্নতি সাধন করার কাজ। এনইসি-র উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (আরআইএমএস) এবং নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার কর্পোরেশন (নিপকো)-এর মতো আরো অনেক মৌলিক প্রতিষ্ঠান।

উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবায়িত করার জন্য এনইসি-র যে গুরুত্বপূর্ণ দৃঢ় ভূমিকা রয়েছে তা স্পষ্ট হয় পিএম-ডিভাইন প্রকল্পের প্রবর্তন সহ  চলতি পদক্ষেপসমূহের মাধ্যমে। ৭২ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন সন্নিকটে আসার সাথে সাথে,  এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এনইসি-র অব্যাহত প্রচেষ্টার উপর সর্বাধিক নজর পড়ছে।

অধিবেশনের এই প্রাক মুহূর্তে সকল প্রস্তুতির সাথে উচ্চ প্রত্যাশার সঙ্গে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের ৭২ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের যাত্রায় একটি সংজ্ঞায়িত মুহূর্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *