বাঁকুড়া, ১৬ জানুয়ারি (হি.স.): বড়জোড়ায় ফের হাতির হানা। তাণ্ডব চালানোর সময় সামনে চলে আসায় এক বৃদ্ধকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে হাতি। ঘটনাস্থলেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম শম্ভুনাথ মন্ডল (৭৫)। তাঁর বাড়ি বড়জোড়ার গোপবন্দি গ্রামে।
মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শম্ভুনাথ। ওই সময় গ্রামে ঢুকে পড়ে দুটি হাতি। তাণ্ডব চালাতে থাকে। বৃদ্ধ শম্ভুনাথ পালাতে পারেননি। তিনি হাতির সামনে পড়ে যায়। তখনই তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে একটি হাতি। পরে পায়ের তলায় পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পরে হাতি দুটিকে তাড়া করলে তারা জঙ্গলের মধ্যে চলে যায়।
হাতির হামলার খবর পেয়ে বিধায়ক আলোক মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে ঘিরে বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা। এই ঘটনার জন্য বন দফতরকেই কাঠগোড়ায় তুলেছেন বিধায়কও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের গোপবন্দি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে হাতির দল রয়েছে। দলে থাকা হাতির একটা বড় অংশের উপর বনকর্মীরা নজরদারি চালালেও দুটি হাতি বিচ্ছিন্নভাবে স্থানীয় এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় বিধায়কের দাবি, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে হাতির দল রয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু বন দফতর হাতিগুলিকে অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে না। উল্টে চাষিরা ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাতে গেলে সেখানেও তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে বড়জোড়ার প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী বলেন ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আমি বিধায়ক থাকার সময় বাঁকুড়ার হাতি সমস্য নিয়ে একাধিকবার বিধানসভায় তুলেছি। আমি বিরোধী দলের বলে আমার কথাকে গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য বন মন্ত্রক ও সরকার। অথচ ওই ৫ বছরে বাঁকুড়ায় এ নিয়ে অসংখ্য বৈঠক হয়েছে। কিন্তু আমাকে ডাকা হয়নি।
মৃতের বড় ছেলে তরুন মন্ডল বলেন, প্রচন্ড শীতে সব শুনশান ছিল। দুটি হাতি আমাদের দরজার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তা বাবা টের পায়নি। ভোর ৪ টে ২০ নাগাদ বাবা ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই একটি দাঁতাল শুঁড় দিয়ে পেঁচিযে আছাড় মারে । তারপর মাথায় পা দিয়ে থেঁতলে দেয়। চিৎকার শুনে উঠে দেখি সব শেষ। আমরা টাকা চাকরি নিয়ে কি বাবাকে ফিরে পাবো এই প্রশ্ন করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাঁকুড়ার হাতি সমস্যা সমাধানের জন্য গড়ে ওঠা সংগঠন সংগ্রামী গণমঞ্চের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখার্জি বলেন, হাতির হানায় মৃত্যু হলে চাকরি দেওয়া শুরু করেছিল সরকার। এখনও বহু পরিবার চাকরি পায়নি। চাকরি দিলেও তা কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান নয়। অবিলম্বে ময়ূরঝর্ণা প্রকল্পের রূপায়ণ করে স্থায়ী সমাধান চাই। এবং এখানই হাতি দুটিকে অন্যত্র সরানো হোক।
এবিষয়ে বড়জোড়ার রেঞ্জার ঋত্বিক দে বলেন, হাতি দুটি মাঝে মাঝে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি করলেও প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ এবং হাতি দুটিকে অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।