নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ জুলাই: বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রবিবার থেকে পুরনো হাবলিতে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খার্চিপূজা ও মেলা।
এদিন পুরানো হাবেলি কৃষ্ণমালা মঞ্চে সাত দিনব্যাপী খার্চি উৎসবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। অনুষ্ঠানের উপস্থিত ছিলেন খার্চি পূজা এবং মেলা কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক তথা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া,পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ শীল, অমিত নন্দী সহ অন্যান্যরা।মুখ্যমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে রাজ্যের জাতি উপজাতির মিলন উৎসবের সাফল্য কামনা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী পূজা এবং অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় ত্রিপুরার রাজন্যবর্গ প্রকৃতির পূজারী ছিলেন। তিনি উৎসবকে কেন্দ্র করে কমিটির উদ্যোগে সবুজায়নের বার্তার প্রশংসা করেন। মেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক রতন চক্রবর্তী খার্চি পূজার ইতিহাস তুলে ধরেন। এবছর খার্চি উৎসবে অন্যান্য বছরে তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া বলেন একসময় নেপালের পর বিশ্বের মধ্যে ত্রিপুরাই হিন্দু রাষ্ট্র ছিল। ত্রিপুরার রাজারা বহু দেশ ঘুরে সাড়ে ৫০০ বছর আগে থেকেই সনাতন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বলেন অনেকে দুর্গাপূজাকে বাঙালি উৎসব বলে আলাদা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ১৫০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল। অথচ সাড়ে ৫০০ বছর আগেই ত্রিপুরায় ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির তৈরি হয়েছিল। ত্রিপুরার জনজাতিরা সনাতন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বিধায়ক জমাতিয়া আরো বলেন, গত ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে থেকে ত্রিপুরাতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। হিন্দু সনাতনীদের থেকে উপজাতিদের অনুষ্ঠান আলাদা করে দেখানো হচ্ছে। এর পেছনে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী ১৪ দেবতা মন্দিরে গিয়ে পূজা দেন।
পূজার প্রথম দিনেই খার্চিপূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে ধর্ম প্রাণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। ত্রিপুরার রাজ পরিবার এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও মেলার সূচনা করেছিল। এটি মূলত উপজাতিদের ধর্মীয় উৎসব হলেও বর্তমানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল অংশের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী মেলা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা প্রাঙ্গণে বহু সংখ্যক দোকানপাট খোলা হয়েছে। মেলা ও উৎসবের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত প্রশাসনের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবছর মেলায় রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটবে বলে উদ্যোক্তারা আশা ব্যক্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত এ বছর মেলা কমিটি দর্শনার্থীদের ১৫ হাজার চারা গাছ বিতরণ করবে। সাত দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিনেই দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

