BRAKING NEWS

ভালোবাসা ও আশীর্বাদ বর্ষণের জন্য রামটেকবাসীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা মোদীর

মুম্বই, ১০ এপ্রিল (হি. স.) : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার মহারাষ্ট্রের রামটেকে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন এবং রাজ্যের জনগণকে মহারাষ্ট্রের প্রতিটি আসনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে এনডিএকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন। ভালোবাসা ও আশীর্বাদ বর্ষণের জন্য রামটেকবাসীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মোদী।

এদিন জনসভায় উপস্থিত ছিলেন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ শিন্ডে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নাগপুর লোকসভা প্রার্থী শ্রী নীতিন গড়করি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী রামদাস আঠাওয়ালে, রামটেক লোকসভা প্রার্থী শ্রী রাজু পারভে, রাজ্য বিজেপি সভাপতি শ্রী চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে এবং অন্যান্য কার্যকর্তারা।অনুষ্ঠানে মোদী জি আসন্ন নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে বিজেপির বিজয়ের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, পুরো দেশ আবার মোদী সরকারের জন্য প্রস্তুত। এর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জি কংগ্রেসের আদিবাসী ও নারীবিরোধী মানসিকতাকে তীব্রভাবে নিশানা করেছেন।

মহারাষ্ট্রের ভূমিতে শ্রদ্ধা জানানোর সময়, মোদী গোন্ড রাজা বখত বুলন্দ শাহ এবং বাবা সাহেব আম্বেদকরকে স্মরণ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন ভারতের হাজার হাজার বছরের ভীত মজবুত করার এক মহাযুদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জি বিরোধীদের কটাক্ষ করেন এবং বলেন, যখন মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের কু-কথা বেড়ে যায় এবং ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তখন জনগণ কোনও দিকে ঝুঁকছে তার প্রমাণ। আজকাল ইন্ডি জোটের নেতারা মিথ্যা প্রচার করছেন যে, তৃতীয়বার মোদী সরকার এলে দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। এমন কোনও নির্বাচন এখনও হয়নি যেখানে বিরোধীরা এই ধরনের গল্প বলেনি। এমনকি যখন অটলজির সরকার গঠিত হয়েছিল, কংগ্রেস নেতারাও একই কথা বলেছিলেন।

কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস যখন পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত দেশের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন দেশের গণতন্ত্র বিপদে পড়েনি? কংগ্রেসের আমলে যখন দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, তখন গণতন্ত্রের কথা ভাবলেন না কেন? আজ গরীবের সন্তান দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রকে বিপদে পড়তে দেখতে শুরু করেছে কংগ্রেস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বিরোধী নেতারা যতই এই গরিবের সন্তানকে আক্রমণ করুক না কেন, তিনি দেশের মানুষের উন্নয়নের সংকল্প থেকে পিছপা হবেন না।

ইন্ডি জোটকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, বিরোধী জোটের নেতারা দেশের মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে, কারণ তারা জানে যে দেশের মানুষ এক হলে ইন্ডি জোটের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের নামে ভোট দিতে হবে। যদি ইন্ডি জোট শক্তিশালী হয় তবে এই লোকেরা এই দেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। এখনও এক সমাজকে অন্য সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই লাগিয়ে দিতে এই লোকেরা কোনও খামতি রাখছে না। ইন্ডি জোটের লোকেরা কখনই ভারতের সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ব্যর্থ হয় না। রামটেক হল সেই জায়গা যেখানে স্বয়ং ভগবান শ্রী রামের চরণ রয়েছে। এবার রামনবমীতে রামলালা তাঁর ভক্তদের তাঁবুতে নয়, রাম মন্দিরে দর্শন দেবেন। ইন্ডি জোটের লোকেরা রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল, যা তাদের সনাতন বিরোধী চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করে। এই লোকেরা হিন্দু ধর্মের শক্তিকেও ধ্বংস করতে চায়। ইন্ডি জোটের লোকদের তাদের পাপের শাস্তি দেওয়ার সময় এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেস ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে অবহেলা করেছে। কংগ্রেস বাবা সাহেব আম্বেদকরের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে, ভারতরত্ন থেকে বঞ্চিত করেছে। কিন্তু বিজেপির সমর্থনে কেন্দ্রে সরকার গঠিত হওয়ার পরই বাবা সাহেব আম্বেদকরকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে যখন এনডিএ সরকার গঠিত হয়, তখন একজন দলিত মায়ের সন্তান দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ২০১৯ সালে, যখন আবারও এনডিএ সরকার গঠিত হয়েছিল, প্রথমবারের মতো একজন আদিবাসী মায়ের মেয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এনডিএ সরকারে আমরা ওবিসি সম্প্রদায় থেকে রেকর্ড সংখ্যক মন্ত্রী করেছি। এনডিএ সরকারে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী কমিশন সাংবিধানিক মর্যাদা পেয়েছে এবং মেডিকেল স্টাডিতেও সংরক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এনডিএ সরকারের অধীনে একটি পৃথক আদিবাসী মন্ত্রকও গঠিত হয়েছে। ১০ বছরে উপজাতি কল্যাণের বাজেট ১০ গুণ বেড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন যে এনডিএ সরকারের নীতির কারণে, স্কুল ও কলেজগুলিতে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সম্প্রদায়ের যুবকদের তালিকাভুক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মন্ত্র সংবিধানের আসল চেতনা কিন্তু পরিবারতান্ত্রিক দলগুলো সব সময় সংবিধানের এই চেতনাকে অপমান করেছে। মাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে মিথ্যাচার করে এসব মানুষ শুধু তাদের পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে কংগ্রেসের শাসনকালে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা এমনকি মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ছিল, কিন্তু দরিদ্র মায়ের সন্তান মোদী দরিদ্রদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার এবং তাদের উদ্বেগ কমানোর কাজ করেছে। এখন মোদী ১০০ শতাংশ সুবিধাভোগীদের ১০০ শতাংশ স্কিমের সুবিধার গ্যারান্টি দিচ্ছে এবং এটাই সত্যিকারের সামাজিক ন্যায়বিচার।

মোদী বলেছেন, বিজেপি সরকারের অধীনে, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষজনের স্থায়ী বাড়ি, বিনামূল্যে রেশন, বিনামূল্যে চিকিত্সা, শৌচাগার, বিদ্যুৎ এবং জলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে, আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে উন্নয়নের নতুন আশা জেগেছে যেগুলি আগে পিছিয়ে পড়া হিসাবে বিবেচিত হত এবং ফলস্বরূপ ২৫ কোটি দেশবাসী দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাই উদ্দেশ্য সঠিক হলে ফলাফলও ঠিক হয় বললে ভুল হবে না। এক দেশ এক সংবিধান কার্যকর হতে দেয়নি কংগ্রেস। যারা সংবিধানের নামে মিথ্যাচার করে তাদের জবাব দিতে হবে যে সংবিধান যদি আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাহলে আপনি কেন সারা দেশে বাবা সাহেবের সংবিধান বাস্তবায়নের সাহস দেখাতে পারেননি? মোদীই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বাবা সাহেব আম্বেদকরের সংবিধানের বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন।

কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসকে উসকে দিতে কাজ করেছে এবং ৩৭০ অনুচ্ছেদ বজায় রেখেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে এবং কাশ্মীরে সংবিধান প্রয়োগ করেছে। বাবা সাহেব আম্বেদকরের আত্মা এখন যেখানেই থাকুন না কেন, তিনি বিজেপি সরকারকে আশীর্বাদ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে-র বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে নিজের ভাষণে বলেন, মল্লিকার্জুন ভাষণে বলেছিলেন, আপনি অন্য রাজ্যে গিয়ে ৩৭০-এর কথা বলছেন কেন, অন্ধ্রপ্রদেশ ও রাজস্থানের এর সঙ্গে কী সম্পর্ক? ৩৭০ অনুচ্ছেদের মতো সংবেদনশীল বিষয় দেশের রাজ্যগুলিকে আলাদাভাবে বলা কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেখানকার উপজাতি, তফসিলি জাতি ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ মানবাধিকার পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, কংগ্রেস শাসন ভারতের মুকুটের জনগণ এবং মহিলাদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। সংবিধানের নামে কংগ্রেস দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কংগ্রেস দলও নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করছে, কারণ এর সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বৌদ্ধ অনুসারীরা। মোদী সরকারের নেতৃত্বে, প্রতিটি অধিকারী ব্যক্তি সিএএ-এর অধীনে নাগরিকত্ব পাবেন, এটাই মোদীর গ্যারান্টি। মহাবিকাশ আঘাড়ি এবং ইন্ডি জোট উন্নয়নের ঘোর বিরোধী। কংগ্রেস বছরের পর বছর ধরে গোসি খুর্দ বাঁধ প্রকল্প ঝুলিয়ে রেখেছিল, যে কারণে কৃষকদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মহারাষ্ট্রে এনডিএ (মহাযুতি) সরকার ক্ষমতায় আসা মাত্রই এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু হয়।

মোদী ভারতীয় জনতা পার্টির উন্নয়নমূলক কাজের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি পানীয় জল এবং সেচের জলের জন্য অবিরাম কাজ করছে। প্রতিটি বাড়িতে কলের জল পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা পূরণে সরকার দিনরাত কাজ করছে। মহারাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী স্বানিধি যোজনার আওতায় কৃষকদের অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরে ভারত ডাল ও তৈলবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। গত ১০ বছরে, ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার ডাল চাষীদের সমর্থন মূল্য হিসাবে প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নাগপুর ও বিদর্ভের পুরো এলাকা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত করা হচ্ছে। এখন নাগপুরে আইআইএম, এইমস, আইআইটি এবং ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি আছে, মেট্রোর গতি আছে, বিমানবন্দর সম্প্রসারিত হচ্ছে, পর্যটনের প্রচার হচ্ছে। বালা সাহেব ঠাকরে মহারাষ্ট্র সমৃদ্ধি মহামার্গ গোটা রাজ্যকে চাঙ্গা করতে চলেছে।

এদিন মোদী জোর দিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র একটি সৎ এবং শক্তিশালী সরকারই দেশের উন্নয়ন করতে পারে। জনগণের স্বপ্ন মোদীর সংকল্প এবং বিজেপি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মহারাষ্ট্রকে এখনও আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকার দিনরাত কাজ করব। বক্তৃতার শেষে, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহারাষ্ট্রের জনগণকে অনুরোধ করেন এবং বলেন ১৯ এপ্রিল পদ্মে দেওয়া প্রতিটি ভোট একটি বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশে সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *