হাফলং (অসম), ২৪ জুলাই (হি.স.) : কাছাড় জেলায় গত ১৬ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যে তিন মার জঙ্গি নিহত হয়েছিল এরা কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন না। এরা সাধারণ নাগরিক তথা নিরীহ মার জনগোষ্ঠীয় যুবক ছিল। এদের জঙ্গি সাজিয়ে ভুয়ো এনকাউন্টারে অসম পুলিশ হত্যা করেছে, অভিযোগ ডিমা হাসাও জেলার মার উইমেন অ্যাসোসিয়েশন এবং কুকি উইমেন অ্যাসোসিয়েশনের।
বুধবার অসমের অন্যতম পাহাড়ি জেলা ডিমা হাসাওয়ের সদর শহর হাফলঙে মার উইমেন অ্যাসোসিয়েশন এবং কুকি উইমেন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এক প্রতিবাদী গণ-মিছিল পরিচালিত হয়েছে। প্রতিবাদী মিছিলে পাহাড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মার ও কুকি জনগোষ্ঠীর সহস্রাধিক পুরুষ-মহিলা শামিল হয়েছিলেন। হাফলং টাউন কমিটির মাঠ থেকে মিছিলটি বেরিয়ে হাফলং শহর পরিক্রমা করে জেলাশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে আসে।
এখানে মার উইমেন অ্যাসোসিয়েশন এবং কুকি উইমেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডিমা হাসাওর জেলাশাসক সীমান্তকুমার দাসের মাধ্যমে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার উদ্দেশ্যে এক স্মারকপত্র প্রেরণ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রেরিত স্মারকপত্রে তাঁরা লিখেছেন, কাছাড় জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লালংগাই মার, লালবিকুং মার এবং যশোয়া লালরিনসাং নামের যে তিনজন নিহত হয়েছে তারা কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল না। তারা আইন মেনে চলা সাধারণ নাগরিক ছিল। অসম পুলিশ এই তিন নিরীহ যুবককে জঙ্গি সাজিয়ে ভুয়ো সংঘর্ষে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে স্মারকপত্রে ওই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত দাবি করে ‘আমাদের ন্যায় বিচার চাই’ এবং সমগ্র ঘটনার এক উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনা অতি অমানবিক। তাই ঘটনার তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে পুনরায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত না হয় সে ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া এবং সেদিনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবি জানানো হয়েছে স্মারকপত্রে।
প্রতিবাদকারীরা সাংবাদিকদের বলেন, কাছাড় জেলায় আসম পুলিশ যেভাবে তিন নিরীহ মার যুবককে জঙ্গি সাজিয়ে ভুয়ো সংঘর্ষ বলে হত্যা করেছে তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাঁরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়েছে সে সব সূত্রে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তাই এর উচিত তদন্ত করে তিন মার যুবকের পরিবার সহ আমাদের ন্যায় চাই।
তাঁরা বলেন, আজ শুধু হাফলঙে এই প্রতিবাদী মিছিল হচ্ছে না, সমগ্র বিশ্বে যে সব জায়াগায় মার কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করছেন, সেই সব জায়গায়ও আজ (বুধবার) ওই ঘটনার প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই ভোর রাতে কাছাড় জেলায় পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে তিন মার জঙ্গি নিহত হওয়ার পাশাপাশি নিহতদের কাছ থেকে পুলিশ বহু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।