দুর্গাপুর, ১৭ জুলাই (হি. স.) : বাঁকুড়া – মশাগ্রাম রেলপথ তৈরীর কাজ প্রায় শেষের মুখে। তৃতীয়বার সাংসদ হয়ে এবার বাঁকুড়া- দুর্গাপুর রেলপথ তৈরীতে উদ্যোগী হলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। মঙ্গলবারই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে সাক্ষাত করে আবেদন করেন তিনি। সাংসদের এই উদ্যোগে খুশী বাঁকুড়াবাসী। লালমাটির দেশ বাঁকুড়া। রাঢ়বঙ্গের এই জেলায় নানান শিল্প-সংস্কৃতির বৈচিত্রে ভরা। ইতিহাস বিজড়িত প্রাচীন মন্দিরে ঘেরা। তারওপর প্রকৃতির অপূর্ব পরিবেশ পর্যটকদের মনমুগ্ধ করে তোলে। একটা সময় বাঁকুড়া-দামোদর রিভার (বিডিআর) রেল যোগাযোগ ইতিহাস বহন করেছিল। পরবর্তীকালে ওই রেলপথ আরও উন্নতি করা হয়। ইদানীং বিষ্ণুপরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ওই রেলপথ মশাগ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। এবং যার কাজ চলছে জোরকদমে। প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পুর্ন হয়েছে। এই রেলপথের ফলে বাঁকুড়া কলকাতা রেল যোগাযোগ আরও সহজ করে তুলবে। তৃতীয়বার সাংসদ হয়ে এবার বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থেকে দুর্গাপুর রেলপথ নির্মানের উদ্যোগ নেন। প্রায় ২৫ কিলোমিটার এই রেলপথ তৈরী হলে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর যোগাযোগ ব্যাবস্থা আরও সহজ হবে। দামোদর নদের দক্ষিণপ্রান্তে রাঢ়বঙ্গের জঙ্গলমহল জেলাগুলি। যেখানে গ্রামীন কৃষি ও হস্তশিল্পের প্রসিদ্ধস্থানের পাশাপাশি রয়েছে বড়জোড়া শিল্পতালুক ও খনি অঞ্চল। আর অপরদিকে উত্তরপ্রান্তে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর, রাণীগঞ্জ, আসানসোল। এছাড়াও দুর্গাপুরে রয়েছে একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর সড়কপথ থাকলেও সিঙ্গেল লেন হওয়ায় দুর্ঘটনাপ্রবন যেমন তেমনই যানবাহনের চাপ রয়েছে। তারওপর বড়জোড়ায় নিত্য ‘যানজট’ সাধারন মানুষের যাতায়াতে নাকাল করে তোলে। যার ফলে সময়ে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অফিসকর্মীদের। প্রায় হাজার দশেক লোকের নিত্য যাতায়াত রয়েছে ওই সড়কপথে। তাছাড়াও বাঁকুড়া থেকে কৃষিজ পণ্যে দুর্গাপুর আসানসোলে সদর বাজার রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় হাজার দুয়েক ঠিকাশ্রমিক বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুরে নিত্য যাতায়াত করে। আর তাই বাঁকুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী বাঁকুড়া- দুর্গাপুর রেলপথ। রেল যোগাযোগ তৈরী হলে রাঢ়বঙ্গের জেলাগুলির উন্নতি আর একধাপ এগিয়ে যাবে। শুধু বাঁকুড়া- দুর্গাপুর নয়, বাঁকুড়া থেকে খাতড়া- ঝাড়গ্রাম রেলপথের দাবীও দীর্ঘদিনের। যদিও ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ডাঃ সুভাষ সরকার। তবে বেলিয়াতোড় ষ্টেশন থেকে দুর্গাপুর প্রায় ২৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মান হলে বাঁকুড়াবাসীর দাবী অনেকটাই মিটবে। এই দুই ষ্টেশনের মাঝে বিস্তির্ন জঙ্গলমহল হাতিদের আবাসস্থল। স্বাভাবিকভাবে রেলপথ নির্মান হলে এলিফেন্ট করিডরের বিষয়টিও সামনে আসবে। একই সঙ্গে দামোদর নদের ওপর দ্বীতিয় সেতু করার বিষয়টি আবশ্যিক রয়েছে। বর্তমান সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ প্রচুর রয়েছে। ফলে প্রায়ই সেতু বেহাল হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে, বিশেষজ্ঞ মতে, রানিগঞ্জ থেকে মেজিয়া তাপবিদ্যুত কেন্দ্র পর্যন্ত পণ্যপরিবহনের রেলপথ রয়েছে। যদিও সেটি সিঙ্গেল লেন। প্রায় ১০ কিলোমিটার ওই রেলপথ বেলিয়াতোড় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হলে তাতে যেমন ব্যায় কম হবে তেমনই আসানসোল- বেলিয়াতোড়- বাঁকড়া রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এছাড়াও দামোদরের ওপর নতুন করে আপাতত রেলসেতু নির্মানের দরকার পড়বে না। এদিন সৌমিত্র খাঁ বলেন,” বাঁকুড়া- মশাগ্রাম রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হতে আর কিছু অংশই বাকি। সেটা দ্রুত সম্পন্ন করার আবেদন করেছি। দূর্গাপুজোর আগেই আশা রাখছি ট্রেন চলাচল শুরু হবে। বেলিয়াতোড়-দুর্গাপুর রুটে নতুন রেলপথ স্থাপনের আর্জি নিয়ে মাননীয় রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জির সাথে সাক্ষাৎ করেছি। মাননীয় মন্ত্রী আমার উভয় দাবিই মনোযোগ সহকারে শুনলেন এবং বাঁকুড়া-মশাগ্রাম রেলপথের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে সাথে সাথে যোগাযোগ করে বাকি অংশ দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিলেন। এবং বেলিয়াতোড়-দুর্গাপুর বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করে এই রুটে আধিকারিক স্তরে সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিও প্রদান করেছেন।” তিনি বলেন কেন্দ্র সরকারের উন্নয়নমুখী একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমেই বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর এগিয়ে যাবে এই বিশ্বাস আমি রাখি।” সাংসদ সৌমিত্র খাঁ’য়ের এই উদ্যোগে খুশী রাঢ়বঙ্গবাসী।