BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় এখনো ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা উন্মুক্ত রয়েছে, তাই অনুপ্রবেশ এবং পাচার বাণিজ্য সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ : বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের আইজি

আগরতলা, ২২ এপ্রিল : পার্বতী ত্রিপুরায় এখনো ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা উন্মুক্ত রয়েছে। ফলে, অনুপ্রবেশ এবং পাচার বাণিজ্য বিএসএফের সব চেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আজ সোমবার বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের আইজি প্যাটেল পীযূষ পুরুষোত্তম দাস সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন, আগামী ১ বছরের মধ্যে উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ সম্ভব হবে। এদিন তিনি ত্রিপুরায় বিএসএফের ধারাবাহিক সাফল্যের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় ৮৫৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিএসএফ দিনরাত খেটে চলেছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন তিনি।

তাঁর দাবি, ওই সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত বৈরী সংগঠন এনএলএফটি (বিএম) গোষ্ঠীর ১৮ জন উগ্রপন্থী আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। সাথে তিনি যোগ করেন, সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় ৯৪ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে বিএসএফ। এ বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত ব্যাখ্যা, ৯ কোটি ৪৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৪৩টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ১৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ২২ হাজার ৩৯২ কেজি ২৩ গ্রাম গাঁজা, ৩ কোটি ৯১ লক্ষ ১ হাজার ৩৪০ টাকা মূল্যের ২ লক্ষ ১১ হাজার ৬১৬ বোতল ফেন্সিডিল, ৪৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৬০৬ টাকা মূল্যের ২৪ হাজার ৫২০ বোতল বিলেতি মদ, ৩ কোটি ৫৩ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫৮২টি গবাদি পশু, ২ কোটি ৪৮ লক্ষ ১২ হাজার ৪০৯টাকা মূল্যের ৫.৬৬২৫৬৫ কেজি স্বর্ণ এবং ৬০ কোটি ৪৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭১৮ টাকা মূল্যের অন্যান্য পাচার সামগ্রী বিএসএফ উদ্ধার করেছে। তাঁর কথায়, মোট ৯৪ কোটি ৫৬ লক্ষ ৫২ হাজার ৮২৩ টাকা মূল্যের পাচার সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে।

এদিন তিনি বলেন, ওই সময়ের মধ্যে বিএসএফ ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২৪ লক্ষ ১৪ হাজার ২০০টি গাঁজা গাছ ধ্বংস করেছে। সাথে তিনি উদ্বেগের সুরে বলেন, সারা রাজ্যে সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ প্রতিনিয়ত ঘটছে। ওই সময়ের মধ্যে অনুপ্রবেশের জন্য ১০১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর দাবি, বর্তমানে অনুপ্রবেশ বিএসএফের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার বাণিজ্য মোকাবিলায় বিএসএফকে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তাতে, অনেক সময় স্থানীয়দের সাথে বিএসএফকে সংঘর্ষের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিনি জোর গলায় বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ জওয়ানরা নন-ল্যাথেল অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। সীমান্তে পাচারকারীদের দৌরাত্ম মোকাবিলায় বিএসএফ ওই অস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।

তাঁর বক্তব্য, অনুপ্রবেশে এপার এবং ওপারের দালালরা যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। কিছুদিন আগে এনআইএ এবং বিএসএফের যৌথ অভিযানে রাজ্যে ২৯ জন দালাল গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনো আরও বিরাট সংখ্যায় দালাল রাজ্যে রয়েছে। ফলে, অনুপ্রবেশ থামানো মুশকিল হচ্ছে। এক তথ্য তুলে ধরে বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের আইজি প্যাটেল পীযূষ পুরুষোত্তম দাস জানিয়েছেন, বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমে ধৃত ১০১৮ জন ভারতীয় ও বাংলাদেশী নাগরিকের মধ্যে ৪৯৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক, ৩৯৬ জন ভারতীয় নাগরিক এবং ১২৪ জন ভিন রাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে, ২০২৩ সালে ৩৩৭জন নাগরিককে বেআইনীভাবে সীমান্ত পারাপারে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই ৩৩৭ জনের মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ, ৯৩ জন মহিলা, ২৪ জন শিশু এবং তৃতীয় লিঙ্গের একজন রয়েছেন। এদিকে, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমে ১৬১ জনের মধ্যে ৯৩ জন পুরুষ, ৪৩ জন মহিলা, ১৯ জন শিশু এবং তৃতীয় লিঙ্গের একজন রয়েছন।

তাঁর বক্তব্য, ইতিপূর্বে ৬৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা উন্মুক্ত ছিল। বর্তমানে ৭ কিলোমিটার এলাকা কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট ৬০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকায় আগামী ১ বছরের মধ্যে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ সম্ভব হবে। তাঁর দাবি, সীমান্তে জিরো লাইনে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণে জটিলতা রয়েছে। অথচ, সেখানে ভারতীয় নাগরিকদের বসবাস রয়েছে। মূলত, সীমান্তে সমতলতার সমস্যার কারণে ওই কাঁটা বেড়া নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে। সেখানে সিঙ্গেল লাইন কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণে প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *