BRAKING NEWS

হরিয়ানায় হ্যাট্রিক বিজেপির, জম্মু ও কাশ্মীরে মসনদে কংগ্রেস জোট

নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর (হি.স.): হরিয়ানায় এক্সিট পোলের পরিসংখ্যান ভুল প্রমাণিত হল ভোটগণনায়। হ্যাট্রিক করে ক্ষমতার মসনদে বসবে বিজেপি। এদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরে কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট জয়ী হয়েছে। ফলে, ফারুক আব্দুল্লা মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে গেছেন। 

হরিয়ানায় আবারও সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। একাধিক আসনে ফলাফল ঘোষণা হতে দেখা যায় ভাল ফলাফল করেছে গেরুয়া শিবির। আর সেই কারণে উৎসবের মেজাজ দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরেও। আতসবাজি ফাটিয়ে, ঢোল বাজিয়ে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা উল্লাস করেছে। অন্যদিকে, জম্মুতে বিজেপি যথেষ্ঠ ভাল ফলাফল করলেও কাশ্মীরে ধরাশায়ী হয়েছে। ফলে, রাজ্যের ক্ষমতা হাত থেকে ফসকে গেছে। হরিয়ানায় বিজেপি ৪৮টি, কংগ্রেস ৩৭টি, আইএনএলডি ২টি এবং নির্দল ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ৪২টি, বিজেপি ২৯টি, কংগ্রেস ৬টি, পিডিপি ৩টি, জেপিসি ১টি, সিপিএম ১টি, আম আদমি পার্টি ১টি এবং নির্দল ৭টি আসনে জয়ী হয়েছে।

আজ হরিয়ানায় প্রথম দিকে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু বেলা যত গড়ায় ততই ব্যাকফুটে চলে যেতে থাকে কংগ্রেস। কৃষি বিল ইস্যু, মহিলাদের টাকা দেওয়ার ঘোষণা, যুব সমাজকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, কোনওকিছুতে মানুষের ভরসা ফিরল না কংগ্রেসের ওপর। আবারও হরিয়ানার মানুষ ভরসা রাখতে চলেছে বিজেপির ওপর। কার্যত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির। আদতে হরিয়ানায় কংগ্রেসের আনন্দ পরিণত হল বিষাদে, আর বিজেপির হতাশা পাল্টে গেল আনন্দে। ঘড়ির কাঁটায় সকাল তখন ৯টা। ঘণ্টাখানেক ভোটগণনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক প্রবণতা দেখে আনন্দে মেতে ওঠেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, লাড্ডু-জিলিপি বিতরণ করা হয় কংগ্রেস দফতরে। তখন হতাশ দেখা যাচ্ছিল পদ্ম শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু, দুপুরের মধ্যেই সবকিছু উল্টে-পাল্টে যায়। হতাশা ফিরে আসে কংগ্রেস শিবিরে, আর আনন্দে মেতে ওঠে বিজেপি। দিল্লিতে ২৪ আকবর রোডে এআইসিসির সদর দফতরের সামনেও দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। লাড্ডু বিতরণ, রাহুল গান্ধীর ছবিতে জিলিপি চড়ানো, ঢাক-ঢোলের আওয়াজে তখন পুরোদস্তুর বিজয়োৎসবের মেজাজ। ঘন ঘন উঠছিল রাহুল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নামে জয়ধ্বনি। আর দুপুরের মধ্যে চলে এল নীরবতা।

তবে কংগ্রেস ভাল ফল না করলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ হাসি হাসলেন কুস্তিগীর তথা কংগ্রেস নেত্রী ভিনেশ ফোগট। এখন থেকে ভিনেশের নামের সঙ্গে যুক্ত হবে বিধায়ক। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে জুলানা আসনে ৬ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন ভিনেশ। হরিয়ানার জিন্দ জেলার জুলানা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এ বার কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়েছেন ভিনেশ ফোগাট। প্রতিপক্ষ সেনার অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন বিজেপির যোগেশ কুমার বৈরাগী। গণনা শুরুর একে বারে প্রাথমিক পর্যায়ে যোগেশ এগিয়ে থাকলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ছাপিয়ে এগিয়ে যান ভিনেশ। গণনা শুরুর প্রথম এক ঘণ্টা শেষেও এগিয়ে ছিলেন ভিনেশই। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে আচমকা ভিনেশকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান যোগেশ। দু’জনের মধ্যে হাজার তিনেক ভোটের ব্যবধান ছিল। পঞ্চম রাউন্ডের শেষ থেকেই ব্যবধান কিছুটা কমাতে সমর্থ হন ভিনেশ। সপ্তম রাউন্ডে ৩৮ ভোটে এগিয়ে যান। একাদশ রাউন্ডের শেষে সেই ব্যবধান বেড়ে প্রায় ছয় হাজারে গিয়ে ঠেকে। চতুর্দশ রাউন্ডের শেষেও পাঁচ হাজারের ব্যবধান ধরে রাখেন ভিনেশ। শেষমেশ ৬ হাজারের বেশি ভোটে জিতলেন কুস্তিগির ভিনেশ। ভিনেশের প্রাপ্ত ভোট ৬৫০৮০, যোগেশ পেয়েছেন ৫৯০৬৫টি ভোট। ৬,০১৫টি ভোটে হেরেছেন যোগেশ। এই জয়ের পর ভিনেশ বলেছেন, “এই লড়াই প্রতিটি মেয়ের, প্রতিটি মহিলার লড়াই যারা লড়াইয়ের পথ বেছে নেয়। এটাই প্রতিটি সংগ্রাম ও সত্যের জয়। এই দেশ আমাকে যে ভালোবাসা ও বিশ্বাস দিয়েছে তা আমি বজায় রাখব।”

জয় যখন নিশ্চিত তখন হরিয়ানার বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনি বলেন, হরিয়ানার জনগণ প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীতিতে আস্থা রেখেছেন। মঙ্গলবার হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাইনি বলেছেন, “আমি লাডওয়ার (সাইনি এই আসনের প্রার্থী) জনগণ এবং হরিয়ানার ২.৮০ কোটি জনসংখ্যাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই জয়ের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদীর। হরিয়ানার জনগণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীতির ওপর আস্থা রেখেছেন।” সাইনি আরও বলেছেন, “এই সবই শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আশীর্বাদ করেছেন। আমার বিশ্বাস ছিল, হরিয়ানার দরিদ্র, কৃষক এবং যুবকরা আমাকে আশীর্বাদ করবে।”

হরিয়ানায় ভারতীয় জনতা পার্টির ভাল ফলাফলে দলীয় কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মঙ্গলবার বলেন যে, হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ঐতিহাসিক জয়ের জন্য বিজেপির সমস্ত নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এবং ভোটারদের আন্তরিক অভিনন্দন। এই জয় বিকশিত ভারত, বিকশিত হরিয়ানা-র জন্য উত্সর্গীকৃত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনকল্যাণমূলক নীতি, মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনির দক্ষ নেতৃত্ব এবং বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের উপর হরিয়ানার জনগণের আস্থার সিলমোহর এটা।

জয় পাওয়া ও এগিয়ে থাকার নিরিখে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)-এর ঝুলিতে ৪২টি আসন গেছে। এনসি-র সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি আসন। জয়ী হওয়া বা এগিয়ে থাকার নিরিখে বিজেপির ঝুলিতে ২৯টি আসন গেছে। পিডিপি মাত্র ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। সিপিএম এবং আম আদমি পার্টি একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স জয়ী একটি আসনে। আর নির্দল প্রার্থীরা ৭টি আসনে জয়ী হয়েছেন।

হরিয়ানা হতাশ করলেও, জম্মু ও কাশ্মীর আনন্দিত করলো অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। এই প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে খাতা খুলল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে ডোডা বিধানসভা আসনে জয়লাভ করেছেন এএপি প্রার্থী মেহরাজ মালিক। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন এএপি-কে হতাশ করেছে। সেখানে এএপি-র কোনও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে ডোডা বিধানসভা আসন থেকে এএপি প্রার্থী মেহরাজ মালিক জয়ী হয়ে মুখ রক্ষা করেছেন। এই জয়ের পর ডোডায় দলীয় কার্যালয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন আম আদমি পার্টি (এএপি)-র কর্মী সমর্থকরা।

জম্মু ও কাশ্মীরে জয়ের স্বাদ পেল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস। আনন্দে উল্লসিত ন্যাশনাল কনফারেন্স, আনন্দে মেতে উঠেছেন এনসি-র নেতা-কর্মীরা। এই জয়ে খুশি দলের প্রধান ফারুখ আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার ফারুখ আব্দুল্লাহ বলেছেন, “১০ বছর পর জনগণ আমাদের প্রতি নিজেদের জনাদেশ দিয়েছেন। এখানে ‘পুলিশ রাজ’ নয়, এখানে ‘মানুষের রাজ’ হবে। আমরা নির্দোশদের বের করে আনার চেষ্টা করব। যারা কারাগারে আছেন তাঁরা মুক্ত হবেন.. আমাদের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।” ফারুখ বলেছেন, “জনগণ নিজেদের জনাদেশ দিয়েছেন, তাঁরা প্রমাণ করেছেন, ৫ আগস্ট যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা তারা মেনে নেয়নি। ওমর আবদুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী হবেন।” হরিয়ানায় ভোটের ফল ও কংগ্রেসের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে ফারুখ আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আমি দুঃখিত যে তারা (কংগ্রেস) (হরিয়ানায়) জয়ী হয়নি…আমি মনে করি এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে ঘটেছে।”

জম্মু ও কাশ্মীরে এবার জোট সরকার গড়তে চলেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস। এ জন্য ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসকে শুভেচ্ছা জানালেন পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি। একইসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার  সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেহবুবা মুফতি বলেছেন, “আমি কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতৃত্বকে তাঁদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য অভিনন্দন জানাই। স্থিতিশীল সরকারকে ভোট দেওয়ার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকেও অভিনন্দন জানাই। যদি এটি একটি স্পষ্ট জনাদেশ না হয়, তাহলে কেউ ভাবত যে কিছু দুষ্টুমি হতে পারে।” পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি আরও বলেছেন, “আমি মনে করি জনগণ একটি স্থিতিশীল সরকার চেয়েছিল এবং তাঁরা ভেবেছিল যে ন্যাশনাল কনফারেন্স-কংগ্রেস তা দিতে পারে এবং বিজেপিকে দূরে রাখতে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *