ত্রিপুরায় চলতি বছরে ৬০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের মাদক ও বিভিন্ন পাচার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত এবং ৩৮৪ জন অনুপ্রবেশকারীকে জালে তুলতে সক্ষম হয়েছে বিএসএফ

আগরতলা, ১১ জুলাই : ত্রিপুরায় সীমান্তে অপরাধ ঠেকাতে বিএসএফ সর্বোত প্রয়াস জারি রেখেছে বলে দাবি করেছে। তাতে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের মাদক ও বিভিন্ন পাচার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনুপ্রবেশের দায়ে চলতি বছরে ৩৮৪ জন বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিক এবং রোহিঙ্গাকে জালে তুলতে পেরেছে। এক প্রেস বিবৃতিতে বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ার এই তথ্য দিয়েছে। 

বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের দাবি, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের মাদক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাতে, ২৫ কোটি ১৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৫,০৩,৬৭৪টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪ কোটি ৪৩ লক্ষ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ৬,৮২৬.২৫ কেজি গাঁজা, ১ কোটি ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫৬ টাকা মূল্যের ৫১,৯৬৪ বোতল ফেন্সিডিল এবং ৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ৪,৭৯৬ বোতল বিলেতি মদ রয়েছে। সাথে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের ৯৩০টি গবাদী পশু, ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার ৮২৮ টাকা মূল্যের ৪৬৬.২৬ গ্রাম স্বর্ণ এবং ২৮ কোটি ২৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৩১ টাকা মূল্যের অন্যান্য পাচার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬০ কোটি ৭৮ লক্ষ ৫ হাজার ৩১৫ টাকা মূল্যের মাদক ও বিভিন্ন পাচার সামগ্রী ওই সময়ের মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, বিএসএফ দাবি করেছে। 

বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের আরও দাবি, চলতি বছরে ৩৮৪ জন বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিক এবং রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক করা হয়েছে। এ-বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যে বিএসএফ জানিয়েছে, ওই ৩৮৪ জনের মধ্যে ২০৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক, ১৬০ জন ভারতীয় নাগরিক এবং ১৬ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন। এছাড়া ১৬ জন টাউটকেও ওই সময়ের মধ্যে আটক করা হয়েছে। 

বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের বক্তব্য, সীমান্তে বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়াস জারি রয়েছে। বর্তমানে ৮টি স্থানে সিঙ্গল রো ফেন্স নির্মাণ বাকি রয়েছে। তবে, খুব শীগ্রই ওই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হবে। পাশাপাশি জানিয়েছে, ৪টি স্থানে সিঙ্গল রো ফেন্স নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ার বোঝাতে চাইছে, সীমান্তে অপরাধ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় নাগরিকদের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে। তার জন্য বিভিন্ন সময় জনসম্পর্ক কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এক্ষেত্রে, সীমান্তবর্তী নাগরিকদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্বাস্থ্য সহায়তা সিস্টেম, পড়াশুনার সামগ্রী এবং ক্রীড়া সামগ্রী বন্টন করা হচ্ছে। 

বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের সাফ কথা, সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে অপরাধ ঠেকাতে থার্মাল ইমেজার্স, নাইট ভিশন ডিভাইস, সিসিটিভি এবং ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বর্ডার ফ্লাড লাইট রাতের বেলায় এলাকা আলোকিত করছে। এছাড়াও, ইম্প্রোভাইজড পদ্ধতি এবং অনুপ্রবেশকারী অ্যালার্ম লাগানোর মাধ্যমে সীমান্ত কাঁটা তারের বেড়া রক্ষা করা যাচ্ছে।

বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের আইজি জানিয়েছেন, সম্প্রতি শিলং-য়ে বিজিবি-র সাথে বৈঠকে সীমান্তে অপরাধের সাথে জড়িতদের তালিকা বিনিময় হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ঐকমত্যে পৌছেছে। তাঁর কথায়, উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নোডাল অফিসার একে অপরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন এবং বিভিন্ন তথ্য ভাগ করে নিচ্ছেন। দিন ও রাতে একযোগে সমন্বিত টহলের অধীনে ঘন্টার পর ঘন্টা বিএসএফ এবং বিজিবি সৈন্যরা যৌথ টহল চালিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। সাথে তিনি যোগ করেন, রেলওয়ে স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের মতো এলাকা থেকে অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিক ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের ধরতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *