আগরতলা, ১০ জুলাই: ত্রিপুরায় এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৫৬৭৪ জন। তাদের মধ্যে ৯২৪ জন মারা গেছেন। এদিকে, ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রাজ্যে ৮২৮ জন স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৭ জন মারা গেছেন।
এইচআইভি/এইডস এই মারণব্যাধি সারা বিশ্বের জন্য এক ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, সচেতনতার বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব, তা অস্বীকার কররা সুযোগ নেই। রাজ্যেও ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি এই প্রাদুর্ভাব রোধে ক্রমাগত প্রয়াস জারি রেখেছে। সচেতনামূলক কর্মসূচি এবং স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধে চেষ্টা চলছে। রাজ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে এইচআইভি/এইডস মোকাবিলায় কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
কিন্তু গভীর উদ্বেগের বিষয় হল, সাম্প্রতিককালে শিরাপথে মাদক ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধিতে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা এক তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজ্যে ৫৩৩০ জন এইচআইভি সংক্রমিত রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪২৯৫ জন পুরুষ, ১০৩৩ জন মহিলা এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন রয়েছেন। সাথে তিনি যোগ করেছিলেন, ওই তালিকায় ৫৫৮ জন স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া রয়েছেন।
আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরার এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ডা. সমর্পিতা দত্ত জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় এইচআইভি/এইডস মোকাবিলায় সমস্ত রকমের প্রয়াস জারি রয়েছে। কিন্তু, শিরাপথে মাদক ব্যবহারের প্রবনতা বৃদ্ধি এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, প্রতিনিয়ত স্ক্রিনিং এবং সচেতনামূলক কর্মসূচি মাধ্যমে ওই রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।
ত্রিপুরার এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির পক্ষ থেকে সর্বশেষ দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঔষধ নিচ্ছেন এমন এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আজকে পর্যন্ত ৫৬৭৪ জন। তাদের মধ্যে ৯২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, শুধু এইচআইভি সংক্রমণের ফলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য তাদের কাছে উপলব্ধ নেই। সোসাইটির যুগ্ম অধিকর্তার দাবি, এইচআইভি সংক্রমিতের হৃদরোগ, দূর্ঘটনা কিংবা অন্য কোনো রোগ অথবা করোনা আক্রান্ত হয়েও মৃত্যু হয়েছে। ফলে, তার মৃত্যু এইচআইভি সংক্রমণের ফলেই হয়েছে তা এই মূর্হুতে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
এদিকে, এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৮৪৭ জন নতুন এইচআইভি সংক্রমিত শনাক্ত এবং ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তেমনি, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে নতুন ১৭৯০ জন এইচআইভি সংক্রমিত শনাক্ত এবং ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই দুই অর্থবছরেই সবচেয়ে বেশি নতুন এইচআইভি সংক্রমিতের হদিশ মিলেছে। এবিষয়ে সোসাইটির যুগ্ম অধিকর্তার দাবি, ওই দুই বছরে সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই দুই বছরে তিন লক্ষ ৭৬ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
এদিকে, আজ মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা ২০০৭ -২০০৮ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পড়ুয়াদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃতের তালিকা প্রকাশ করেছেন। তার দেওয়া তথ্য অনুসারে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে ২ জন, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ৫ জন, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ৩ জন, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ৪ জন, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ১২ জন, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৮ জন, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৬ জন, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৭ জন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১৩ জন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১৬ জন, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১৩ জন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৩ জন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৭৪ জন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৮২ জন, ২০২১- ২০২২ অর্থবছরে ১৬২ জন, ২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে ২২৭ জন, ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে ১৫৪ জন, ২০২৪- ২০২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১৭ জন এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছেন। মোট সংখ্যা ৮২৮ জনে গিয়ে দাড়িয়েছেন।
এদিকে, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ১ জন, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১ জন, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ৪ জন, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ১ জন, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ১ জন, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১ জন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১ জন, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ২ জন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩ জন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১১ জন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫ জন, ২০২১- ২০২২ অর্থবছরে ৭ জন, ২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে ৭ জন, ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে ২ জন, ২০২৪- ২০২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত হয়ে কারোর মৃত্যু হয়নি। ফলে, এইচআইভি সংক্রমিত পড়ুয়াদের মধ্যে ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

