মাজুলি (অসম), ২৮ ডিসেম্বর (হি.স.) : প্রতিটি মানুষের যেমন একটি নির্দিষ্ট চরিত্র আছে, তেমনি প্রতিটি রাষ্ট্রেরও নিজস্ব চরিত্র রয়েছে। একটি রাষ্ট্রের চরিত্র গড়ে উঠে তার সংস্কৃতি থেকে। ভারতীয় সংস্কৃতি সর্বজনীন। সমস্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি শুধুমাত্র ভারতের মতো রাষ্ট্রেই বিদ্যমান। বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত।
১৯৬৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘যোরহাট সন্ত সম্মেলন’-এর কয়েক দশক পর আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ নদীদ্বীপ, ‘ল্যান্ড অব সত্র’ (মহাপুরষ শ্রীমন্ত শংকরদেব প্রচলিত বৈষ্ণব ধর্মীয় উপাসনাস্থল) বলে পরিচিত উজান অসমের উত্তর মাজুলির কমলাবাড়ি সত্রে ‘পূর্বোত্তর সন্ত মণিকাঞ্চন সম্মেলন-২০২৩’-এ বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কথাগুলি বলেছেন সংঘ-প্রধান মোহন ভাগবত। তিনি বলেন, সাম্প্ৰতিক পরিস্থিতিতে বিশ্বকে শান্তি ও সহাবস্থানের বার্তা দিতে এবং একে কেন্দ্র করে একটি জীবনধারা দেওয়ার জন্য দাঁড়াতে হবে ভারতকে। এ কাজের জন্য সমাজের সাধু-সন্তদেরই অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ডা. ভাগবত।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আমাদের সকলের পূর্বপুরুষ একই, আমাদের সকলের বিশ্বাসও এক। সকলকে আমাদের বৈচিত্র্যকে সম্মান করে ঐক্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ঐক্য মানে অভিন্নতা নয়, সাম্যতা। সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজকে স্বাবলম্বী করার ওপর জোর দেন সরসংঘচালক।
সংঘ-প্রধান ড. ভাগবত বলেন, মূল্যবোধের পাশাপাশি সব পরিবারে জাতীয় সচেতনতার খুব প্রয়োজন। এই অনুভূতি এবং আমাদের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করার কাজটি সকল ধর্মগুরু, তাদের মঠ ও মন্দিরের করা উচিত।
মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব যেমন তাঁর উৎকৃষ্ট জীবন আচরণের মাধ্যমে সমাজের সংস্কার সাধন করেছিলেন, তেমনি আমাদেরও সংগঠিত শক্তির মাধ্যমে বর্তমান অশুভ শক্তির অবসান ঘটাতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর উত্তর অসম প্রান্তের উদ্যোগে ‘পূর্বোত্তর সন্ত মণিকাঞ্চন সম্মেলন-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একদিবসীয় এই সম্মেলনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্য থেকে ৪৮টি সত্ৰ এবং ৩৭টি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মোট ১০৪ জন ধর্মীয় নেতা অংশগ্ৰহণ করেছেন।
সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো, সকল জাতি-জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পৰ্ক, সমন্বয়, সম্প্রীতি ও সমরসতা বৃদ্ধি করা। সংঘের এই উদ্যোগকে সফল করতে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে আজকের সম্মেলন-মঞ্চ থেকে। আজকের সম্মেলনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
একদিবসীয় ‘পূর্বোত্তর সন্ত মণিকাঞ্চন সম্মেলন-২০২৩’-এ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশিষ্ট ধর্মগুরুর মধ্যে অন্যতম ছিলেন ত্রিপুরার শান্তিকালী আশ্রমের চিত্তরঞ্জনজি মহারাজ, উত্তর কমলাবাড়ি সত্রের জনার্দনদেব গোস্বামী, আউনিআঁটি সত্র, দক্ষিণপাট সত্র, গড়মুর সত্র, বরপেটার শ্রী সুন্দরিয়া সত্রের সত্রাধিকারীগণ, নামসাই বোধি বিহারের শ্রীভান্তে, পরশুরাম কুণ্ডের বাবা, শ্রীমন্ত শংকরদেব সংঘ, মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়ের দলোই শ্রী পুরামন কিঞ্জিন, ঝেলিয়াং রং হারারকা, বোড়ো বালি বাথৌ সমাজ, মণিপুরের রাজশ্রী ভাগ্যচন্দ্র ফাউন্ডেশন, লখিমন সংঘ, কারগু গামগী সমাজ, অসম সত্র মহাসভা প্রভৃতির সাধু-সন্তগণ। সরসংঘচালক মোহন ভাগবতকে মাজুলির বিখ্যাত হস্তশিল্প গরুরের মুখোশ, কুর্তা-চেলেং ইত্যাদি দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন বিভিন্ন সত্রের সত্রাধিকাররা।
আগামীকাল শুক্রবার মাজুলিতে একটি সমাবেশের পর সংঘের সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবতের তিনদিনের সফর শেষ হবে৷ উল্লেখ্য, তিনদিনের সফরসূচি নিয়ে গতকাল বিকেলে অসমে এসেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর সরসংঘচালক ডা. ভাগবত। বুধবার বিকাল প্ৰায় ৩:৩০টা নাগাদ ডিব্রুগড়ের মোহনবাড়ি বিমানবন্দরে অবতরণ করে সড়ক পথে সোজা আসেন সত্ৰনগরী মাজুলিতে।
2023-12-28