আগরতলা, ২৪ সেপ্টেম্বর: ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তর পূর্বাঞ্চলে উগ্রপন্থী সমস্যার অবসান হয়েছে। জাতীয় সেবা প্রকল্প (এনএসএস) ও এনসিসি স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পাঠক্রমের এক অপরিহার্য অংশ। সমাজসেবা, দেশপ্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ, সংহতি এবং সর্বোপরি উন্নত চেতনা নিয়ে জীবনকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এনএসএস এবং এনসিসি’র বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আজ আগরতলা টাউনহলে উত্তর পূর্ব এনএসএস উৎসব-২০২৪’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
উল্লেখ্য, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের ত্রিপুরা স্টেট এনএসএস সেল এবং কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রকের গৌহাটিস্থিত এনএসএস রিজিওন্যাল ডাইরেক্টরের যৌথ উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসব আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত মানুষ হওয়া এবং নিজের অন্তর্নিহিত মেধাকে শক্তিশালী করা ছাত্র-জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সুন্দর সমাজ গড়তে যুব সমাজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এজন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা আবশ্যক। ড্রাগ মুক্ত, প্লাস্টিক মুক্ত, দুষণ মুক্ত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রেও এনএসএস স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানব সম্পদের প্রায় ৬৫ শতাংশই যুব সমাজ। দেশের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে যুবসমাজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুব সমাজকে নিয়ে উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক সহ সামগ্রিক উন্নয়নে এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়। তিনি এই অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষ্মী নামে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘হীরা’ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা সহ গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এর ফলে দেশের উন্নয়নের মূলস্রোতের সাথে এই অঞ্চল সরাসরি যুক্ত হয়েছে। যা বিগত কয়েক দশক ধরে উপেক্ষিত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ছাড়া দেশের বিকাশ সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন শান্তি না থাকলে উন্নয়নের কাজ কোনভাবেই সম্ভব নয়। এই জন্য তিনি রাষ্ট্রহিতে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে শান্তি বজায় রাখতে ১২টি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ত্রিপুরায়ও তিনটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তিনি বলেন, এধরণের উৎসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ববোধের ভাবনার পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন নয়া ও বৈভবশালী ভারত নির্মাণের দিশায় দেশ এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে দেশের যুব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলিতে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদকে ভিত্তি করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি আগামীদিনে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, গোয়াহাটিস্থিত এনএসএস রিজিওন্যাল ডিরেক্টরেটের রিজিওন্যাল ডিরেক্টর জাংজিলং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব বিষয় ও ক্রীড়া দপ্তরের অধিকর্তা এস বি নাথ। উপস্থিত ছিলেন সৈনিক ওয়েলফেয়ার ডিরেক্টরেটের সহঅধিকর্তা ডা. (মেজর) কাকলি ধর। অনুষ্ঠানে সৈনিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে এনএসএস স্বেচ্ছসেবক দ্বারা সংগৃহিত ২ লক্ষ ১১ হাজার ৮৮৭ টাকার ড্রাফট মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সৈনিক ওয়েলফেয়ার ডিরেক্টরেটের সহঅধিকর্তা ড. (মেজর) কাকলি ধরের হাতে তুলে দেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ২০২৩-২৪ সালের এন এস এস কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য পারদর্শীতার জন্য রাজ্যের সেরা এনএসএস প্রোগ্রাম অফিসার এবং এনএসএস স্বেচ্ছাসেবীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে একটি স্মরনিকারও আবরণ উন্মোচন করা হয়।