নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি চেয়ে গুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করলেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুলাই: রাজ্যের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় কেন্দ্রের কাছে এবার একগুচ্ছ প্রস্তাব রেখে কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।

সম্প্রতি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নগর উন্নয়ন মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী রতন লাল নাথ এই বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে তিনি আগরতলা শহরে অতিরিক্ত জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্য অমৃত টু জিরো প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের প্রস্তাবিত ২৬ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন প্রদানের ” লাইট হাউস” প্রকল্পটি দ্রুত সম্পুন্ন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ বহন করে, এক্ষেত্রে এ রাজ্যে অতিরিক্ত নির্মাণ খরচের বিবেচনায় কেন্দ্রের অংশীদারিত্ব অর্থ বাড়ানোর অনুরোধও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে এ রাজ্যের মানুষেরা দারুন ভাবে উপকৃত হবেন। 

আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ফান্ড এর আওতায় ত্রিপুরায় চারটি প্রকল্প অনুমোদিত হলেও বিগত বছরে এর জন্য যে পরিমাণ তহবিল দেওয়া হয়েছিল এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য তিনি কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

মন্ত্রী রতনলাল নাথ এদিন বলেন, নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্প এখানে জারি রয়েছে, তা সরকারী তরফে অত্যন্ত সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়িত করা  হচ্ছে  যাতে করে এর জন্য বরাদ্দকৃত প্রতিটি অর্থ মানুষের কাজে লাগে। এর পাশাপাশি রাজ্য নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশনের মাধ্যমে আরো বিস্তারিত তথ্য সভায় তুলে ধরেন। তারই সাথে নগর উন্নয়নের অধিকর্তা রজত পান্তকে সঙ্গে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে বিদ্যুৎ মন্ত্রী এদিন নগর উন্নয়ন দপ্তরের কাজকর্মের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে এর রাজ্যের প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা তুলে ধরেছেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্যের কুড়িটি শহরের মধ্যে ১ পৌর নিগম, ১৩ টি পৌরসভা এবং ছয়টি নগর পঞ্চায়েত রয়েছে, যা একসঙ্গে ৩৩৪টি ওয়ার্ডের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এ রাজ্যের সীমিত আর্থিক সংস্থান সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং নগর উন্নয়ন  মন্ত্রককে অভিনন্দন জানান মন্ত্রী রতন লাল নাথ।

তিনি  উল্লেখ করেন, রাজ্যে ১২টি ইউএলবিএস এ পানীয় জল, রাস্তা এবং নিষ্কাশনিক ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত চাহিদা পূরণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ৫৩০ কোটি টাকার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ২০১৯ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতে সেরা পারফরমেন্সকারী রাজ্য এবং ২০২১ সালে ১৫০ দিনের চ্যালেঞ্জ বিভাগে দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে সেরা পারফরম্যান্স কারী রাজ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১২৩৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা  ব্যয় বরাদ্দে মোট ৮৬০০১ টি ঘরের অনুমোদন হয়েছিল,  এরমধ্যে ৬৬ হাজার ৬০৮ টি ঘর নির্মিত হয়ে যায়। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাজ্যে আবাসনের চাহিদা মেটাতে নতুন করে আরো ৬৫০৫ টি  বাড়ি অনুমোদিত হওয়ায়  মন্ত্রী কেন্দ্র সরকারকে ধন্যবাদ জানান । এই প্রকল্পের জন্য মঞ্জুর হয়েছিল ১২৩৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা।  যার মধ্যে ১১৮৩ কোটি টাকার উপর সুবিধাবাদীদের কাছে বিতরণ করা হয়ে গিয়েছে।

স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাজ্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, এক্ষেত্রে ছোট রাজ্যের বিভাগে ত্রিপুরা পরিচ্ছন্নতায় পুরষ্কৃত হয়েছে। কমিউনিটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রেও রাজ্য এগিয়ে রয়েছে। অমৃত মিশন প্রকল্পে ৯টি শহরের ২৭ টি জল সরবরাহ প্রকল্প  নির্মিত হয়েছে।  ৬ টি শহরের নয়টি জলাশয়ের পুনরুজ্জীবন ও সৌন্দর্যায়নের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ত্রিপুরা আরবান লাইভলি হুড মিশনের অধীনে ৫৫৫৬ টি স্বনির্ভর দল গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ১৭৪ টি স্থানীয় গোষ্ঠী তহবিল পেয়েছে । এরা বাঁশ বেতের কারুকাজ, সাবান উৎপাদন , আগরবাতি ইত্যাদি প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে । ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন এর মতো ই-কমার্স প্লেট ফরমেও তাদের পণ্য আপলোড করা হয়েছে এবং এর  বাজার তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সমৃদ্ধি যোজনায় ফুটপাতের হকারদের চিহ্নিত করে তাদের সার্টিফিকেট এবং পরিচয় পত্র প্রদান করা হয়েছে। এমনকি তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে । কেন্দ্র সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় ত্রিপুরা সত্যিকার অর্থেই হীরা মডেলে চলছে। মন্ত্রী আরো বলেছেন, গত বছরগুলোতে এই মন্ত্রকের দ্বারা যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে, আগামী দিনগুলোতেও আরো বেশি সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা  নেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *