ইম্ফল, ১১ সেপ্টেম্বর : সহিংসতার আগুনে পুড়েই চলেছে মণিপুর। কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বুধবার ছাত্ররা রাজভবনের দিকে মিছিল করার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবুও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এদিকে, ইনার মণিপুরের কংগ্রেস সাংসদ এ বিমল আকোইজাম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি সহিংসতা সংকট নিয়ে গভীর বেদনা প্রকাশ করেছেন। তাঁর উদ্বেগ, মণিপুরে শান্তি পুনরুদ্ধারের দাবি ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে।
একজন সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে জারি করা কারফিউ আজ সকালেও অব্যাহত রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশ কর্মীরা শহরে ক্রমাগত টহল দিচ্ছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি উত্তেজনাকর থাকলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মণিপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে মঙ্গলবার ছাত্ররা রাজভবনের দিকে মিছিল করেছিল। ছাত্র ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে বহু ছাত্র আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, রাজ্যের ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলার অবনতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। এই দাবিতে চাপ দিতে রাজভবনের দিকে মিছিল করছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকার একটি সংশোধিত আদেশ জারি করে জানিয়েছে, ছাত্রদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট পরিষেবার উপর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাজ্যের পাঁচটি জেলায় প্রযোজ্য হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ও মার্বেল ছুড়ে মেরেছে। এ কারণে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। ওই বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিম জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। ছাত্র সংগঠন দাবি করেছে, সংঘর্ষে ৫৫ জনেরও বেশি ছাত্র আহত হয়েছে এবং তাদের রিমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে জারি করা এক বিবৃতিতে রাজভবন জানিয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। দাবি পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাজ্যপালের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। রাজ্যপাল আশ্বস্ত করেছেন, মণিপুরের ছাত্র ও জনগণের স্বার্থে পদক্ষেপ নেবেন। এদিকে, পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, কাংপোকপি জেলায় তল্লাশি অভিযান চলছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক।
পুলিশ জানিয়েছে, পার্বত্য ও উপত্যকা জেলার প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অনুসন্ধান অভিযান এবং এলাকা আধিপত্য পরিচালিত হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের সময় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, একটি পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি স্নাইপার রাইফেল, একটি ৭.৬২ মিমি স্নাইপার রাইফেল, একটি এসবিবিএল বন্দুক, একটি ইমপ্রোভাইজড লং রেঞ্জ মর্টার (পাম্পি), একটি ইমপ্রোভাইজড শর্ট রেঞ্জ মর্টার, একটি মোবাইল আইইডি, চারটি ডিটোনেটর সহ এইচই-৩৬ হ্যান্ড গ্রেনেড, তিনটি স্টান শেল, তিনটি অ্যান্টি-রায়ট রাবার বুলেট, ১৩ রাউন্ড তাজা গোলাবারুদ, দুইটি লং রেঞ্জ বোমা, একটি বাওফেং রেডিও সেট, ছয়টি ফাঁকা কার্তুজ, একটি টিয়ার স্মোক শেল সিএস, দুইটি টিয়ার স্মোক শেল ডুয়াল এবং দুইটি ৩৬ আর্মিং রিং লুনখোজাং রিজ কাংপোকপি জেলা থেকে উদ্ধার হয়েছে।
এই সবের মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন ইনার মণিপুরের কংগ্রেস সাংসদ এ বিমল আকোইজাম। সহিংসতা রোধে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অমিত শাহকে তাঁর চিঠিতে আকোইজাম চলমান সংকটে অবৈধ অভিবাসী, বিদেশী উপাদান এবং ড্রাগ মাফিয়াদের জড়িত থাকার অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা বিশেষত বেদনাদায়ক। সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলি ১৪ আগস্টকে ‘পার্টিশন হররস মেমোরিয়াল ডে’ হিসাবে পালন করার জন্য বিবেচনা করে।
সাংসদ বলেন, গুজরাটে যদি একই ঘটনা ঘটত তবে শাহও গভীরভাবে দুঃখিত হতেন। তিনি সহিংসতা রোধে নিরাপত্তা বাহিনী নির্ণায়ক এবং ন্যায়বিচারের সাথে কাজ করুক তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে দুঃখিত যে এই সহিংসতার কারণে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং প্রায় ৬০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। ‘যখন আমি এই চিঠিটি লিখছি, হাজার হাজার অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ (আইডিপি) এখনও শোচনীয় পরিস্থিতিতে ত্রাণ শিবিরে বাস করছেন। শুধু তা নয় নজিরবিহীন সহিংসতাও অব্যাহত রয়েছে।’