আগরতলা, ৬ এপ্রিল: প্রশাসনিক জটিলতা ও সরকারি উদাসীনতায় একটি এলাকার অর্ধ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেল।ঘটনা কমলাসাগর বিধানসভার লেম্বুতলী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।
খবর নিয়ে জানা গেছে আজ থেকে কুড়ি বছর আগে আগরতলার একজন সমাজসেবী ও তথা শিক্ষাবিদ লেম্বুতলী স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।যাকে এলাকার সাধারণ মানুষরাও স্যার বলেই সম্বোধন করতেন।দীর্ঘদিন একই এলাকায় চাকরি করার সুবাদে তিনি এই এলাকার মানুষের জন্য কিছু একটা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন কুড়ি বছর আগে।তখন নিজের ঘাটের কড়ি খরচ করেই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকার প্রায় কুড়ি কানি জায়গা ক্রয় করে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছিলেন।
সুদূর অস্ট্রেলিয়া,রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে খুবই উন্নত প্রজাতির প্রায় ২০০ টি গরু এখানে এনে গড়ে তুলেছিলেন এই ফার্মটি।ফলে পুরুষ মহিলা সহ কম করেও ৫০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিল তখন।আর এই ফার্মের গরুর গোবর দিয়ে বায়ু গ্যাসের প্রজেক্ট শুরু করেছিলেন যা দিয়ে পুরো ফার্মের লোকরার রান্নাবান্না থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজকর্মও চলত।
এরপর সোলার প্রজেক্ট থেকে মোটর দিয়ে জল তোলা,মাছ চাষ,সবজি চাষের পাশাপাশি আম বাগান,লিচু বাগান,নারকেলের মত বিভিন্ন বাগানও গড়ে তোলা হয়েছিল।মোট কথা এই ফার্মটি লেম্বতলী এলাকার মধ্যে একটি মডেল হিসাবে উঠে এসেছিল। বেশ কয়েক বছর ভালোই চলছিল এই ফার্মটি তাছাড়া এলাকার মানুষও ছিল খুবই খুশি কারণ কৃষি কাজের জন্য স্বল্প মূল্যে গোবর পাওয়া, গরুর দুধ থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের একটা স্থায়ী সমাধান হয়েছিল।তাছাড়া ফার্মে প্রাণী চিকিৎসকের নিয়মিত যাতায়াতের ফলে এলাকার মানুষের বিভিন্ন সমস্যাও অনায়াসেই সমাধান হয়ে যেত।পাশাপাশি এলাকার পশু পালকরা ও স্বল্পমূল্যে শংকর প্রজাতির দুগ্ধ গাভী ক্রয় করতে পারত এই ফার্ম থেকে।কিন্তু বার্ধক্যের কারণে ফার্মের মালিক তথা স্হানীয়দের প্রিয় স্যার ফার্মটিকে নিয়মিত দেখাশোনা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
ফলে ফার্মের আরও শ্রীবৃদ্ধির লক্ষ্যে মালিক পক্ষ তথা সকলের প্রিয় স্যার এই ফার্মটিকে তুলে দেন সারদা গ্রুপ অফ কোম্পানির কাছে।এর কয়েক বছরের মধ্যেই চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির মধ্যে নাম চলে আসে কলকাতার সারদা গ্রুপ অফ কোম্পানির।এর কিছুদিন বাদেই আসামের গৌয়াহাটি থেকে এন্ডফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের জোনাল অফিস থেকে একটি টিম এসে এই ফার্মের সামনে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ফার্মের ঝাঁপ বন্ধ
করে চলে যান।এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে একটা শ্রেণি কোটি টাকা মূল্যের ফার্মের প্রায় ২০০ শংকর প্রজাতির গরু বিক্রি করে ফার্মের অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ লুট করে ফার্মটিকে পথে বসিয়ে দেন।সম্প্রতি এলাকার গর্ব এই ফার্মটি পরিদর্শন করে যে চিত্র দেখা গেছে তা বড়ই করুন।
তাই এলাকার স্থানীয় বেকার যুবকরা সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।তাদের দাবি সারদা চিটফান্ড মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত স্হানীয় বেকার যুবকদের নিয়ে একটি সোসাইটি বা কমিটি গঠন করে আইনের জটিলতা এড়িয়ে ফার্মটিকে পুনরায় সচল করতে প্রশাসন যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।তাহলে এই লম্বুতলী এলাকার বেকার যুবতীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও আর্থিক দিক দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুজে পাবে।