করিমগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাড়ছে তিন নদীর জল, ভাসছে জেলা সদর শহর সহ ২৮০টি গ্রাম

করিমগঞ্জ (অসম), ২০ জুন (হি.স.) : করিমগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে জেলার প্রধান তিন নদী লঙ্গাই, কুশিয়ারা এবং সিংলার জল। ফলে জেলার মানুষকে বন্যাতঙ্ক তাড়া করছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে ভারত-বাংলাদেশে সীমান্ত এলাকায়। আপাতত বৃষ্টি কমলেও, গত কয়দিনের লাগাতার বর্ষণে জেলার প্রায় ২৮০টি গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে। জনমগ্ন জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

করিমগঞ্জ জেলা সদর শহরের নীলমণি রোড এবার প্রথম বন্যার জলে ডুবেছে। সুভাষনগর কালীবাড়ির ভেতরে, মদনমোহন রোড জলমগ্ন। বহু দোকানঘরে জল ঢুকেছে।

গত কয়দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু নাগরিক উঁচু স্থানের সন্ধানে নদী তীরবর্তী বাঁধের ওপর ত্রিপল টাঙিয়ে সংসার গড়েছেন। তাঁরা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা এবং গবাদি পশু নিয়ে। একই দৃশ্য সুপ্রাকান্দি থেকে পোয়ামারা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের পাশেও। এছাড়া লঙ্গাই রেলওয়ে স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে বহু পরিবার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে করিমগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন সুপ্রাকান্দি থেকে পোয়ামারা পর্যন্ত জাতীয় সড়কে সব ধরনের যানবাহনের চালককে গতি নিয়ন্ত্রণ করে চলাচল করতে আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে বন্যার তোড়ে ভেসে গিয়েছে অনেক গ্রামীণ সড়ক। বেশিরভাগ জায়গায়ই বন্ধ হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বুধবার রাতের টানা বৃষ্টি থেকে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। উদ্বেগ কাটছে না কোনওভাবেই।

লঙ্গাই, কুশিয়ারা নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। উপনদী সহ খাল-বিলের জলস্তরও আবার বাড়ছে। অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এ বছরের দ্বিতীয় দফার বন্যা পরিস্থিতি।

করিমগঞ্জের লঙ্গাই রোডের উপর দিয়ে জল প্রবাহিত হচ্ছে। লঙ্গাইয়ের আশপাশ বহু এলাকা প্লাবিত। বহু এলাকায় বন্যার কবলে পড়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার, টেলি যোগাযোগের টাওয়ার। ফলে অনেক জায়গায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বন্যার জলে আটকে পড়া বৃদ্ধ, মহিলা এবং শিশুদের উদ্ধার করছেন এসডিআরএফ জওয়ান এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা।

দ্বিতীয় দফার বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কাঁটাতার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। জলমগ্ন গবিন্দপুর সহ উত্তর লাফাশাইল গ্রামে হাহাকার অবস্থা। ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আসছেন না নো-ম্যান্স ল্যান্ডের বাসিন্দারা। কারণ, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা যে কোনও সময় তাণ্ডব চালাতে পারে গ্রামে। যদিও বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

প্রশাসনের তথ্য, এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৭৯ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২৮ হেক্টর। জেলার মোট ৮০টি শিবিরে রয়েছেন ১৬,৪৯৮ জন পুরুষ, মহিলা সহ শিশু।

ত্রাণ শিবির এবং বন্যাক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের যাতে সমস্যা না হয় এ বিষয়ে আন্তরিক জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগ। জলের প্যাকেট, হ্যালোজেন ট্যাবলেট, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ক্লোরিন সলিউশন ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বিভিন্ন শিবিরে। প্রায় ৮০ জন কর্মচারী বিভিন্ন জায়গায় আপৎকালীন ভিত্তিতে কাজ করে চলেছেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ভয়ংকর বন্যা পরিস্থিতির পুনরাগমের আতঙ্ক তাড়া করছে করিমগঞ্জের জনমনে। যদিও জেলার দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ তথা জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথার্থ পদক্ষেপ সহ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে। বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত কুশিয়ারার জলস্তর ১৫.৫৯, লঙ্গাইয়ের ২৪.৪ এবং সিংলার জলস্তর ছিল ১৯.৩৬৫ মিটার। জল বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *