BRAKING NEWS

বিদ্যালয় একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ জুলাই:
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস কুমার সাহা মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার কাছে প্রেরিত চিঠিতে স্কুল একত্রিকরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা স্বল্প’ এই অজুহাতে রাজ্য সরকার পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার গ্রামীণ অঞ্চলের ১৬০টি বিদ্যালয় এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার গ্রামীণ অঞ্চলের ১৭০টি বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যালয় গুলিকে পাশ্ববর্তী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

ইতি মধ্যেই  পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার এই বিদ্যালয় গুলির তালিকা উভয় জেলার ‘ ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিস’ থেকে জারি করা হয়েছে। একই অজুহাতে রাজ্যের অন্য ৬টি জেলাতেও স্কুল বন্ধ করার প্রয়াস করা হচ্ছে।  রাজ্য সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে পশ্চিম ত্রিপুরা ও উত্তর ত্রিপুরা জেলাসহ রাজ্যের অন্যান্য জেলার সমতল ও পাহাড়ের গ্রামীণ অঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা’ শিক্ষার অধিকার’ থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি আরো বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, জাতি ও সমাজের মেরুদন্ড হলো শিক্ষা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং প্রতি ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আমাদের রাজ্যের সরকার ও শিক্ষা দপ্তর উল্টো পথে হাঁটছে । সুপরিকল্পিত ভাবে রাজ্য সরকার ‘শিক্ষা’ নামক জাতি ও সমাজের মেরুদন্ডের উপর ক্রমাগত বুলডোজার চালাচ্ছে।

যার ফলে বর্তমানে  রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিদ্যাজ্যোতির যে হতাশাজনক ফলাফল হয়েছে তাতে গোটা দেশের সামনে  রাজ্যের বাস্তবিক শিক্ষা-ব্যবস্থার চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাসে শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার এইরকম অবনমন আর কখনো ঘটেছে বলে রাজ্যের মানুষ স্মরন করতে পারছে না। শিক্ষাব্যবস্থার এই চরম অবনতি রাজ্যবাসীর মনে যথেষ্ট পীড়ার সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার এহেন দুরবস্থা নিয়ে  মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষা মন্ত্রীর   উদাসীনতা রাজ্যবাসীকে হতাশ করেছে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস কুমার সাহা বলেন, ২০০৯ সালে কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস সরকার ছিল তখন ‘শিক্ষার অধিকার আইন’ পাশ করানোর মধ্য দিয়ে দেশের সকল অংশের ১-১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য ‘শিক্ষা মৌলিক অধিকার’ করা হয়েছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিককালের নতুন ‘শিক্ষানীতি ২০২০’ শিক্ষাকে বাণিজ্যিকরণ এবং ধনী শ্রেণীর একাধিপত্য স্থাপনের পথ উন্মুক্ত করেছে মাত্র। বর্তমানে শিক্ষায় সাম্রাজ্যবাদ এবং শিক্ষাকে পুঁজিপতি ও কর্পোরেট জগতের হাতের পুতুল বানানোর প্রয়াস চলছে।

বর্তমান শাসক দলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীর সময়েও গ্রাম ও পাহাড়ের মোট ৫৬১ ছোট স্কুলকে শহরের বড় স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। মূলত এই সংযুক্তিকরণের ফলেই রাজ্যের ড্রপ আউট ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশে ড্রপ আউট এর তালিকায় আমাদের রাজ্য প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে। গ্রাম এবং এডিসি অঞ্চলে ছোট স্কুল গুলিকে শহরের বড় স্কুলের সঙ্গে সংযুক্তিকরনের ফলে ড্রপ আউটের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই আরো বাড়বে। তথ্যে জানা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার যে বিদ্যালয় গুলিকে পার্শ্ববর্তী উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্তি করনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেই গ্রাম ও এডিসি ভিলূজ গুলির মধ্যে সর্বাধিক এলাকায় যাতায়াত যোগ্য সুগম পথের অভাব রয়েছে। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা তথাকথিত উন্নত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করবে কিভাবে?অতএব  ত্রিপুরা রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে এবং গ্রাম পাহাড়ের সকল শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা যেন শিক্ষার অধিকার ভোগ করতে পারে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ১৬০টি বিদ্যালয় এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার ১৭০টি বিদ্যালয় বন্ধ না করার আহ্বান জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস কুমার সাহা।

পাশাপাশি ‘শিক্ষা সম্প্রসারণ নীতি’ অবলম্বন করে রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি পাড়ায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই রাজ্যের সবকটি বিদ্যালয়ে উপযুক্ত পরিমাণ শিক্ষক- শিক্ষিকা প্রদান এবং বিদ্যালয় গুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করার জন্য  দাবি জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *