BRAKING NEWS

রাজ্যে দ্বিতীয় সফল কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ নভেম্বর: কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পর পর দুটি সফল প্রতিস্থাপন সম্ভব হল আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে। গত ১১ নভেম্বর রাজ্যে দ্বিতীয় কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত ৮ জুলাই ২০২৪ রাজ্যে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে চিকিৎসাক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভবপর হয়েছে রাজ্যের জনদরদী মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর(ডাঃ)মানিক সাহার আন্তরিক প্রচেষ্টায়।

আজ আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয় যে ডাঃ শুভদীপ আচার্য(২৮) নামে এক চিকিৎসকের এই সফল কিডনি ট্রান্সপ্লান্টটি করা হয়। তিনি আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন। ধলেশ্বর এলাকার এই রোগী বহির্রাজ্যের একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। গত কয়েকমাস আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষায় উনার কিডনির সমস্যা ধরা পরে। পরবর্তী সময়ে আরো উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে এই চিকিৎসক জানতে পারেন যে, তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা তখন তাকে কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া বিকল্প আর কোনও উপায় নেই বলে জানান। এঅবস্থায় বহির্রাজ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করার জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু গত জুলাই মাসে রাজ্যের আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে প্রথম সফল ভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন হবার খবর শুনে এবং বহির্রাজ্যে খরচ ও অন্যান্য অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তিনি বহির্রাজ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত বদলান। তখন তার পরিজনেরা আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। আগরতলায় ফিরে এসে তিনি গত আগস্ট মাস থেকেই আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্বাবধানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। তখন তার এক সহৃদয় শুভাকাঙ্ক্ষী কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য কিডনি দানে এগিয়ে আসেন। অবশেষে গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ সফল ভাবে তার কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ইউরোলজিস্ট অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডাঃ বিজিত লোধ ও ডাঃ মুকুট দেবনাথ, কনসালটেন্ট নেফ্রলজিস্ট ডাঃ মানস গোপ ও ডাঃ সমরেশ পাল, কনসালটেন্ট অ্যানেসথিসিস্ট ডাঃ ভাস্কর মজুমদার, ডাঃ অনুপম চক্রবর্তী ও তপন দেববর্মা প্রতিস্থাপনের টিমে ছিলেন।

মণিপুরের শিজা হসপিটালস অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে উক্ত টিমে ছিলেন কনসালটেন্ট ইউরোলজিস্ট অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডাঃ সৌমোরেন্দ্র পৌণম, ডাঃ মহারাবাম মাহিলি, কনসালটেন্ট অ্যানেসথিসিস্ট ডাঃ দীনেশ থৌওনাউজাম ও ডাঃ দশপ্রকাশ। এছাড়া উক্ত কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে স্টেট কোর্ডিনেটর হিসাবে ছিলেন নার্সিং অফিসার হিমাদ্রী কর, ওটি নার্স হিসেবে ছিলেন গৌতম বিশ্বাস,দীপ্তনু সূত্রধর, কিষাণ দেব ও সুতপা দাস। ফ্লোর নার্স হিসেবে ছিলেন প্রসেনজিৎ মহাজন ও পিয়ালী চক্রবর্তী। ওটি টেকনিশিয়ান ছিলেন রতনমণি দেববর্মা ও সানি দাস। এই কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে সামগ্রিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন সিনিয়র নার্সিং অফিসার তৃপ্তি চক্রবর্তী। তাছাড়া মণিপুরের শিজা হসপিটালস অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে উক্ত টিমে ওটি নার্স ছিলেন ফিজাম প্রেম কুমার সিং ও শৌগ্রাকপাম রিশপ সিং এবং ওটি টেকনিশিয়ান ছিলেন থিয়াম ইঙ্গোবি সিং ও পাওনম জোধাচন্দ্র।

বর্তমানে কিডনি দাতা ও গ্রহিতা, দুজনেরই স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর ক্রিয়েটিনিন ছিল ৯ এমজি/ডিএল, আজ তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২.১ এমজি/ডিএল। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। আরও দিন দশেক তাকে হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়। শিজা হাসপাতালের সহায়তায় এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। শিজা হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে আগামী দিনে জিবিপি হাসপাতালের চিকিৎসকরা যাতে নিজেরাই এই ধরনের প্রতিস্থাপন করতে পারে সেটাই শিজা হাসপাতালের লক্ষ্য।

জিবিপি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী জানিয়েছেন যে এই অস্ত্রোপচারে রোগীর আপাতত এক পয়সাও খরচ হয়নি। প্রথম রোগী এবং দ্বিতীয় রোগীর ক্ষেত্রে বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। তাতে রাজ্য সরকারের ছয় লক্ষ টাকার মতো অর্থ ব্যয় হয়েছে। কারণ শিজা হাসপাতালকে প্রতিটি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সাম্মানিক ভাতা বাবদ দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও শিজা হাসপাতালের যে টিম এসেছে তাদের আসা-যাওয়া এবং থাকা খাওয়ার বন্দোবস্তুও করা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে পরপর দুদিনে দুটি অপারেশন করা যায় সেই দিকেও কর্তৃপক্ষ নজর রাখবেন, যাতে করে আসা-যাওয়ার খরচ অর্ধেক হয়ে যায়। বেশ কিছু ল্যাবরেটরি টেস্ট হয়েছে, সেগুলো আগরতলাতে করা সম্ভব হয় না, সেগুলি বাইরে থেকে করিয়ে আনা হয়েছে এবং তার খরচ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর বহন করবে।

উল্লেখ্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের জন্য মণিপুরের শিজা মেডিকেল কলেজ ও রিসার্চ সেন্টারের সাথে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী রাজ্যের কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জনে শিজা হাসপাতালের কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে অস্ত্রোপচার করছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জিবিপি হাসপাতালে সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী জানান যে কিডনি দাতা গ্রহীতার আত্মীয়। নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনেই অনুমতিপত্র প্রদানের পরেই এই কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজকের এই সাংবাদিক সন্মেলনে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী বিশদভাবে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরেন। সঙ্গে ছিলেন আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর (ডাঃ)অনুপ কুমার সাহা, ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর (ডাঃ) তপন মজুমদার, ডাঃ বিজিত লোধ, ডাঃ মানস গোপ, ডাঃ সৌমোরেন্দ্র পৌণম, ডেপুটি ডাইরেক্টর জিওডন মলসম, সার্জারি বিভাগের হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট ডাঃ মণিরঞ্জন দেববর্মা প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *