BRAKING NEWS

সুপ্রিম রায়, ৫১-এ না, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের আগে পূর্বপাকিস্তান থেকে অসমে আগত অভিবাসীরা পাবেন ভারতীয় নাগরিকত্ব, বহাল ৬এ ধারা

নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : ১৯৫১ নয়, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চই হবে অসমে বিদেশি শনাক্তকরণের ভিত্তিবর্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত (ডিওয়াই) চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচজনের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায়দান করে বলেছে, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পৰ্যন্ত পূর্বপাকিস্তান (অধূনা বাংলাদেশ) থেকে আগত অভিবাসীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। তার পর আগত অভিবাসীরা অবৈধ বলে গণ্য হবেন। এছাড়া এই রায় দিয়ে ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাক্ষরিত অসম চুক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা বহাল রেখেছে।

নাগরিকত্বের ভিত্তিবৰ্ষ নিয়ে অসম সম্মিলিত মহাসংঘ এবং ইন্ডিজেনাস ফোরাম আসাম-এর দায়েরকৃত মামলার চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয় আজ সকাল সাড়ে ১০টায়। দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্ৰচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ জনের ডিভিশন বেঞ্চে ছিলেন জাস্টিস সূৰ্য কান্ত, এমএম সুন্দরেশ, মনোজ মিশ্ৰ এবং জেবি পাদ্রিওয়ালা। শুনানিকালে মতদান প্রক্রিয়ায় পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজন যথাক্ৰমে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্ৰচূড়, জাস্টিস সূৰ্য কান্ত, জাস্টিস এমএম সুন্দরেশ এবং জাস্টিস মনোজ মিশ্ৰ ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পৰ্যন্ত সিদ্ধান্তের পক্ষে মতদান করেন। অন্যদিকে বিপক্ষে রায় দেন জাস্টিস জেবি পাদ্রিওয়ালা।

প্ৰসঙ্গত, অসম চুক্তি অনুসারে বিদেশি শনাক্তকরণ এবং বহিষ্করণের জন্য নিৰ্ধারিত ১৯৭১ সালের ২৪ মাৰ্চকে ভিত্তিবৰ্ষ করার পাশাপাশি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারার ওপর সুপ্রিম কোর্টে দায়েরকৃত মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয়েছিল ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত শুনানির পর রায়কে সংরক্ষিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পর ১০ মাস পর আজ চূড়ান্ত রায় প্ৰদান করেছে দেশের সৰ্বোচ্চ আদালত।

আজ রায়দান করতে গিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় তাঁর বলেন, অসমের জনসংখ্যা কম। অসমে অভিবাসীদের আগমনের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। যা অসমের মতো ছোট্ট এই ভূখণ্ডে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি। এই বিষয়টি বিবেচনা করে কাট অফ ডেট করা সঠিক।

এদিকে শুনানিকালে কেন্দ্ৰীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দেশের বিভিন্ন প্ৰান্তে বসবাসকারী অবৈধ অনুপ্ৰবেশকারীর তথ্য সংগ্ৰহ করা সম্ভব নয়। কারণ এ ধরনের বহু বিদেশি নাগরিক গোপনে চোরাইপথে ভারতে প্ৰবেশ করছে। কেন্দ্ৰের দাখিলকৃত শপতনামায় বলা হয়েছে, এই বিধানের অধীনে ১৭,৮৬১ জনকে নাগরিকত্ব প্ৰদান করা হয়েছে। কেন্দ্ৰীয় সরকার বলেছে, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালের নিৰ্দেশে পরিচালিত অভিযানে ৩২,৩৮১ জন বিদেশি নাগরিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

তখন আদালত প্ৰশ্ন করে, ১৯৭১ সালের ২৫ মাৰ্চের পর অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী অনুপ্ৰবেশকারীর সংখ্যা কত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে? এর জবাবে কেন্দ্ৰের উত্তর, বৈধ ভ্ৰমণ নথি ছাড়া গোপনে অবৈধভাবে ভারত ভূখণ্ডে প্ৰবেশ করে অনুপ্রবেশকারীরা। অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করা, আটক করা এবং বিতাড়ন করাটা এক জটিল প্ৰক্ৰিয়া। কেননা, যেহেতু এ ধরনের মানুষ গোপনে ভারতে প্ৰবেশ করে, তাই দেশের বিভিন্ন প্ৰান্তে বসবাসকারী অবৈধ অনুপ্ৰবেশকারীর সঠিক তথ্য সংগ্ৰহ করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এর ধারা ৬(ক)-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০১২ সালে অসম সম্মিলিত মহাসংঘ-এর কাৰ্যনিৰ্বাহী সভাপতি মতিউর রহমান ১৯৭১-কে ভিত্তিবৰ্ষ ধার্য করাকে অসাংবিধানিক দাবি করে তা প্ৰত্যাহার করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন। আবেদনের ভিত্তিতে ৫৬২/২০১২ নম্বরে মামলা রুজু করে তা বিচারাধীন ছিল।

প্রসঙ্গত, অসম চুক্তি অনুসারে অসমে বিদেশি শনাক্তকরণের ভিত্তিবৰ্ষ ধার্য করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৪ মাৰ্চ। ভিত্তিবৰ্ষকে বৈধতা প্ৰদান করতে নাগরিকত্ব আইনে সংযোজন হয়েছিল দফা ৬(ক)। এখানে বলে রাখা ভালো, নাগরিকত্ব আইনের দফা ৬(ক) কেবল অসমের জন্য প্ৰযোজ্য। ভারতের অন্য প্ৰান্তে বিদেশির ভিত্তিবৰ্ষ ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাই। ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতে প্ৰথম আদমশুমারি হয়েছিল। তাই ওই তথ্যের ভিত্তিতে এই সালকে ভিত্তিবৰ্ষ বলে গণ্য করা হয়।

পরবর্তীতে আসাম পাবলিক ওয়াৰ্কস নামের এক অরাজনৈতিক সংগঠনের দাখিলকৃত আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি রোহিন্টন ফলি নারিমনের ডিভিশন বেঞ্চ জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-কে উন্নীতকরণের নিৰ্দেশ জারি করে। পাশাপাশি অসম সম্মিলিত মহাসংঘ এবং ইন্ডিজেনাস ফোরাম আসাম-এর আবেদনের শুনানি গ্ৰহণ করে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি রোহিন্টন ফলি নারিমনের ডিভিশন বেঞ্চ ১৩টি প্ৰশ্ন উত্থাপন করে আবেদনটি শুনানির জন্য পাঁচ সদস্যের এক সাংবিধানিক বিচারপীঠে প্ৰেরণ করেছিল।

নাগরকত্ব আইনের ধারা ৬(ক) সম্পর্কিত প্ৰধান বিবাদী পক্ষ অসম সম্মিলিত মহাসংঘ। বাদী পক্ষ কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্ৰক, বিদেশ মন্ত্ৰালয়, নিৰ্বাচন কমিশন, ভারতের মহাপঞ্জিয়ক। তবে এই মামলার শুনানিকালে অসমে বিদেশি খেদা আন্দোলনের মূল হোতা ‘সারা অসম ছাত্র ইউনিয়ন’ (আসু)-কে করা হয়েছিল বাদী পক্ষ। হস্তক্ষেপ আবদনকারী ছিল ‘সারা অসম মুসলিম ছাত্র ইউনিয়ন’ (আমসু), জমিয়ত, শরণাৰ্থী সুরক্ষা সমিতি প্রভৃতি সংগঠন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৭১ সালের ২৫ মাৰ্চকে ভিত্তিবৰ্ষ ধরে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’ (এনআরসি)-র চূড়ান্ত তালিকা প্ৰকাশিত হয়েছিল। এর পর ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট সু্প্রিম কোর্টের সংবিধানিক বিচারপীঠ ঘোষণা করে, সমজাতীয় ২৫টি আবেদনের শুনানি এক সঙ্গে গ্ৰহণ করা হবে। পরবর্তীতে লাগাতার চারদিন মামলাগুলির শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের সংবিধানিক বিচারপীঠ মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *