সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলির ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনাসভা উকাপা স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষের

হাফলং (অসম), ১৪ জুলাই (হি.স.) : সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলির ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল ২০১৯ বাতিলের দাবিতে ডিমা হাসাও ষষ্ঠ তফশিলি সুরক্ষা সমিতি শুক্রবার থেকে হাফলং জেলা কমিশনার কার্যালয়ের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন ধর্মঘটে বসেছে। অবশেষে ষষ্ঠ তফশিলির প্রস্তাবিত ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল ২০১৯ নিয়ে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষ আজ রবিবার হাফলং জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে জেলার বিভিন্ন দল ও সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, এনজিও এবং বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীর বৃহৎ সংগঠন, গ্রামপ্রধান, মৌজাদারদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই বিল নিয়ে আলোচনা পরামর্শ করতে সভার আহ্বান জানিয়েছেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষ।  কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই পরামর্শমূলক সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ষষ্ঠ তফশিলির প্রস্তাবিত ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল বাতিলের দাবিতে অনশন ধর্মঘটকারী সুরক্ষা সমিতিকে।   এদিকে এই ষষ্ঠ তফশিলির ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল নিয়ে ডিমা হাসাও জেলায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন দল সংগঠন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিলে কী রয়েছে সে সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ষষ্ঠ তফশিলির প্রস্তাবিত ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল পাস হলে এর ক্ষমতা হ্রাস হবে এবং পাহাড়ি জেলার মানুষ নিজের ভূমির অধিকার হারাবে। এছাড়া এই বিলের মাধ্যমে পাহাড়ি জেলায় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদ অর্থনৈতিক ক্ষমতা হারাবে ইত্যাদি অভিযোগ উঠছে।   এমনকি এই সব অভিযোগ উত্থাপন করে ষষ্ঠ তফশিলি সুরক্ষা সমিতি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির মতো রাজৈতিক দল এই বিল বাতিলের দাবি তুলেছে।   কিন্তু উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি, সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলির প্রস্তাবিত ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল পাস হলে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের আরও অধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দের হার বাড়বে। বর্তমানের উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ উন্নীত হয়ে ডিমা হাসাও স্বশাসিত টেরিটরিয়াল পরিষদ হবে। তাছাড়া পরিষদের আসন সংখ্যা ২৮ থেকে বেড়ে ৪০ হবে। মহিলাদের জন্য দুটি আসন সংরক্ষিত করা হবে। ভিলেজ কাউন্সিল গঠন হবে। মিউনিসিপাল কাউন্সিল গঠনের পাশাপাশি তৃণমূলস্তরে ক্ষমতা অধিক হবে। টেরিটরিয়াল পরিষদের হাতে আরও অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করা হবে।   আর এতে পাহাড়ি জেলার মানুষই উপকৃত হবেন। এমনটাই রবিবার এই পরামর্শমূলক সভায় সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের অধ্যক্ষ মোহিত হোজাই। তিনি বলেন, ২০১২ সালে ডিএইচডি এবং ডিএইচডি (জে) সরকারের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছিল। এ নিয়েই এই প্রস্তাবিত বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। ডিএইচডির উভয় গোষ্ঠী পাহাড়ি জেলার সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যেই এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল বলে মন্তব্য করেন মোহিত।  তবে রিরোধী দলগুলি এই বিলকে নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু করছে বলে অভিযোগ করে মোহিত হোজাই বলেন, এই বিল নিয়ে আলোচনা করতে কিছু দিনের মধ্যেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসবে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত কর্তৃপক্ষ।   এদিকে ডিমা হাসাও জেলার ষষ্ঠ তফশিলি সুরক্ষা সমিতির অন্যতম সদস্য বলেন, ষষ্ঠ তফশিলির  প্রস্তাবিত ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল ইতিমধ্যে লোকসভায় পেশ করা হয়েছে। এই বিলের বিরোধিতা করে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত করার দাবি আমরাই করেছিলাম। কিন্তু এই আলোচনাসভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে অন্য স্টেকহোল্ডারদের ডাকা হয়েছে যাঁদের এখন পর্যন্ত এই বিল নিয়ে সম্যক ধারণা নেই। তবে আজ সবার হাতে এই বিলের কপি এসেছে। তাই এখন দেখার, এই আলোচনাসভার পর কী ধরনের প্রস্তাব বেরিয়ে আসে।   তবে ষষ্ঠ তফশিলির প্রস্তাবিত ১২৫ নম্বর সংশোধনী বিল নিয়ে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কর্তৃপক্ষ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে এই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন ড্যানিয়েল লাংথাসা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *