BRAKING NEWS

সপ্তম রাষ্ট্রীয় পোষণ মাহ: পুষ্টির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন

নয়াদিল্লি, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪: ‘পোষণ মাহ ২০২৪’ হল একটি দেশব্যাপী উদযাপন যা পুষ্টি সচেতনতাকে বৃদ্ধি করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ভারত গড়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই বছর, তার সপ্তম পর্বে, পোষণ মাহ বা  পুষ্টি মাস  অভিযান অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ, শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ, সুশাসন এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর পরিষেবা প্রদান, “পোষণ ভি, পড়াই ভি” এবং সম্পূরক পুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর বিশেষ নজর দিয়েছে ৷  ২০১৮ সাল থেকে, ৬টি পোষণ মাহ এবং পোষণ পাখওয়ারা  সারা দেশে সংঘটিত হয়েছে, বর্তমানে সপ্তম রাষ্ট্রীয় পোষণ মাহ চলছে। বিভিন্ন থিমের অধীনে এই সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে ১০০ কোটিরও বেশি পুষ্টি-কেন্দ্রিক সংবেদনশীল কার্যক্রম আয়োজিত হয়েছে।

পোষণ মাহ ২০২৪: স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য একটি দেশব্যাপী আন্দোলন:

রাষ্ট্রীয় পোষণ মাহ ২০২৪-এর সপ্তম সংস্করণ, দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে, যা পুষ্টির আলোচনায় নতুন শক্তি নিয়ে আসছে। এই অভিযান গুজরাটের গান্ধীনগরে সূচনা করলেন কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রীমতি অন্নপূর্ণা দেবী এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল। মাসব্যাপী প্রচারাভিযানেই মধ্য দিয়ে ভারতে অপুষ্টির ঘটনা নির্মূল করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  “এক পেড় মা কে নাম” শীর্ষক বৃক্ষরোপণ অভিযান দিয়ে শুরু হয়েছিল, যা পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং পুষ্টির মধ্যে সংযোগের প্রতীকী উপস্থাপনা।

এই বছরের চলমান পোষণ মাহ নিন্মলিখিত বিষয়গুলোর উপর নজর দিয়েছে:

অ্যানিমিয়া মুক্ত ভারত: এত একটি ছয়-ছয়-ছয় কৌশল (ছয় বয়সের গ্রুপ, ছয় রকম হস্তক্ষেপ এবং ছয়টি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া) যার মাধ্যমে রক্তাল্পতা কমানোর উপর সর্বাধিক নজর দেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগ দেশব্যাপী মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ফলাফলের উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত, ভারতে ৯৫% গর্ভবতী মহিলাদের এবং ৬৫.৯% স্তন্যদানকারী মহিলাদের রক্তাল্পতা মোকাবেলায় ১৮০ টি আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে৷

প্রযুক্তি-চালিত সমাধান: ১০ কোটিরও বেশি সুবিধাভোগীদের জন্য সঠিক সময়ে পুষ্টি সরবরাহ নিরীক্ষণ এবং উন্নত করতে পোষণ মোবাইল ট্র্যাকারের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার।

দৃঢ় জন আন্দোলন: সম্প্রদায়-নেতৃত্বাধীন কার্যক্রমেরে মধ্য দিয়ে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে পুষ্টি নিয়ে সচেতনতা অভিযান করা হয়। এই বছরের থিমের মধ্যে রয়েছে পরিপূরক পুষ্টিকর আহার খাওয়ানো, যা শিশুর পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।  মায়ের দুধ থেকে যেরকম শক্তি এবং পুষ্টির পাওয়া যায় তার প্রয়োজনীয় পরিমানেই চাহিদা  শিশুর ৬ মাস বয়সের  দিকে বাড়তে থাকে । তখন পরিপূরক আহার প্রয়োজন । এই বয়সে শিশুর বুকের দুধ ছাড়াও অন্য খাবার খাওয়াতে হয়। আর এই পরিপূরক খাওয়ানোর সময় শিশুরা অপুষ্টির প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে পারে। পুষ্টির গুণমান, পরিপূরক খাওয়ানোর পরিমাণ সম্পর্কে জন সাধারণকে, শিশুদের সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

পোষণ মাহ-এর প্রভাব
সপ্তম রাষ্ট্রীয় পোষণ মাহ ভারত জুড়ে অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেছে, বিশেষ করে শিশু, অল্পবয়সী শিশু এবং মহিলাদের জন্য পুষ্টির ফলাফল উন্নত করার জন্য রাষ্টের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। আজ অবধি দেশব্যাপী ৯.২২ কোটিরও বেশি কার্যক্রমের মাধ্যমে, পোষণ মাহ ২০২৪ একটি সত্যিকারের জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, তৃণমূল স্তরে পুষ্টি সচেতনতা এবং অন্তর্বর্তী হস্তক্ষেপ করার জন্য সম্প্রদায়গত উদ্যোগ, সরকারী সংস্থা এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিকে জড়িত করা হয়েছে ।

চলমান পোষণ মাহ ২০২৪-এ পরিচালনায় সেরা রাজ্যসমূহ:

এখনও পর্যন্ত কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে:

1. মহারাষ্ট্র:  উল্লেখযোগ্য ১.৮০ কোটি কার্যকলাপ সংগঠিত করে নেতৃত্ব দিচ্ছে৷
2. বিহার: খুব কাছ থেকে অনুসরণ করে, বিহার একটি অসামান্য সংখ্যা ১.১৭ কোটি কার্যক্রম সংগঠিত করেছে।
3. মধ্যপ্রদেশ: ৭৯.৩২ লক্ষ কার্যকলাপ সহ, মধ্যপ্রদেশ সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে ।
4. উত্তরপ্রদেশ: উত্তরপ্রদেশ সক্রিয়ভাবে ৭০.২৮ লক্ষ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার বিশাল জনসংখ্যাকে নিযুক্ত করেছে।
5. গুজরাট: গুজরাটও ৬৬.৭৬ লক্ষ কার্যকলাপের সাথে তালিকায় যোগ দিয়েছে

অন্যদিকে, অন্ধ্র প্রদেশও আজ অবধি ৬৫.৫৪ লক্ষ কার্যকলাপের সাথে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে, পুষ্টি সচেতনতা এবং অনুশীলনগুলিকে উন্নত করার জন্য দেশব্যাপী প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করেছে।

পোষণ মাহ ২০২৪ এর থিম্যাটিক লক্ষ্য:

পোষণ মাহ ২০২৪-এর সাফল্যের কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে এর বৈচিত্র্যময় বিষয়ভিত্তিক পদ্ধতির জন্য, যা পুষ্টি, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার বিভিন্ন দিককে সম্বোধন করে। প্রতিটি থিম বৃহত্তর পোষণ অভিযান কাঠামোর অধীনে লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে প্রতিফলিত করে।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: অ্যানিমিয়াকে বয়ঃসন্ধিকালের এবং মহিলাদের প্রভাবিত করে একটি প্রধান স্বাস্থ্য উদ্বেগ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অ্যানিমিয়া মোকাবেলায় হস্তক্ষেপ প্রদানকে কেন্দ্র করে ১.৮৮ কোটি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

গ্রোথ মনিটরিং: ১.৬৮ কোটি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের উপর দৃষ্টি দেওয়া হয়, পোষণ ট্র্যাকারের মাধ্যমে স্টান্টিং, অপচয় এবং অপুষ্টির সময়মত সনাক্তকরণ সক্ষম করে, যেখানে প্রয়োজন সেখানে প্রাথমিক হস্তক্ষেপ করা হয়।

পরিপূরক খাওয়ানো: পরিপূরক খাওয়ানো, ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ১.৪৫ কোটি কার্যক্রমের মাধ্যমে তা সম্বোধন করা হয়েছিল।

পোষান ভি পড়াই ভি: পুষ্টির সাথে শিক্ষার একীকরণ মূলক  ১.৫৯ কোটি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে ।

উন্নত প্রশাসনের জন্য প্রযুক্তি: পুষ্টি প্রশাসনে প্রযুক্তির ব্যবহার একটি গেম চেঞ্জার হয়েছে। পোষণ ট্র্যাকারের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারে ১.০৮ কোটির কার্যক্রম করা হয়েছে।

পরিবেশ সুরক্ষা: পরিবেশগত স্থায়িত্ব থেকে পুষ্টিকে আলাদা করা যায় না। ৭৩.২০ লক্ষ কার্যক্রম পরিবেশ সুরক্ষার জন্য নিবেদিত ছিল, যা একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং উন্নত পুষ্টির মধ্যে সংযোগের উপর জোর দেয়।

পুষ্টি-নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপ: পোষণ মাহ ২০২৪ সরাসরি পুষ্টির সাথে সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলিতে একটি শক্তিশালী জোর দিয়েছে। ৯২.৭২ লক্ষ কার্যক্রম স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের প্রচার, খাদ্যের বৈচিত্র্যের উন্নতি এবং স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে সম্প্রদায়কে সুশিক্ষিত করার উপর সর্বাধিক নজর দেওয়া হয়।

পোষণ মাহের উৎসর্গের পাশাপাশি, পোষণ অভিযান একটি সুপোষিত ভারতের দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে, ৩৬ টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭৮১ টি জেলা জুড়ে ১৩,৯৯,৪৮৪ টি কার্যকরী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোকে পরিচালনা করছে ১৩,৩৩,৫৬১ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী  ৷ এই কেন্দ্রগুলি ৯.৯৮ কোটিরও বেশি সুবিধাভোগীর চাহিদা পূরণ করে , যার ৯৮.৬ শতাংশ আধার যাচাইকরণ সম্পন্ন হয়েছে, যা আরও ভাল ট্র্যাকিং নিশ্চিত করে৷ পরিকাঠামোগত উন্নতির মধ্যে রয়েছে ১,৯৫,৪৯৭ টি নিজস্ব ভবন সহ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ২,৭৩,৬৮০ টি কার্যকরী টয়লেট এবং ৩,৩৮,৬৪৫ টি পানীয় জলের উৎস সহ।

পোষান অভিযান: মিশন এবং লক্ষ্য পোষণ অভিযান হল ভারত সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ  যা ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের, কিশোরী মেয়েরা, গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের সামগ্রিকভাবে পুষ্টির ফলাফলের অগ্রগতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এটি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রাজস্থানের ঝুনঝুনুতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সূচনা করেছিলেন। অভিযানের সূচনা থেকে এপর্যন্ত, ছয়টি সফল পোষণ মাহ ইভেন্ট সারা দেশে সকল রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পাশাপাশি অভিন্ন মন্ত্রক এবং বিভাগগুলির উৎসাহী অংশগ্রহণের সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে, । পোষণ অভিযানের লক্ষ্য ভারত জুড়ে অপুষ্টি কমাতে পরিমাপযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *