সঠিক বিচারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন নির্যাতিতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জুন: নিজের স্ত্রীর পেটের সন্তানকে তিন তিনবার খুন করার পর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে এবার জনজাতি সম্প্রদায়ের অন্য এক যুবতীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ইন্দ্রনগরে বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত যুবকের নাম আনসার আলী, পিতার নাম রমজান আলী। তার বাড়ি কৈলাসহর বাঘাছড়া এলাকায়। তার বিরুদ্ধে এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ নিয়ে কৈলাসহর থানায় মামলা করেছেন তার স্ত্রী সোমা বেগম। কিন্তু পুলিশ মামলা নিয়ে অভিযোগ জমা দেওয়ার দুই সপ্তাহ বাদেও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করছেনা বলে অভিযোগ।

পুলিশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত আনসার আলী ও তার ভাই আশফাক আলী সহ কয়েকজন নিয়মিত সোমা বেগমকে হুমকি দিচ্ছেন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। সোমা বেগমের অভিযোগ তাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং জিরানিয়া বাপের বাড়িতে তার আশ্রয়স্থলে দফায় দফায় হামলা করা হচ্ছে। সোমা বেগমের বিবরণ তার বাপের বাড়ি জিরানিয়া চম্পকনগর এলাকায়।

২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ভালবাসার সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ে করার পর তাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে এক বছর পর্যন্ত রাখা হয়। এক বছর পরে তার স্বামী আনসার আলী জিবি হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির বাহানায় আগরতলায় চলে আসে। সে তখন কৈলাসহর শ্বশুর বাড়িতেই ছিলো। সেখানে শ্বশুর বাড়ির লোকরা তাকে নানা ভাবে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতো। পরবর্তীকালে সে একদিন জানতে পারে তার স্বামী আনসার আলী আগরতলায় এসে ইন্দ্রনগরে একটি জনজাতি সম্প্রদায়ের যুবতিকে বিয়ে করে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকছে। বিষয়টি জানার পর সে আগরতলা চলে আসে। আগরতলা ইন্দ্রনগরে ভাড়া বাড়িতে আনসার আলী এবং অবৈধ স্ত্রীকে হাতেনাতে ধরে ফেলে সোমা বেগম।

সে এই ঘটনা নিয়ে পুলিশে মামলা করার হুমকি দিলে আনসার আলী তখন তাকে কোনোক্রমে বুঝিয়ে কুমারী টিলায় আলাদা ভাড়াবাড়ি থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সেই ভাড়া বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে আনসার আলী তার বড় ভাই আশফাক আলীসহ পরিবারের লোকেরা বিভিন্ন সময় এই বাড়াবাড়িতে এসে এবং তাকে কৈলাসহর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ।

২০২২ এবং ২৩ সালের মধ্যে তার পেটে পরপর দুইটি সন্তান আসে কিন্তু এগুলিকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করে অভিযুক্ত স্বামী এমনটাই অভিযোগ সোমা বেগমের। এদিকে চলতি বছরের মার্চে শ্বশুরবাড়ির এলাকার এক নির্জন স্থানে আনসার আলী এবং তার বড় ভাই আশফাক আলী সোমা বেগমকে একটি রাবার বাগানে নিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে এবং তার পেটের সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেটে লাথি মারা হয়।

সোমা বেগম সেখানে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকেরা দৌড়ে এসে তাকে রক্ষা করে। সেখানে তাৎক্ষণিক বিচার করে স্থানীয় লোকজন তাকে পুনরায় শ্বশুরবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর পুনরায় তার স্বামী আনসার আলী, ভাসুর আশফাক আলী, শাশুড়ি নেহারুন বিবি সহ বাড়ির অন্যান্য লোকেরা মিলে তাকে প্রচন্ডভাবে মারধর করে এবং তার পেটে এবং গোপনাঙ্গে লাথি দিয়ে তার পেটের সন্তান খুন করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে তার মা তাকে উদ্ধার করে আনতে গেলে তার মায়ের মাথা ফাটিয়ে দেয় ভাসুর আশফাক আলী।

কোনক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে সোমা বেগমকে তার মা আগরতলা নিয়ে আসে। ১৭ মার্চ সোমা বেগমকে জিবি হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার জানিয়ে দেয় তার পেটের সন্তান মারা গেছে। ছয় মাসের পূর্ণাঙ্গ মৃত সন্তান তার পেট থেকে বের করা হয়। সোমা বেগমের অভিযোগ তার স্বামী আনসার আলী ভাসুর আশফাক আলী পরিকল্পিতভাবে তার পেটের সন্তানকে খুন করেছে। পেটের সন্তান খুনের অভিযোগ সহ সোমা বেগমকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগসহ প্রতারনার অভিযোগ নিয়ে সোমা বেগম কৈলাসহর মহিলা থানায় গত ২০ মে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা করে।

থানায় পুলিশ এই ঘটনায় মামলা নিলেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত আনসার আলীকে গ্রেফতার করার কোনো চেষ্টা করছে না। পুলিশের ব্যর্থতায় আনসার আলী এখনো আগরতলার ইন্দ্রনগর আইটিআই রোডে জনজাতি সম্প্রদায়ের এক যুবতিকে নিয়ে বসবাস করছে বলে অভিযোগ।

অসহায় সোমা বেগম এই ঘটনায় কৈলাসহর শাসকদলের মন্ডল নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। স্থানীয় মন্ডল নেতৃত্ব সোমা বেগমকে নৈতিক সাহায্য করছেন। কিন্তু অভিযুক্ত আশফাক আলী স্থানীয় কংগ্রেস নেতার দাপট খাটিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে রেখেছে বলে অভিযোগ। তাই পুলিশ এখনো তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না।

তাছাড়া আরো অভিযোগ আনসার আলী এবং তার বড় ভাই আশফাক আলীর পরিবার কৈলাসহরে একটি কুখ্যাত পরিবার হিসেবে পরিচিত রয়েছে। আশফাক আলী স্থানীয় মাদক কারবারি এবং তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশে মামলা দেওয়ার পর আশফাক আলীর নেতৃত্বে তার স্বামী আনসার আলী সহ কয়েকজন দফায় দফায় জিরানিয়া চম্পকনগরে সোমা বেগমের বাপের বাড়িতে গিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাদের এই হুমকির মুখে গোটা পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শেষ পর্যন্ত রবিবার নির্যাতিতা সোমা বেগম রাজ্য সরকারের তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *