ভয়াবহ বন্যায় ত্রিপুরাকে “প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভাবিত এলাকা” হিসেবে ঘোষণা

আগরতলা, ২৯ আগস্ট: সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ত্রিপুরাকে ন্যাচারাল ক্যালামিটি এফেক্টেড এরিয়া অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভাবিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। গত ২৪ আগস্ট মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে টিডিএমএ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, টানা বৃষ্টিপাতে রাজ্যে নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সোনামুড়ায় গোমতী নদীর জলস্তর ধীরে ধীরে কমছে। তাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বন্যায় মানুষের জীবন এবং সরকারী ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। তাই রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে প্রাকৃতিক বিপর্যস্ত এলাকা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

প্রসঙ্গত, বন্যায় মোট বত্রিশ জন ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন, দুই জন আহত হয়েছেন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাছাড়া এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের দ্বারা ৩৪৬টি ত্রাণ শিবির চালু রয়েছে, যা রাজ্যে প্রায় ৫২,৯০৬ জন আশ্রয় রয়েছেন। জেলা প্রশাসন খাদ্য, পানীয় জল এবং চিকিৎসা সহায়তা ইত্যাদি সহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করছে। যেকোনো পানিবাহিত রোগের বিস্তার রোধে, আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়মিত টয়লেট পরিষ্কার, ব্লিচিং, জীবাণুনাশক স্প্রে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

তাছারা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব বি সি জোশীর নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় দল (আইএমসিটি) গতকাল রাজ্যে পৌঁছেছে। তাঁরা রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেন। বন্যা পরিস্থিতি এবং প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ নিয়ে গতকালই দলকে বিস্তারিত আলেচনা করা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানিয়েছে, আজ ওই কেন্দ্রীয় দল  দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং গোমতী জেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ঘটনাস্থলে ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের জন্য মাঠে নেমেছে। বন্যার প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য প্রতিদিন ১২৭১ জন চিকিৎসকরা বিভিন্ন ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করছেন। এছাড়াও, তারা ৪৩৮৮৭ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য ১৮৬৭ টি স্বাস্থ্য শিবির পরিচালনা করেছে। তাছারা, ১৮টি বিদ্যুৎ বিভাগে ১০০% বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতি এবং সিপাহিজলা জেলায় অবস্থিত বাকি ৬টি বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে শেষ হবে।

তাছাড়া, ১৬৩টি স্কুল বাদে রাজ্যের সমস্ত ৪৭৩৪টি স্কুল খোলা হয়েছে। যে সব স্কুল খোলা হয়নি সেগুলো হল ধলাই ১৪টি, সিপাহিজলা ৩৩টি, গোমতী জেলার ৬৫টি এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা ৫১টি।

সাম্প্রতিক বন্যার কারণে শ্রমিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তাদের জীবিকা ও আয়ের ক্ষতি হয়েছে। শ্রম বিভাগ থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রতি শ্রমিক প্রতি ৪হাজার টাকা এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের ৪২৯৮১জন নির্মাণ শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *